|
|
|
|
এফডিআই |
ঘর গোছানোর পরে ভোটাভুটিরই ভাবনা কংগ্রেসে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
করুণানিধি ও মুলায়ম সিংহ যাদবকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে ১৮৪ ধারায় ভোটাভুটি-সহ আলোচনা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিল মনমোহন সিংহের সরকার।
প্রকাশ্যে অবশ্য সরকারের তরফে এখনও বাম-বিজেপি-র দাবি মানার কথা বলা হয়নি। সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথ আজ বলেন, “শরিকরা চাইছেন স্পিকারের উপরেই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করব।” কিন্তু ইউপিএ-র বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে বলেছেন, “সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী”, তাতে কংগ্রেস ভোটের পথে চলতে পারে বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা।
এত দিন ভোটাভুটির দাবি না-মানার কথা বলার পাশাপাশি কংগ্রেস তার ঘর গোছানোর কাজ চালাচ্ছিল পুরোদমে। সরকারের সমর্থক মায়াবতী ও মুলায়মের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। ইউপিএ-র শরিকদের মধ্যে এনসিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকারের সঙ্গেই ছিল। উল্টো সুর শোনা যাচ্ছিল শুধু ডিএমকে-র গলায়। ডিএমকে-প্রধান করুণানিধিকে বোঝাতে চেন্নাই গিয়েছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। আজ ইউপিএ-র বৈঠকে সনিয়া গাঁধী কমল নাথের কাছে জানতে চান, সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় সাংসদ আছে কিনা। কমল নাথ হিসেব কষে দেখিয়ে দেন, আছে। ডিএমকে নেতা টি আর বালুও করুণানিধির চিঠি দেখিয়ে জানান, এফডিআই নিয়ে আপত্তি থাকলেও তাঁরা সরকারের পতন চান না। এর পর স্পিকারের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দেওয়ার কথা হয়।
তবে ভোটাভুটি এড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে কংগ্রেসের একটি সূত্রে খবর। মুলতুবি প্রস্তাবের মতো কোনও মধ্যপন্থায় বিরোধীদের সঙ্গে রফা করা যায় কি না, তা-ও দেখছেন কংগ্রেস নেতারা। কমল নাথ কাল এ বিষয়ে অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তবে এর পিছনেও কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিদের মত। তাঁদের বক্তব্য, মুলতুবি প্রস্তাব এনেছে মুলায়মের সমাজবাদী পার্টি। বিরোধীদের দাবি মানার চেয়ে মুলায়মের প্রস্তাব মানলে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কংগ্রেসের পক্ষে যা লাভজনক। তা ছাড়া, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে (ফেমা) যে পরিবর্তন করা হয়েছে, তা সংসদে পাশ করাতেই হবে। তখন বিরোধীরা ভোটাভুটি চাইতে পারে। মুলতুবি প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গেই ফেমার রদবদল পাশ করিয়ে নিতে চায় কংগ্রেস। বিরোধীরা একান্তই অনড় থাকলে এখন ১৮৪-তেও আপত্তি নেই সরকারের। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ভোটাভুটি হলে সরকারের জয় নিশ্চিত। কারণ মুলায়ম ও মায়াবতীর সমর্থন রয়েছে। বামেরাও সরকারের পতন ডেকে এনে অকাল ভোট চান না।
সংসদে ভোটাভুটি হলে জেতার যে সম্ভাবনা নেই, সেটা বিলক্ষণ জানে বিজেপি। কিন্তু খুচরো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় বারো কোটি ভোটারের দিকে তাকিয়ে ভোটাভুটি থেকে সরেও আসতে চায় না তারা। বিজেপি-র লক্ষ্য এখন চারটি। এক, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রতিবাদে যে দলগুলি ময়দানে নেমেছিল অথচ এখন সরকারের বিপক্ষে ভোট দিতে চায় না, তাদের মুখোশ খুলে দেওয়া। দুই, যে দলগুলি এখন অবস্থান বদল করছে, তাদের সিবিআইয়ের জুজু দেখিয়ে কী করে সরকার বাগে আনল, তা প্রচার করা। তিন, সংসদ না-চলার দায় ঝেড়ে ফেলে সরকারকেই দোষী করা। যে কারণে আজ তারা বলেছে, সংখ্যা জোগাড় করতে গিয়ে মনমোহন সিংহ চার দিন অপচয় করলেন। আগেই সংখ্যা জোগাড় করে নিলে সংসদ অচল থাকত না। আর চার, এনডিএ-র শরিক এবং বাম দলগুলি ছাড়াও নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও মন জয় করা। বিজেপি নেতাদের আশা, ভোটাভুটি হলে তৃণমূল সরকারের বিপক্ষে যাবে। |
|
|
|
|
|