খনি-শিল্পাঞ্চল জুড়ে রাস উৎসবের আড়ম্বরও কিছু কম নয়। পারিবারিক হলেও ভক্তদের ভিড়ে তা এখন সবর্জনীন। জামুড়িয়ার জামশোল গ্রামে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার রাস উৎসব ৪৭৫ বছরে পা দিল। উৎসবের সময়ে কুলদেবতা রাধাকৃষ্ণ সঙ্গে দামোদরচন্দ্র, বিষ্ণু-সহ অন্য সঙ্গীদের মূল মন্দির থেকে রাস মন্দিরে আনা হয়। উৎসব উপলক্ষে বসে যাত্রার আসর। আগে কলকাতার যাত্রাদল আসত। এখন অর্থনৈতিক প্রতিকুলতার জন্য গ্রামের ছেলে মেয়েরাই যাত্রা পরিবেশন করেন। পরিবারের সদস্য লটুক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের মূল মন্দিরগুলি থেকে রাস মন্দিরের দূরত্ব পাঁচশো মিটার। তাঁর দাবি, “ভক্তদের ভিড় এতটাই বেশি থাকে যে ওই পথে দেব-দেবীদের নিয়ে যেতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লেগে যায়।”
জামুড়িয়ার সাতগ্রামে অধিকারী বাড়ির তিনটি মন্দিরে রাস হয়। তিনটি পৃথক শরিক রয়েছে। সব থেকে প্রাচীন গোপীনাথজীর মন্দির। প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো। এছাড়া কালাচাঁদ এবং রাধাবল্লভের পৃথক মন্দিরেও রাস উৎসব আয়োজিত হয়। এই গ্রামে প্রতিপাদের পরের দিন, বুধবার থেকে রাস উৎসব শুরু হয়। |
সাতগ্রামে অধিকারী বাড়ির রাসের সাজগোজ। —নিজস্ব চিত্র। |
পর পর দু’দিন গোপীনাথজীর মন্দিরে কলকাতার যাত্রাদল যাত্রা পরিবেশন করবেন। এই পরিবারের সদস্য নারান অধিকারী দাবি করেন, ৪০ বছর ধরে তাঁরা বিনা টিকিটে যাত্রার আয়োজন করছেন। আগে বালক সঙ্গীতের আয়োজন হত। কালাচাঁদ ও রাধাবল্লভের প্রবীণ সেবাইত সেবাদাস অধিকারী জানান, সাতগ্রামের বধিষ্ণু মণ্ডল পরিবার তাঁদের পূর্বপুরুষকে বর্ধমানের কাটাডিয়া গ্রাম থেকে এই গ্রামে পুজো করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তার পর থেকেই অধিকারীরা এই পুজোর আয়োজন করেন।
হিরাপুর ঠাকুরবাড়ির রাস এলাকায় সমাদৃত। ওই পরিবারের সদস্য প্রদীপ অধিকারী জানান, বৈষ্ণব আচার্য শ্রীনিবাস বিষ্ণুপুরে থাকতেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকেরা বিষ্ণুপুর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাকলা গ্রামে চলে যান। ১১৭০ বঙ্গাব্দে কাশীপুরের রাজা বৈষ্ণব আচার্য শ্রীনিবাসের সপ্তম পুরুষ মানিকচাঁদ ঠাকুরকে হিরাপুরে বৈষ্ণব দর্শন প্রচারের জন্য এবং এলাকার তত্ত্বাবধানের জন্য আড়াই হাজার একর জমি দান করেন। মানিকচাঁদ এখানে এসেই মদনগোপালের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বছর থেকেই রাস শুরু হয়। এই মন্দিরে রাধা-দামোদরচন্দ্র, রাধাগোবিন্দ, রাধাগোপীনাথ এবং রাধারমনের পুজো হয়। রাস মঞ্চে এই মূর্তিগুলি আনা হয়। চার দিন ধরে মেলা বসে। চার দিনই যাত্রা পরিবেশন করেন গ্রামের বাসিন্দারা। জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামে মণ্ডল বাড়ির রাস ২০০ বছরের পুরনো। এখানে রাস পঞ্চমীর দিন কুলদেবতা গোপীনাথজকে রাস মঞ্চে আনা হয়।
অন্ডালের উখড়ার হান্ডা বাড়ির রাস ১৫২ বছরে পা দিল। ওই পরিবারের প্রবীণ সদস্য মাখনলাল সিংহ হান্ডা জানান, অতীতে তাঁদের রাস মঞ্চে তিন দিন তাঁদের কুলদেবতা গোপীনাথজীকে রাখা হত। এখন নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই সঙ্গে লোকবল কম থাকায় এক দিনই মঞ্চে আনা হয়। গোপীনাথজীর সঙ্গে থাকেন ষোড়শ গোপিনী-সহ আটত্রিশ জন সঙ্গী। |