হওয়ার কথা ছিল এক রকম। যা হল, তা-ও অর্ধসমাপ্ত। এই নিয়েই ফের বিতর্কের কেন্দ্রে চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের তিনতলা। গত বছর খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ এনেছিলেন, সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম ও তাঁর স্ত্রী তথা হাসপাতালেরই চিকিৎসক রোজিনা খাতুন ‘বেআইনি’ ভাবে প্রভাব খাটিয়ে তিনতলার কোয়ার্টার্স দখল করে আছেন। তা খালি করে নতুন বিভাগ চালুর কথাও ঘোষণা করেন তিনি।
এক বছরের বেশি সময় পার করে এ বার অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে ওই তিনতলায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্প চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। সমালোচনা শুরু হতেই তড়িঘড়ি অর্ধসমাপ্ত পরিকাঠামোয় তারা এমন বিভাগ চালু করতে চলেছে, যা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় ছিলই না!
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই কোয়ার্টার্স থেকে সরতে হয় রোজিনা-সেলিমকে। মমতা তখন ঘোষণা করেছিলেন, শিশুসদনের ওই অংশে সদ্যোজাতদের জন্য ১৬ শয্যার ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ), থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য ৮ শয্যার ডে-কেয়ার সেন্টার ও ৮ শয্যার ডায়েরিয়া ওয়ার্ড ও শিশুর আত্মীয়দের থাকার জায়গা হবে। |
উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১৫ অগস্ট। তিন মাস পরেও এসএনসিইউ বা ডায়েরিয়া ওয়ার্ড দূর অসৎ, তিনতলায় পরিকাঠামো তৈরিই শেষ হয়নি। লিফ্ট বসেনি, অক্সিজেন পাইপলাইন আসেনি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্স-গ্রুপ ডি কর্মীও নিযুক্ত হননি। এসি বসানো নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা চলেছে। মহম্মদ সেলিম পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “প্রকৃত তাগিদ থাকলে এত দিনে কাজ হল না কেন? তা হলে আমাদের সরানো হল কেন? এখন মুখ্যমন্ত্রীর কেন মনে হচ্ছে না যে, শিশুদের চিকিৎসা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে?”
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “সেলিমবাবুর অত উতলা না-হলেও চলবে। মুখ্যমন্ত্রী যখন কথা দিয়েছেন, তখন শিশুসদনে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট নিশ্চয়ই চালু হবে। হয়তো পরিকাঠামোগত কারণে দেরি হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, বিতর্ক বাড়বে আঁচ করেই অর্ধসমাপ্ত পরিকাঠামো খাতায়-কলমে চালু করতে শনিবার, ২৪ নভেম্বর ওই তিনতলায় ২৫ শয্যার পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নেন স্বাস্থ্যকর্তারা। চুপিসাড়ে উদ্বোধন সারতে প্রচারমাধ্যমকে খবরও দেওয়া হয়নি।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় তো পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডের কথা ছিলই না। কে সেই সিদ্ধান্ত নিলেন? হাসপাতালের অধ্যক্ষ মালা ভট্টাচার্যের জবাব, “কিছু বদল হয়নি। এসএনসিইউ পরে হবে। এখন পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে প্রচণ্ড জায়গার সমস্যা। তাই শিশুসদনের তিনতলাটায় কয়েকটা অতিরিক্ত বেড পাতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু শুধু অনেকটা জায়গা পড়ে রয়েছে।”
প্রশ্ন উঠেছে, পড়ে থাকা জায়গার ব্যবহার নিয়ে কর্তৃপক্ষ এত সচেতন হলে ১৫ অগস্টের পর থেকে এত দিন কেন তার সদ্ব্যবহার হল না? মালাদেবীর জবাব, “এটা ঠিক যে, এত দিন করা যায়নি। আমাদের চেষ্টায় কোনও ত্রুটি ছিল না।” তা হলে প্রশ্ন উঠছে, অসুস্থ শিশুরা লিফ্ট ছাড়া কী করে তিনতলায় উঠবে। অক্সিজেনের পাইপলাইন ছাড়া তাদের অক্সিজেনই বা দেওয়া হবে কী ভাবে? মালাদেবীর উত্তর, “লিফ্ট এক মাসেই বসে যাবে। আর অক্সিজেন সিলিন্ডার আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি।” |