প্রায় চার কোটি সরকারি টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তবুও পুরসভা ও পূর্ত দফতরের চাপানউতোরে থমকে রয়েছে কুলটি পুর এলাকায় জি টি রোড মেরামতির কাজ। বিবাদ মিটিয়ে কবে এই কাজে হাত পড়বে তা জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষই।
আসানসোল পুর এলাকায় জি টি রোড সংস্কারের কাজ কয়েক মাস আগেই শেষ করেছে পূর্ত দফতর। কিন্তু কুলটি পুর এলাকায় এখনও সেই কাজে হাতই পড়েনি। ফলে চরম ভোগান্তি সইতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। খারাপ রাস্তার জন্য প্রায় প্রতি দিনই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানিও হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। কিন্তু তাতেও একেবারেই টনক নড়ছে না প্রশাসনের।
কুলটি পুর এলাকায় বরাকর থেকে ধেমোমেন পর্যন্ত জি টি রোড প্রায় সাত কিলোমিটার লম্বা। রাস্তার অন্তত ২৫টি জায়গা একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অন্তত সাত জায়গায় পুরো রাস্তা জুড়ে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি নেই, অথচ গর্তগুলি জলে ভরা। যান চালকেরা গর্তের গভীরতা বুঝতে পারছেন না। |
মঙ্গলবার নিয়ামতপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
ফলে গাড়ি গর্তে গিয়ে পড়ছে। মোটরবাইক ও স্কুটার আরোহীরা প্রাণ হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রশ্ন হল, এর পরেও পূর্ত দফতর উদাসীন কেন?
বস্তুত রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে পুরসভার সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে পূর্ত দফতর। ওই দফতরের আসানসোল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার মহম্মদ রাকিবের অভিযোগ, রাস্তার দু’পাশে নালা বানিয়ে দেওয়ার কথা পুরসভার। কিন্তু তারা সে কাজ করছে না। ফলে রাস্তার দু’পাশে বসতি অঞ্চলের ব্যবহৃত জল পাড় উপচে রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। নোংরা জলের সঙ্গে আবর্জনাও জমা হচ্ছে রাস্তায়। ঘন ঘন রাস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত মেরামত করেও টেকানো যাচ্ছে না।
পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত নেই এবং সে কারণে অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন রাকিব। তাঁর কথায়, “আমরা এই সমস্যার কথা কুলটি পুরসভাকে বারবার বলেছি। নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ করার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু ওরা কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না।” তাঁর দাবি, পুরসভা ওই বিষয়টি নিশ্চিত করলেই তাঁরা রাস্তার কাজে হাত দেবেন।
কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ আবার পূর্ত দফতরের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। ভাইস চেয়ারম্যান তথা নিকাশি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাচ্চু রায়ের পাল্টা অভিযোগ, অত্যন্ত নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরি হয় বলেই তা ঘন ঘন বিগড়ে যাচ্ছে। পূর্ত দফতরেরই রাস্তার পাশে নালা তৈরি করার কথা বলেও তিনি দাবি করেন। ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “নালা ও রাস্তার পাশের দু’দিকের নিকাশি আমরা করে দেব বলে পূর্ত দফতরকে জানিয়ে দিয়েছি।”
পুর এলাকার জি টি রোড সংস্কার প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার জানান, রাজ্য সরকার যে প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, তাতে রাস্তার সবচেয়ে খারাপ জায়গাগুলিতে ন্যাস্টিক রোড বানানো হবে। রাস্তার দু’পাশে গভীর নালা তৈরি হবে এবং বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকাগুলি প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, পুরসভার তরফে নিকাশির উপযুক্ত ব্যবস্থা করার আশ্বাস মিললে তবেই কাজে হাত পড়বে। দড়ি টানাটানি শেষে কবে কাজ শুরু হয়, নাগরিকেরা তারই প্রতীক্ষায়। |