হুল্লো ড়
লাইটস, ক্যামেরা, প্যারাসিটামল
য়েন্ট এন্ট্রান্স মেডিক্যালে র‌্যাঙ্ক ৮০ থাকে না খুব বেশি পরিচালকের।
খুব বেশি পরিচালক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ফোনে প্যারাসিটামলও প্রেসক্রাইব করেন না।
এবং খুব বেশি পরিচালক ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে অসাধারণ ছবিও বানান না।
ডক্টর প্রিফিক্সটা দশ বছর প্র‌্যাকটিস করার পর সেই ২০০৩ সালেই ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছেন ৪৩ বছরের কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। কোঠারি মেডিকেল সেন্টার, একবালপুর নার্সিং হোম ঘুরে শেষ চাকরি করেছেন ইইডিএফ-এ। তার পর ক্যালকাটা মেডিকাল কলেজের ছাত্র সোজা মুম্বইতে বিজ্ঞাপনের জগতে।
“চাকরি ছেড়ে মুম্বই চলে গিয়েছিলাম বিজ্ঞাপনের ছবিতে অমিত সেনকে অ্যাসিস্ট করতে। বাড়ির সবাই তো চমকেই গিয়েছিল। ডাক্তারি ছেড়ে ফিল্ম মেকিং করতে চাই শুনে লোকে তো চমকাবেই। চার বাংলোতে থাকতাম। অ্যালপেনলিবে, ট্রপিকানা, সোনি ব্রাভিয়ার অ্যাড বানাতাম অ্যাসিসট্যান্ট হয়ে। একবার তো তাজা টি-এর বিজ্ঞাপনে স্যাফ আলি খানের সঙ্গেও শু্যটিং করেছিলাম। তার পর কলকাতায় চলে এলাম ফিল্ম বানাব বলে।” সোমবার সকালে আড্ডা মারতে মারতেই বলছিলেন কমলেশ্বর।
সে দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল সকাল দশটায়।
ঠিক ৯: ৫৮-তে এসএমএস এল ‘মেঘে ঢাকা তারা’র পরিচালকের‘আই হ্যাভ রিচড’এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের অনেকেই পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলে বলেন, “ভীষণ ভদ্রলোক। এত শান্ত।”
কিন্তু ‘মেঘে ঢাকা তারা’ মুক্তি পাওয়ার পর কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের জীবনে এত শান্তি বোধ হয় থাকবে না। কারণ ঋত্বিক ঘটক।
তাই অতীব শান্ত তেতাল্লিশ বছরের এই পরিচালক এতদিন ছিলেন কোথায়?
বছর দুই আগে ‘উড়ো চিঠি’ নামে একটা ছবি পরিচালনা করেছিলেন। প্রশংসা পেয়েছিল ছবিটা। কিন্তু চলেনি একেবারেই। কিন্তু পুরো সমীকরণটাই হয়তো বদলে দিতে চলেছে ‘মেঘে ঢাকা তারা’। এখনও যাঁরাই ছবিটা দেখেছেন সবাই মুগ্ধ। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরিকে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ছবিটা। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের কিউরেটরও দেখে গিয়েছেন ছবিটা। এ ছাড়াও অন্য চলচ্চিত্র উৎসবগুলো থেকেও ডাক আসতে শুরু করেছে। এবং তাই জন্যেই ছবিটা এখনই মুক্তি পাচ্ছে না।
“ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে ঘুরে ছবিটা রিলিজ করার প্ল্যান করেছে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস,” সিগারেট আর চা খেতে খেতে বলেন কমলেশ্বর।
রবিবার সকালে একটা ক্লোজড প্রিভিউতে ছবিটা দেখার পর পরিচালক রাজ চক্রবর্তী সন্ধ্যাবেলা তাঁর এডিটিংয়ের ডেট ক্যান্সেল করে দিয়েছেন। “‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখার দিন আমি আমার ছবি এডিট করব? এই পাপ কাজটা করতে চাই না।” একই অবস্থা বাকি যত জন দর্শক ছিলেন সকলের। “‘মেঘে ঢাকা তারা’ আমাদের তৈরি করা সব চেয়ে ভাল ছবি। আর কমলেশ্বর... কী আর বলব?” mমুগ্ধ গলায় বলছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা।
আসলে কমলেশ্বরের কাজ দেখে অনেকেই চমকে গেছেন। “আমরা কাজ করি একটু। কথা বলি প্রচুর। এই লোকটা কিন্তু কোনও কথা না বলে আমাদের সময়ের সব চেয়ে ভাল ছবিটা বানাল”, সিনেমা দেখতে দেখতেই বলছিলেন রাজ।
এবং এই ছবিকে যিনি অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি অবশ্যই শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। “অপুদা ছাড়া ঋত্বিক ঘটক হত না”, অকপটে স্বীকার করছেন কমলেশ্বর।
শাশ্বত ছাড়া হয়তো ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে অভিনয় করা আর কোনও অভিনেতারই সম্ভব হত না। কিন্তু শাশ্বত যদি ‘না’ বলতেন রোলটায়, তখন ব্যাকআপ প্ল্যান কী ছিল?
