কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ছিন্ন হওয়া ইস্তক উন্নয়নে বরাদ্দ টাকার হিসেব-নিকেশের ব্যাপারে দিল্লির কড়া মনোভাবের আঁচ টের পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মহাকরণ এ বার তাই ঘর গোছানোয় নজর দিল। কেন্দ্রের টাকার হিসেব দাখিলে নজরদারির লক্ষ্যে তড়িঘড়ি তৈরি হল সচিব পর্যায়ের টাস্ক ফোর্স।
প্রশাসনিক-সূত্রের খবর: কেন্দ্রীয় অর্থ খরচের হিসেব (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) ঠিক সময়ে পাঠানো হচ্ছে কি না, কিংবা টাকা খরচ না-করে কোনও দফতর তা ব্যাঙ্কে ফেলে রাখছে কি না, নবগঠিত টাস্ক ফোর্স তা নজরে রাখবে। তিন সদস্যের টাস্ক ফোর্সের মাথায় রাখা হয়েছে রাজ্যের নতুন শিল্প-সচিব সি এম বাচোয়াতকে, যিনি ক’দিন আগে ছিলেন রাজ্যের অর্থ-সচিব। অন্য দু’জন হলেন বিদ্যুৎ-সচিব মলয় দে এবং বর্তমান অর্থ-সচিব এইচ কে দ্বিবেদী। সময়ে হিসেব পেশ না-করায় কেন্দ্রীয় সহায়তাপুষ্ট কোন কোন প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে, এঁরা তা-ও খতিয়ে দেখবেন বলে অর্থ দফতরের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে। পাশাপাশি সব দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর কোনটা কী অবস্থায় রয়েছে, তার আর্থিক খতিয়ান ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে টাস্ক ফোর্সের কাছে পাঠাতে। ওই সব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে টাস্ক ফোর্স এক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সুপারিশ করবে।
রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে শুরু করে জেএনএনইউআরএমের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ খরচের হিসেব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ইদানীং বেশি ‘স্পর্শকাতর’ হয়ে উঠেছে। যার পিছনে কেন্দ্র-রাজ্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ভূমিকাও দেখছেন আমলাদের অনেকে। অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তী কিস্তির টাকা ছাড়ার আগে তলব করা হচ্ছে আগের কিস্তির ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট। আবার তিন বছর আগের টাকা কেন ফেলে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়েও চিঠি আসছে।
তবে প্রকল্পের টাকা সময়ে খরচ করা এবং দিল্লির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে তার ঠিকঠাক হিসেব সময়মতো পাঠানোয় রাজ্যের দফতরগুলোর গয়ংগচ্ছ মনোভাব সম্পর্কেও প্রশাসনের শীর্ষ মহল ওয়াকিবহাল। সেই ঢিলেমি দূর করাও টাস্ক ফোর্স গঠনের অন্যতম লক্ষ্য বলে মহাকরণ-সূত্রে মন্তব্য করা হয়েছে।
বস্তুত টাকা থাকা সত্ত্বেও তা খরচের ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরের যে ঔদাসীন্য, বুধবার টাউন হলে মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে বৈঠকে তার সমালোচনা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |