ভাড়া নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদলের ফলে বাস-মালিকেরা আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এ বার সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাচ্ছেন তাঁরা।
ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তাঁদের কর্তব্য কী, তা ঠিক করতে বাস-মালিকেরা শুক্রবার বৈঠকে বসেছিলেন। পরে বাস-মালিকেরা জানিয়ে দেন, ৩১ অক্টোবর মহাকরণে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে যে-তালিকা তৈরি হয়েছিল, তাঁরা তার ভিত্তিতেই ভাড়া নেবেন। ভাড়ার প্রতিটি স্টেজ বা স্তরে এক টাকা বৃদ্ধি সংক্রান্ত যে-সিদ্ধান্ত গত ১৫ নভেম্বর নেওয়া হয়েছিল, তা তাঁরা মানবেন না। রাজ্যকে তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কথা সোমবার চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবেন বাস-মালিকেরা।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে। নইলে বাস-মালিকেরা ফের বৈঠকে বসে পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেবেন। ১৫ নভেম্বর রাজ্য সরকার সংশোধিত ভাড়া ঘোষণার পর থেকে হাজারখানেক বাস বসে গিয়েছে বলে মালিকদের দাবি। সরকার সিদ্ধান্ত না-বদলালে আরও বাস বসে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
তবে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলে দিয়েছেন, “দাবি করার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু সেই দাবি সরকার মানবে না।” মালিকেরা বাস বসিয়ে দিলে, সরকার কী করবে? জবাব না-দিয়ে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “সরকারের বিজ্ঞপ্তি না-মানলে তা বেআইনি হবে। এক টাকা করে ভাড়া বাড়বে, এটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। যাত্রীরা তা মেনেই ভাড়া দেবেন।” বাস-মালিকদের মনোভাবের সমালোচনা করে মদনবাবু বলেন, “এর ফলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমরা তা চাইছি না।”
বাস-মালিকদের বক্তব্য, ৩১ অক্টোবর সরকার ভাড়ার যে-তালিকা ঘোষণা করেছিল, পরিবহণ শিল্পকে বাঁচানোর পক্ষে তা যথেষ্ট নয়। বাস-মালিকেরা ‘অখুশি’ হলেও যাত্রীদের স্বার্থে ওই ভাড়ার তালিকা মেনে ভাড়া নিতে শুরু করেন। তার পরে বেসরকারি বিভিন্ন রুটের বসে যাওয়া বাসের একাংশ রাস্তায় নামে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৫ নভেম্বর বর্ধিত ভাড়ার পুনর্বিন্যাস করে পরিবহণ দফতর। ১৭ তারিখে নতুন তালিকা বেরোয়। মালিক এবং বাস-শ্রমিকদের অভিযোগ, এতে তাঁদের আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা, এমনকী সংঘর্ষও হচ্ছে কন্ডাক্টরদের। ফলে ফের বাস কমতে শুরু করে। এই বিরোধের জেরে শুক্রবার উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়িতে আন্দোলনে নেমেছেন বাস-মালিকেরা। মালিকদের অন্য সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি দীপক সরকার বলেন, “১৭ নভেম্বরের তালিকা রূপায়ণের ব্যাপারে সরকার ও যাত্রীরা চাপাচাপি করলে রাস্তায় বাস আরও কমে যাবে। রাজনীতি আর বাস্তবতা এই দুইয়ের মধ্যে একটা ফারাক আছে, এটা সকলকে বুঝতে হবে।”
মিনিবাসের মালিকেরা অবশ্য পুরনো ভাড়াই নিচ্ছেন। ৩১ অক্টোবর ঘোষিত সরকারি তালিকা মালিকদের পছন্দ হয়নি। |