উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সরকারি দুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা হিমূলকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ করলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। শুক্রবার বিকালে পাথরঘাটায় হিমুলের সদর দফতরের সামনে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের সিটুর বিক্ষোভ সামবেশ হয়। হিমুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য হিমুলের বর্তমান অবস্থার জন্য রাজ্য সরকার এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে দায়ী করেন।
তাঁর অভিযোগ, “হিমুলের পুনরুজ্জীবন তো দূরে থাক আমলাদের দিয়ে মর্জিমাফিক কাজ করানো হচ্ছে। বেসরকারি দুধের সংস্থাকে এই এলাকায় ডেকে আনা হচ্ছে। আর তাদের প্রচারে মন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে প্রচার করা হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা, হিমুলকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।” তিনি জানান, হিমুলের অবস্থা আগে খারাপ ছিল ঠিকই। কিন্তু এই সরকার কর্মীদের কোনও দিক দেখছে না। ধীরে ধীরে সংস্থাকে রুগ্ন করে তা বেসরকারি হাতে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। |
এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “বাম আমলে অশোকবাবুরা হিমুল নিয়ে কী করেছেন তা ৩৪ বছর ধরে মানুষ দেখেছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে গত বিধানসভা ভোটের নির্বাচন বিধির লাগু হওয়ার আগে কাগজে কলমে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। যা পরে আটকে যায়। আমরা ক্ষমতায় এসেই প্রথম দফায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। আরও টাকা ভবিষ্যতে দেওয়া হবে।” মন্ত্রী জানান, কোনও সংস্থাকে তো বিদেশ থেকে ডেকে আনা হয়নি। মন্ত্রীর কথায়, “কেউ যদি আইন মেনে কারখানা করে আপত্তির কী আছে? সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই উন্নতি প্রয়োজন। এটা তো নতুন কিছু নয়। অশোকবাবুরা কর্মীদের নিয়ে রাজনীতি করছেন।”
এ বছরের পুজোর আগে থেকেই হিমুলে কর্মী বিক্ষোভ শুরু হয়। এ দিনের বিক্ষোভ সমাবেশে সিটুর কর্মীরা জানান, ১৯৭৬ সালে হিমূল চালুর পর থেকে প্রতি বছর পুজোর বোনাস আকারে অনুদান দেওয়া হচ্ছিল। পাঁচ হাজার টাকা বা এক মাসের বেতন কর্মীরা পেয়েছেন। এতদিন এবারই প্রথম তা দেওয়া হল না। এই নিয়ে আন্দোলন শুরুও হয়। এক দফায় সংগঠনের পতাকা, ঝান্ডা খুলে দেওয়া হয়। পিএফ, গ্র্যাচুইটি মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রতি মাসে কর্মীরা অবসর নিলেও পুরো টাকা পাচ্ছেন না। গত ১০ মাসের বেতন বৃদ্ধির টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। সিটুর জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফে সংস্থাটিকে বাঁচানোর কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। কর্মীদের দাবিদাওয়া না মেটা পর্যন্ত আমাদের লাগাতার আন্দোলন করে যেতে হবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন জানান, হিমুলের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। গত দুই মাস আগেই কর্মীদের কিছু বকেয়া মেটানো হয়েছে। কর্মীদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই, সবাই তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাবেন। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি দেখছেন। বেসরকারিকরণের তো কোনও ব্যাপার নেই।
হিমুল সূত্রের খবর, প্রায় ৩৫ বছর আগে চালু হওয়া এই সংস্থায় বর্তমানে রোজ প্রায় ৩০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করেন। বিহার, কালিম্পং, ঘুম থেকে দুধ এনে পাথরঘাটার প্ল্যান্টে প্যাকেটবন্দি করা হয়। ১৫০ উপর কো-অপারেটিভ সংস্থা হিমুলকে দুধ দেয়। এ ছাড়া হিমুলে পশুখাদ্য, পনির, লস্যি, দইও উৎপাদন হয়। ১৫৪ জন কর্মীর সংস্থায় মাসে বেতন বাবদ খরচ হয় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। |