তারাবাজি
মেঘে ঢাকা ঋত্বিক
বিবার সকাল এগারোটা। বাইপাসের ধারের ক্লাবে প্রাইভেট স্ক্রিনিং। ঋত্বিক ঘটককে দেখতে হাজির ইন্ডাস্ট্রি। ১৯৭৬-র ৬ ফেব্রুয়ারি নয়। দিনটা ২৫ নভেম্বর ২০১২। মৃত্যুর ৩৬ বছর পরেও তাঁকে নিয়ে সমান কৌতূহল। শুরু হল সিনেমা। তিন ঘণ্টা পরে নতুন ঋত্বিককে লেটার মার্কস দেওয়া হল।

‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখার সাতটা কারণ
অনেক দিন পর বাংলায় একটি ‘অথেনটিক’ পিরিয়ড ছবি বানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ছবিটা ‘কাল্ট’ ক্লাসিক হলেও আশ্চর্য হবেন না। এমনকী বাংলা ছবির ইতিহাসে এই সময়টাকে পরে যদি এই বলে সম্বোধন করা হয়‘‘যখন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বানিয়েছিলেন,’’ তা হলেও হতচকিত হওয়ার কারণ নেই।
আজকের দর্শকদের একাংশ চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটক সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানেন না। তাঁরা এই ছবিতে ‘উড়নচণ্ডী জিনিয়াস’ ঋত্বিককে খানিকটা হলেও চিনতে পারবেন। তবে এই ছবিতে ওঁর সাফল্যকে সেই রকম উদ্যাপন করা হয়নি। বরং খুব খুঁটিয়ে দেখানো হয়েছে পরিচালক হিসেবে তাঁর যন্ত্রণাকে।
ছবিতে যে পরিমাণ গবেষণার ছাপ রয়েছে তার জন্যই ছবিটা অসামান্য। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ এতটাই পরিশ্রম করে, গবেষণা করে তৈরি যে সিনেমার ছাত্ররা আর ফিল্ম হিস্টোরিয়ানরা ডিটেলের প্রতি এতটা নজর দেখে খুশিই হবেন।
সাম্প্রতিক কালে কোনও ছবিতেই তেভাগা আন্দোলন থেকে দেশভাগ বা নকশাল আন্দোলন এতটা বিশদ ভাবে দেখানো হয়নি। ভয়েস ওভার থেকে ভিশু্যয়ালস্পুরো ছবিটাতেই রয়েছেন বাস্তব চরিত্রেরা। নাম না বললেও খুব সহজে বোঝা যায় তাঁরা কাদের চরিত্রে অভিনয় করছেন।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় থেকে অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। বিদিপ্তা চক্রবর্তী থেকে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। আবির চট্টোপাধ্যায় থেকে দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত। অসাধারণ অভিনয় করেছেন সবাই। এই ছবিতে সাম্প্রতিক কালের কিছু সেরা অভিনয়ের মুহূর্ত উজ্জ্বল হয়ে ধরা রইল।
রবিরঞ্জন মৈত্রর সম্পাদনা, সৌমিক হালদারের ক্যামেরা আর দেবজ্যোতি মিশ্রের সুর। কেউ কেউ বলছেন, এটাই তাঁদের শ্রেষ্ঠ কাজ।
ঋত্বিক ঘটককে ঘিরে অনেক ছোট ছোট গল্প, কিংবা সত্য ঘটনা আছে যেগুলো লোককথার মতোই বহু দিন মুখে মুখে প্রচলিত। কিন্তু এই ছবিতে সেগুলো দেখানো হয়নি। পুরো ছবিটাতেই কোনও সস্তা গিমিক নেই।

শাশ্বতর ‘ঋত্বিক’
ছবি মুক্তি কবে পাবে
পুজোর আগেই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, ভেঙ্কটেশ ফিল্মস (প্রযোজক) ছবির মুক্তির তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে এই মনে করে যে ছবিটির ফেস্টি ভ্যাল সার্কিটে হিট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। এটা মাথায় রেখে ছবিটি আগামী বছর পয়লা বৈশাখে মুক্তি পাবে।

যে সিনগুলো মিস করবেন না
ঋত্বিক ঘটককে যে সিনগুলোয় ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে, সেই সিনগুলোয় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অসামান্য অভিনয়।
যখন ঋত্বিক ঘটক ভেঙে পড়ছেন তাঁর ছবি চলছে না বলে, যখন দর্শক তাঁকে বলছেন, “কেউ বুঝতেই পারে না আপনার ছবি”, পুনর্বাসন চলার সময় ডাক্তারের সঙ্গে ঋত্বিক ঘটকের সংলাপদৃশ্যগুলো অনবদ্য।
আইপিটিএ-এর সময় সুরারোপ করা সলিল চৌধুরীর গানগুলোর ব্যবহার ছবিটাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
ছবির ক্লাইম্যাক্স। যেখানে আদ্যপান্ত সাদা-কালো ছবিটা শুধুমাত্র ওই একটা ফ্রেমের জন্যই রঙিন। অবশ্যই একটি ক্ল্যাসিক ছবির ক্লাইম্যাক্স।
‘মেঘে ঢাকা তারা’ মূল ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সুপ্রিয়া চৌধুরী আর অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঋত্বিক ঘটকের বাক্যালাপের দৃশ্যগুলো দর্শকের ভাল লাগতে বাধ্য।
সত্যজিৎ রায় সম্বন্ধে ঋত্বিক ঘটকের প্রশংসাও দর্শকের নজরে আসবে।
ছবির এন্ড ক্রেডিটে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের তিনটে লাইন।


টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি কী পাবে?
পাবে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে। এই ছবিতে যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় নামের এক পরিচালক হাজির, যিনি এ সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। যে সময়ে বাণিজ্যিক সাফল্যকে প্রাধান্য দিয়ে ছবি তৈরি করা হয়, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই মানুষটি আলাদা পথে হাঁটার সাহস দেখিয়েছেন। এছাড়াও অনেক বেশি ছবিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে লিড রোলে নেওয়ার কথা ভাববেন প্রযোজক, পরিচালকরা।

ববকে টপকে গেল শাশ্বত?
হ্যাঁ, সেটার সম্ভাবনাই বেশি। এই ছবি মুক্তি পাওয়ার পরে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে সারাজীবন লোকে মনে রাখবে সেই অভিনেতা হিসেবে, যিনি ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ওঁর অভিনয় আলাদা মাত্রায় পৌঁছেছে এই ছবিতে। এর জন্য যদি শাশ্বত বড় মাপের পুরস্কার না পান, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.