শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি উপাচার্যের
মারল বিশ্ববিদ্যালয়েই, থানায় শোভনদেব
কিছু দিন আগেই তৃণমূল-সমর্থক সব সরকারি কর্মী ইউনিয়নকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘এক ছাতা’র তলায় আনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। একই ভাবে বলা হয়েছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রেও দলের একটিই কর্মী ইউনিয়ন থাকবে।
তার পরেও তৃণমূল-সমর্থক দু’টি কর্মী ইউনিয়নের রেষারেষিতে মার খেতে হল দলেরই নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। সন্ধ্যায় জোড়াসাঁকো থানায় গিয়ে কয়েক জন দলীয় কর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শোভনদেববাবু। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে এ দিনের ঘটনার তদন্তে উপাচার্য একটি কমিটি গড়েছেন।
কারখানা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস থেকে হাসপাতাল কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূল অনুমোদিত একটির বেশি সংগঠন থাকবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নতুন সরকারের আমলে গত দেড় বছরে মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশকে তাঁর দলেরই নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা যে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন, এ দিনের ঘটনা তা আরও এক বার প্রমাণিত হয়ে গেল।
এ দিনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, “উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজনৈতিক রং না-দেখে ঘটনায় জড়িতদের শো-কজ করতে বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না।” উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেছেন, “বিষয়টি উদ্বেগের। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। উনি কঠোর হাতে মোকাবিলার কথা বলেছেন।” এ দিন সিন্ডিকেটের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে উপাচার্য জানান, এ বার থেকে পঠনপাঠন চলাকালীন ক্যাম্পাসে মাইক বাজানো বা স্মারকলিপি দেওয়া যাবে না। তাঁর কথায়, “আমরা কারও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করতে চাই না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ইচ্ছা হলেই কেউ নিয়মনীতি ভাঙবেন।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
ঠিক কী ঘটেছিল?
দুর্নীতির প্রতিবাদে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করছিল ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি তৃণমূল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন। তাদের অভিযোগ, সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সভা চলবে বলে আচার্য-রাজ্যপালকেও জানানো হয়েছিল। সংগঠনের নেতা সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সভা পূর্বঘোষিত।” বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক এবং বিধায়ক শোভনদেববাবু সভায় যোগ দিতে এবং সহ-উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ। অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূল সমর্থিত অন্য একটি কর্মী ইউনিয়নের কয়েক জন তাঁকে সভা করতে বাধা দেন। প্রথমে তাঁর পাঞ্জাবির কলার ধরে টানাটানি করা হয়। তার পরে তাঁকে ঘুষি মারা হয় বলেও থানায় অভিযোগ করেছেন শোভনদেববাবু। তিনি বলেন, “আমি সহ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে অবস্থান তুলতে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েক জন কলেজ-কর্মী আচমকা এসে গণ্ডগোল বাধিয়ে দিল। আমাকেও সভা করতে দেবে না বলে হেনস্থা করল। মারল।”
ওই ঘটনার পরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শোভনদেববাবু। সভায় মাইক হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “একটা সভা চলছে। সেখানে আর এক দলকে কী করে ঢোকার অনুমতি দিল পুলিশ? ওদের তো দোতলায় ওঠার আগেই আটকে দেওয়া উচিত ছিল।” ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করে বিষয়টি জানান শোভনদেববাবু। বলেন, “মন্ত্রী বিষয়টি উপাচার্যকে জানাতে বলেছেন। সেই অনুসারে ওঁকে বিষয়টি জানিয়েছি। উপাচার্য লিখিত ভাবে অভিযোগ করতে বলেছেন।” ঘটনার কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রীও তাঁকে ফোন করেন। কী কথা হল? শোভনদেববাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা একেবারেই চান না। তাঁর মতে, এ ভাবে গোলমাল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেড ইউনিয়নের প্রয়োজন নেই।”
এ দিনের ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত বলে জানিয়েছেন প্রবীণ নেতা শোভনদেববাবু। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “রাজনীতি করছি ৫০ বছর। তৃণমূলের শুরু থেকেই এই দলে আছি। কোনও দিন এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।”
শোভনদেববাবুকে হেনস্থা করল কারা? হেনস্থাকারীরা সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্য বলে অভিযোগ। ওই সমিতির সদস্যদের দাবি, গত ৩১ মার্চ তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে এই সংগঠন তৈরি হয়েছে। তখনই দল সিদ্ধান্ত নেয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতি চলবে না। বলা হয়, তৃণমূলের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্য কোনও সংগঠনও করা যাবে না। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সহ-সভাপতি মন্মথরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “দলের এক জন বর্ষীয়ান নেতা তৃণমূলের অন্য একটি সংগঠনের হয়ে সহ-উপাচার্যের ঘরের সামনে সভা করছেন বলেই প্রতিবাদ করেছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, “সেই সময় শোভনদেববাবুই সবাইকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন।”
সন্ধ্যায় মন্মথবাবু-সহ ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন শোভনদেববাবু। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৩ এবং ১১৪ (কাজে বাধা দেওয়া ও মারধর) ধারায় মামলা করা হয়েছে। শোভনদেববাবুর অভিযোগ, যারা বিশৃঙ্খলা চালিয়েছে, তারা দোলা সেনের অনুগামী। তবে দোলাদেবী ওই ইউনিয়নের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মীদের একটি ইউনিয়ন থাকবে বলে যাঁর উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেই মুকুল রায় সব শুনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, “বিষয়টি জানি না। আনন্দবাজার পত্রিকায় কোনও মন্তব্য করব না।” শোভনদেববাবু অবশ্য বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার তৈরি ইউনিয়নটি অনেক দিনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমাকে বলেছেন, যে-সব ইউনিয়নের সঙ্গে আমি যুক্ত, সেগুলিতে আমার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.