|
|
|
|
ভোটের মাঠে ঝাঁপ কংগ্রেসের, বিজেপি আটকে আপন আঁধারে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নিজের ঘরটিই গুছিয়ে উঠতে পারছে না বিজেপি। কংগ্রেস লোকসভা গোছানোর কাজ শুরু করে দিল। উদ্বিগ্ন অসহায় বিজেপি।
যে ভাবে আজ আধার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তুকির অর্থ নগদে হস্তান্তরের মতো ঘোষণা করে কংগ্রেস ভোট ময়দানে ঘুঁটি সাজাতে নেমে পড়ল, সরকারি কর্মসূচি ঘোষণা করতে পি চিদম্বরম, জয়রাম রমেশ ছুটে গেলেন কংগ্রেসের সদর দফতরে, বিজেপি-র কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট। পুরো দমে লোকসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস। যে ভাবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সওয়ার হয়ে মনমোহন সিংহ সাড়ে তিন বছর আগে ফের সরকারে ফিরেছিলেন, এ বারেও লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে নতুন ঘোষণার পালা শুরু হল। খাদ্য নিরাপত্তা, গরিবদের মোবাইল ফোন দেওয়ার মতো ঘোষণা তো এখনও বাকি।
বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করে দল দেশের বড় জোর ১২ কোটি মানুষের মন জয়ের চেষ্টা চালাতে পারে, কিন্তু কংগ্রেস দেশের সিংহভাগ গরিব মানুষের মন জয় করে বাজিমাত করার চেষ্টা করছে।
দু’টি প্রধান দলের মধ্যে বিজেপি-র দাপট মূলত শহর এলাকায় থাকলেও গ্রামের দখল নিতে চায় কংগ্রেস। আর এই সিংহভাগ ভোট কংগ্রেস বা তার সহযোগীদের দখলে গেলে ফের দিল্লির তখ্ত দখল করতে পারে কংগ্রেস। ধারাবাহিক জনমুখী প্রকল্পের ভিড়ে মুছে যেতে পারে মূল্যবৃদ্ধি কিংবা দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষতও। অথচ বিজেপি-র হাতে সরকার নেই, যে এমন কোনও ঘোষণা করে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এমন নয় যে শুধুমাত্র কংগ্রেস-বিরোধী নেতিবাচক আন্দোলনের বদলে তাঁরা ইতিবাচক রাজনীতি করতে পারেন না। ন’টি রাজ্যে সরকারে রয়েছে বিজেপি। সেখানকার সাফল্যও তুলে ধরা যেতে পারে। ধরা হচ্ছেও। কিন্তু কংগ্রেসের প্রচারের জবাব দিতে হলে অবশ্যই একজোট হতে হবে ছত্রভঙ্গ বিজেপি-কে। দলে যেমন নেতায়-নেতায় লড়াই, তেমনই সঙ্কট কম নয় রাজ্যে-রাজ্যে। ইয়েদুরাপ্পা নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছোচ্ছেন না। তাঁর সঙ্গে যাতে বেশি নেতা না যান, কর্নাটকে দল এখন তা ঠেকাতেই মরিয়া। ইয়েদুরাপ্পার ধাক্কা সামলাতে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টার আজ দিল্লিতে ছুটে এসেছেন। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াও নতুন দল গড়ার হুমকি দিয়ে বসে রয়েছেন। বিহারে নীতীশ কুমারের সঙ্গেও বিজেপির নিত্য তাল ঠোকাঠুকি লেগে রয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখছেন নীতীশ। নরেন্দ্র মোদীকে এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে জোট ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি।
আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? সেখানেও তথৈবচ। বিদ্রোহ খোদ দলের সভাপতির বিরুদ্ধেই। নিতিন গডকড়ীকে সভাপতি পদে রাখতে চান সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। কিন্তু দলের একটি অংশ তাঁকে সরাতে চায়। প্রকাশ্য বিদ্রোহের পর আজই যশবন্ত সিন্হার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হল গডকড়ীর। করমর্দনও হল। কিন্তু ক্ষোভ কমল কী? দল থেকে বহিষ্কৃত হতে চলা বিদ্রোহী রাম জেঠমলানীর নতুন নিশানা অরুণ জেটলি। এবং সুষমা স্বরাজও। তাই নিয়েই এখন দলের মধ্যে তোলপাড়। জেটলি ও সুষমার মধ্যে লড়াইই সুবিদিত। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তাঁরা আবার এককাট্টা। বিজেপি-তে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নিত্যদিন বদলাচ্ছে সমীকরণ।
এই অবস্থা দেখে বিজেপি-র এক নেতার বক্তব্য, “লোকসভা ভোট সময়ে হোক বা আগে, হাজারো অভিযোগে জর্জরিত হয়েও কংগ্রেস অন্তত লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আমরা নিজেদের ঘর গোছাতেই ব্যস্ত। একটা সঙ্কট মেটে তো অন্য সঙ্কট ঘাড়ে এসে চাপে। মাথা তোলে কোনও না কোনও জানকবুল বিদ্রোহী!” যদিও প্রকাশ্যে দলের নেতারা জানাচ্ছেন ভিন্ন কথা। যেমন বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভির বক্তব্য, “কে বললে আমরা লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করিনি? জেলায় জেলায় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও তো শুরু হয়ে গিয়েছে।” |
|
|
|
|
|