অস্তিত্বের সঙ্কটে ছোট সংস্থা
নয়া নীতিতে ওষুধের দাম কমলেও প্রশ্ন মান নিয়ে
জাতীয় ওষুধ নীতি (ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ নীতি) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পরে বাজারে ৩৪৮টি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম অন্তত ২০ শতাংশ কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ওষুধ শিল্প মহলের আশঙ্কা, দাম এই ভাবে কমে যাওয়ায় ওষুধের গুণগত মান ঠিক রাখা যাবে না।
তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখনই ওষুধের নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে না। কারণ, ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে মামলা রয়েছে। সেখানেই এই নতুন ওষুধ নীতি হলফনামার আকারে পেশ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওই মামলার জেরেই কেন্দ্রের মন্ত্রিগোষ্ঠী তড়িঘড়ি ওষুধনীতি তৈরি করেছে। এক শ্রেণির ওষুধই বিভিন্ন সংস্থা বিক্রি করে বিভিন্ন দামে। নীতি তৈরির সময় বিভিন্ন সংস্থার তৈরি একই ওষুধের দামের গড় করে একটা দাম নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ আদালত উৎপাদন-মূল্যে ওষুধ বিক্রি করার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছিল। নীতি অনুযায়ী গড় দাম যতই কম হোক, উৎপাদন-মূল্যের থেকে সেটা বেশিই হবে। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ওষুধ নীতি শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিগোষ্ঠী যে-সব ওষুধের দাম কমার সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে ডায়াবেটিস, বিভিন্ন সংক্রমণের ওষুধ, ব্যথা নিরোধক ওষুধ ইত্যাদিও রয়েছে। তবে ক্যানসারের ওষুধ এর মধ্যে পড়ছে কি না বা পড়লে কী ভাবে পড়ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ১৯৭৯ সালে ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার পাশ হয়েছিল। তার পরে পরেই ৩৪৭টি ওষুধের দাম বেঁধে দেয় সরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাটা কমে ৭৪-এ নেমে আসে। এ বার ৩৪৮টি ওষুধের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যে-ওষুধনীতি তৈরি করেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দাম কমালে ওষুধের মান ঠিক থাকবে কি না, বিতর্কের অন্যতম প্রসঙ্গ সেটাই। বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বলছে, ওষুধের গুণমান ঠিক রাখতে তাদের যে-পরিমাণ খরচ করতে হয়, তার প্রভাব সরাসরি ওষুধের দামের উপরে পড়ে। একটা ওষুধ নিয়ে হাজার রকমের পরীক্ষার পরে তা গ্রহণযোগ্য হয়। এই পরীক্ষার ফলের উপরেই নির্ভর করে ওষুধের গুণমান। ওষুধের দামের সঙ্গে ওই পরীক্ষার খরচটাও ধরা থাকে। ওষুধের দাম কমাতে গেলে ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ কমাতে হবে। কাঁচা মালের দাম কিংবা কর্মীদের বেতন কমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ওই সব সংস্থার প্রতিনিধিরা।
ছোট ওষুধ সংস্থার মালিকেরা আবার তাঁদের অস্তিত্ব বজায় থাকবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের একটি ছোট ওষুধ সংস্থার কর্ণধার সঞ্জয় মজুমদার বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার যে-নীতি তৈরি করেছে, তাতে আমাদের মতো দেশীয় সংস্থাগুলিই মার খাবে বেশি। আর সুপ্রিম কোর্ট যা চায়, তাতে তো আমাদের ব্যবসাই গুটিয়ে নিতে হবে। কারণ, আমরা ওষুধের গুণমানের সঙ্গে আপস করতে পারব না।” সঞ্জয়বাবুর বক্তব্য, ওষুধ তৈরিতে যে-কাঁচামাল (মলিকিউল) লাগে, তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে বহুজাতিক সংস্থাগুলি। ওই কাঁচামালের দাম যদি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলেই ছোট সংস্থার পক্ষে কম দামে ওষুধ তৈরি সম্ভব। “নইলে আমাদের মতো ছোট সংস্থাগুলিকে পুরোপুরি বহুজাতিক সংস্থার হাতে বিক্রি করে দিতে হবে,” বললেন তিনি।
ওষুধের দাম কমানো নিয়ে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংস্থাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে খুশি নয়। এমনই এক সংগঠনের পক্ষে স্বপন জানা বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে-সুপারিশ করেছে, তা মানা হোক। অর্থাৎ উৎপাদন-মূল্যেই ৩৪৮টি ওষুধ বিক্রি করা হোক বাজারে।” ওষুধ বিক্রেতা সংস্থাগুলিও এই নিয়ে ধন্দে। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তুষার চক্রবর্তী বলেন, “দাম কমলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অনেক নতুন নতুন ওষুধ বাজারে আসছে। সেগুলির ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত কী, বুঝতে পারছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.