“অপুদা ছবিটা না করলে আমরা তো কমলেশ্বরদাকেই বলেছিলাম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে। কমলদা বহুদিন থিয়েটার করেছেন, অসম্ভব ভাল অভিনেতা। শাশ্বতর ব্যাকআপ ছিলেন ছবির পরিচালক”, হাসতে হাসতে বলছিলেন ভেঙ্কটেশের মহেন্দ্র সোনি।
কিন্তু বব বিশ্বাসের ইমেজ ভাঙাটা একজন পরিচালক হিসেবে তার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
“সেই রকম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না কিন্তু। অপুদা এর আগে ‘রংমিলান্তি’, ‘বং কানেকশন’-এ নিজের অভিনয় ক্ষমতা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছিল। বব বিশ্বাসের চরিত্রে অপু অসাধারণ। কিন্তু যে মাপের অভিনেতা অপুদা তিনি সহজেই বব বিশ্বাসকে ছেড়ে ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে ঢুকে পড়তে পেরেছিলেন। পরিচালক হিসেবে আমাকে বিশেষ কিছু করতে হয়নি”, সাফ জানাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু আজকে যখন হঠাৎ করে তাঁকে নিয়ে চারদিকে একটা আলোড়ন, সবাই বলছে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ এই সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি, এই খ্যাতিটা কী ভাবে সামলাবেন তিনি?
“আমি যে সেলিব্রিটি এটা ভাবার ঔদ্ধত্য আমার নেই। বাংলায় যে দিকপালেরা ছবি বানিয়েছেন তাঁদের সামনে নিজের কাজ দেখে আমার লজ্জা লাগে, অসহায় লাগে।” বলছেন কমলেশ্বর।
তার বিনয়, পড়াশোনা আর ব্যবহারের দৌলতে খুব দ্রুত ইন্ডাস্ট্রিতে যে ওঁর সেনসেক্স চড়ছে, তা বলাই বাহুল্য। অনেকেই বলছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রিয় পরিচালক এই মুহূর্তে তিনি। “সত্যি আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি শুধু নিজের কাজটা করে যেতে চাই,” লজ্জা পান তিনি।
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে ওঠে তাঁর ফোন। “হ্যাঁ, ইলেকট্রাল দিয়ে দিন। খাবার পর দিনে দুবার প্যারাসিটামল। ব্লাড টেস্টটাও করিয়ে নেবেন জ্বর না কমলে,” ফোনে ঠান্ডা গলায় বলেন পরিচালক। “অনেক বছর প্র‌্যাকটিস করি না, কিন্তু কিছু চেনাশোনা পেশেন্ট আজও আমার কাছে আসেন শরীর খারাপ হলে, বলেন পরিচালক মশাই।
বলেছিলাম না, এই মানুষটা একটু আলাদা।
লাইটস, ক্যামেরা, প্যারাসিটামল...

‘মেঘে ঢাকা তারা’র পরিচালক যে সব বই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন
• সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ‘ঋত্বিকতন্ত্র’
• সুরমা ঘটকের দুটো বই। ‘ঋত্বিক’ আর ‘পদ্মা থেকে তিতাস’
• সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ‘চলচ্চিত্র মানুষ ও আরও কিছু’
• রজত রায় সম্পাদিত ‘ঋত্বিক ঘটক’
• সংহিতা ঘটকের ‘ঋত্বিক একটি নদীর নাম’ আর ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’
• তুষার তালুকদারের লেখা ‘ঋত্বিকদা সলিলদা’
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.