বৃহস্পতিবার রাত থেকে যে মানুষের ঢল শুরু হয়েছিল, শুক্রবার সকালেও তাতে কোনও ভাঁটা দেখা যায়নি। এই দিন কৃষ্ণনগর ছিল দর্শনার্থীদের দখলেই। রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। সেই ভিড়ের ঢেউ গিয়ে ছুঁল জলঙ্গি নদীর ধার পর্যন্ত।
সেই ভিড়ের মধ্যেই পথ বার করে নিয়ে চলেছে একের পর এক বারোয়ারির বিসর্জনের শোভাযাত্রা। ছিল একটার পর একটা ট্যাবলো। কোনওটার বিষয় শিশু শ্রমিক, কোনওটার বা আদিবাসী সংস্কৃতি। কারও বা বিষয় হল ডেঙ্গি, কারও নবান্ন। সেই শোভাযাত্রায় সাড়ম্বর উপস্থিতি ছিল কৃষ্ণনগরের অহঙ্কার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও গোপাল ভাঁড়েরও। ছিলেন বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসুও। সেই সঙ্গেই ট্যাবলোতে স্থান পেয়েছেন সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও। তাঁর ছবির নীচে প্রদীপ জ্বালিয়ে যখন ট্যাবলো প্রদক্ষিণ করেছে কৃষ্ণনগরের রাস্তা, ঘনিয়ে এসেছে ক্ষণিক বিষাদ।
তবে মুহুর্মুহু চিৎকার আর সমবেত উৎসব মুখর জনতার উপস্থিতিতে প্রতি বারের মতো এ বারেও কৃষ্ণনগর ছিল কৃষ্ণনগরেই। গোলাপট্টী, নেদেরপাড়া, কলেজস্ট্রিট, জজকোর্টপাড়া, নুড়িপাড়া, ঘূর্ণি দাসপাড়া, রাধানগর নতুন বারোয়ারি, কাঁঠালপোঁতা বারোয়ারির ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রা বিশেষ করে নজর কেড়েছে। তবে তারপরেও আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে দর্শকদের মনে। শোভাযাত্রার ভিড়ে দেখা যায়নি রাজদূত ক্লাবের রাজমাতার ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রা। তবে পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি বাঁকুড়ার দুগার্মন্দির ছিল জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম আকর্ষণ।
দুপুর ৩টের মধ্যে ঘট বিসর্জন শেষ হয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য ফাঁকা হয়ে যায় রাজপথ। কিন্তু সন্ধ্যার পরে আবার নতুন করে রাস্তার দু’পাশে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। রাত যত বেড়েছে ততই বেড়েছে ভিড়। আর আবার সেই ভিড়ের মধ্যে পথ করে নিয়ে বিশাল বিশাল প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিসর্জনের জন্য সেই জলঙ্গির রাস্তাতেই। ছিল কড়া পুলিশ প্রহরা। তবে পুজোর ক’টা দিন পুরোপুরি শান্তিতে কাটেনি। রাত বারোটা নাগাদ ঘূর্ণি বারোয়ারিতে হানা দেয় এক দল মদ্যপ। সমান্য কথা কাটাকাটির পরেই আচমকা তারা মণ্ডপ চত্বরে রীতিমতো তাণ্ডব শুরু করে। ভাঙচুরও করা হয়েছে। তাদের হাতে মার খেয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন পাঁচ জন। তাঁদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। |