শহর জুড়ে অবৈধ পার্কিং অবাধেই
দুপুর দেড়টা। পার্ক স্ট্রিটের কাছে উড স্ট্রিটে পার্ক করা রয়েছে অন্তত একশোটি গাড়ি। অথচ, থাকার কথা মাত্র পঁয়ত্রিশটি।
বিকেল সাড়ে তিনটে। গড়িয়াহাট চৌমাথা ছেড়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ধরে প্রিয়া সিনেমার দিকে এগোতেই চোখে পড়ল রাস্তার দু’দিকে পার্ক করা গাড়ির লাইন। গাড়ির সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়েছে। থাকার কথা ৭৫টি।
বিকেল সাড়ে চারটে। জোড়াসাঁকো থানার ঠিক পিছনে মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে বাজারের মধ্যে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক, লরি আর প্রাইভেট গাড়ি। কোনওটিতে মাল ওঠানো-নামানো চলছে। কোনও গাড়ি এমনিই দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী যা বেআইনি পার্কিং বলেই চিহ্নিত। এমনই অবস্থা কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার অধিকাংশ পার্কিং লটে।
হিসেবের গরমিল চলে আসছে বহু বছর ধরেই। বিভিন্ন পার্কিং লটের গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কলকাতা পুরসভা সেই হিসেবেই পার্কিংয়ের বরাত পাওয়া বিভিন্ন কো-অপারেটিভগুলি থেকে টাকা পায়। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ, কোথাও কোথাও আরও বেশি সংখ্যক গাড়ি পার্কিং লটগুলিতে দাঁড় করানো হচ্ছে। করে দেওয়া হচ্ছে ‘ডবল লাইন পার্কিং’ও। কলকাতা পুরসভা তা থেকে একটি টাকাও পায় না। মুনাফা হয় কো-অপারেটিভগুলিরই। কলকাতা পুরসভা-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে একজোট হয়েই ওই সব কো-অপারেটিভগুলি এই ভাবে পুরসভাকে ফাঁকি দিচ্ছে।
বৈধ পার্কিং? মঙ্গলবার, পার্ক স্ট্রিটে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ২০০৭ সালে শেষ বার পার্কিংয়ের বরাত দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে আর টেন্ডার হয়নি। পাঁচ বছর ধরে টেন্ডারের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাগুলিকে। এক আধিকারিকের কথায়, “এই পাঁচ বছরে কলকাতায় গাড়ি বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে পার্কিং লটগুলিতেও বেড়ে গিয়েছে গাড়ির সংখ্যা। অথচ, দীর্ঘদিন টেন্ডার না হওয়ায় পুরসভা পার্কিং লটগুলি থেকে পুরনো গাড়ির সংখ্যার হিসেবে ভাড়া পাচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে কো-অপারেটিভগুলি।”
পার্কিং বিভাগের অভিযোগ, টেন্ডার না হওয়ায় পার্কিং থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ বাড়েনি। বরং নিয়মের ফাঁক গলে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি মোটা মুনাফা করেছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়ে তৃণমূলের পুরবোর্ড পার্কিং নিয়ে নতুন করে টেন্ডার ডাকতে উদ্যোগী হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার অভিযোগ, হিসেবের বাইরে গিয়ে জওহরলাল নেহরু রোড, হো চি মিন সরণি, ইউ এন ব্রহ্মচারী স্ট্রিট, ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট, কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট, লারকিন লেন, স্ট্র্যান্ড রোড, নেতাজি সুভাষ রোডের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানো হচ্ছে।
কী ভাবে হয় পার্কিং লটে গাড়ির সংখ্যার নির্ধারণ?
পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পুলিশ এবং পুরসভা যৌথ ভাবে এ নিয়ে বৈঠক করলেও গাড়ির সংখ্যা বেঁধে দেয় পুলিশই। পুরসভা গাড়ি বাবদ ভাড়া পায়।
পুরসভার আর্থিক ক্ষতি হলেও কিন্তু এই মুহূর্তে পার্কিং লটে গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে রাজি নয় কলকাতা পুলিশ। ট্রাফিক দফতরের বক্তব্য, পার্কিংয়ের ‘এরিয়া’ বাড়ালে রাস্তায় গাড়ির গতি কমে যাবে। তাতে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডি সি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “গাড়ির তুলনায় কলকাতার রাস্তায় পার্কিংয়ের জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে। কিন্তু পার্কিংয়ের এলাকা বাড়ালে ট্রাফিক গতি হারাবে। সব রাস্তাতেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে।”
পার্কিং থেকে বার্ষিক আয়

দিনে রাতে
২০১০-১১ ৬ কোটি ৬১ লক্ষ ১৬ লক্ষ ২৮ হাজার
২০১১-১২ ৭ কোটি ৪৩ লক্ষ ১৫ লক্ষ ৯৯ হাজার
২০১২-১৩ ৪ কোটি ৩৩ লক্ষ ৯ লক্ষ ৭০ হাজার

(সব হিসেব টাকায়)

আর্থিক ক্ষতি সত্ত্বেও পুলিশের মতোই পার্কিংয়ের এলাকা বাড়ানোর বিরোধী কলকাতা পুরসভার কর্তারা। বরং কো-অপারেটিভগুলি যাতে পুরসভাকে ফাঁকি না দেয়, সে বিষয়টি তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে চাইছে পুরসভা।
মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব বলেন, “পুলিশ ঠিকই বলছে। গাড়ির সংখ্যা বাড়ালে ট্রাফিকের গতি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। বরং আমরা চেষ্টা করব আলোচনার মাধ্যমে কো-অপারেটিভগুলিকে বোঝাতে। যাতে তারা পুরসভাকে কোনও মতেই ফাঁকি না দেয়।”
কো-অপারেটিভগুলি নিজেরাও এই বেআইনি বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। পাশাপাশি, তাদের দাবি, পুলিশ এবং রাজনৈতিক ‘দাদাদের’ জন্যই তাঁদের এই বেআইনি পথে চলতে হচ্ছে। একটি কো-অপারেটিভের প্রতিনিধি লাল্টু সাহা বলেন, “পার্কিংয়ের যাবতীয় তথ্য নিচু তলার ট্রাফিক গার্ডের মাধ্যমে পুলিশের উপর মহলে পৌঁছয়। আর সেই সব গার্ড থেকেই পুলিশ এসে টাকা চায়। এলাকার রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের পরিচিত লোকজনের গাড়ি অনেক কম টাকায় পার্ক করে দেন। ফলে পার্কিং লটে পুরসভার নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে গাড়ি না রেখে উপায় থাকে না। আমরা বহু বার বলেছি, পার্কিংয়ের এলাকা বাড়িয়ে দিতে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.