নতুন ভাড়া নিয়ে বাস কর্মী ও যাত্রীদের বচসার জেরে ডাকা ধর্মঘটে বিপর্যস্ত হল ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। সকাল থেকে বাস কর্মীরা রাস্তায় নেমে অটো, মিনিবাস, ট্রেকার প্রভৃতি আটকে দেওয়ায় ভোগান্তি চরমে ওঠে।
সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিতে গিয়ে কর্মীদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির বেসরকারি বাস মালিকেরা ময়নাগুড়ি-মাথাভাঙা রুটে বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের সমর্থন জানায় ডুয়ার্স মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ দিন ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি থেকে বেসরকারি কোনও বাস রাস্তায় নামেনি। নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি পৌঁছয় চরমে। জলপাইগুড়ির এক নিত্যযাত্রী গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, “পুরোপুরি অরাজকতা শুরু হয়েছে।”
নর্থ বেঙ্গল মোটর ট্রান্সপোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ময়নাগুড়ি শাখা সম্পাদক জুয়েল মিত্র বলেন, “সরকারি চার্ট দেখানোর পরেও যাত্রীদের একাংশ ভাড়া দিতে অস্বীকার করেছেন। প্রশ্ন তুলছেন সম্প্রতি ভাড়া কমেছে। অথচ কমে যাওয়া ভাড়ার তালিকা এখনও দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না।” |
বেসরকারি বাস মালিকরা এ দিন সরকারের ভাড়া বাড়ানো ও কমানোর পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ভাড়া যাই ঠিক হোক না কেন তার একটি তালিকা পরিবহণ দফতরের মাধ্যমে বাস মালিকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর পরে এক বার মাত্র তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর পরে কোনও তালিকা আসেনি। ডুয়ার্স মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “প্রশাসনের কর্তাদের আমরা জানিয়েছি ভাড়া কী হবে সেটা আগে তালিকা পাঠিয়ে স্পষ্ট করে জানানো হোক তার পরে রাস্তায় বাস নামবে।”
ভাড়ার সরকারি তালিকা না পেয়ে আজ শনিবার থেকে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার বেসরকারি বাস মালিকদের যৌথ মঞ্চও। জেলার বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের আহ্বায়ক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “যাত্রীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এ ছাড়া কোনও উপায় নেই। শুক্রবার সড়ক পরিবহণ আধিকারিক জানান, আপাতত ২০০৮ সালের তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিতে হবে। যাত্রীরা কয়েকদিন ধরে বর্ধিত হারে ভাড়া দিয়েছেন। তার পরে কয়েকদিন তিন বছর আগের হারে ভাড়া দেবেন। তার পরে প্রশাসন সরকারি তালিকা দিলে আবার বেশি হারে ভাড়া দেবেন। এটা কি ছেলেখেলা?” ভাড়া নিয়ে সুষ্ঠু মীমাংসা করার জন্য জেলাশাসককে এ দিন চিঠি পাঠিয়েছেন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুও।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “বাস ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করতে রাজ্য থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আমরা আশা করছি সোমবারের মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করতে পারব। বাস মালিকদের ধর্মঘটে না যাওয়ার অনুরোধ করেছি।” প্রশাসনের অনুরোধে কান দিতে রাজি নয় শ্রমিক সংগঠনগুলিও। কংগ্রেস প্রভাবিত জাতীয় মোটর কর্মী সঙ্ঘের সম্পাদক মানিক চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি পর্যায়ে বিভ্রান্তির খেসারত দিতে হচ্ছে। যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হচ্ছে। সুষ্ঠু সমাধান না হলে আমরা বাস চালাব না।” |