সীমান্তের গ্রামে সম্প্রীতির মঞ্চে যাত্রা
গদ্ধাত্রী পুজো মণ্ডপের কাছেই বাঁধা হয়েছে মঞ্চ। আজ, শনিবার সেই পুজো উপলক্ষেই যাত্রা ‘আনন্দ আশ্রম’। শুক্রবার সন্ধ্যায় তারই মহলায় ব্যস্ত ছিলেন নির্দেশক আলি হায়দার।
ওই দিন দুপুরেই পুজোর বিল বই নিয়ে চাঁদা তুলে বেড়াচ্ছে টিঙ্কু ,অমিত, মাসাদুল, রানারা। যাত্রার আসরের দেখাশোনা করছেন অজিত বিশ্বাস, বদরুদ্দিন মণ্ডল, বিদেশ মণ্ডল, আরেজুল বিশ্বাসরা। মসজিদে যাওয়ার পথে পুজো, মেলার খোঁজখবর নিয়ে গেলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম বাক্কার মণ্ডল।
তেহট্ট মহকুমার হোগলবেড়িয়ার গোপালপুর ঘাটের মানুষ উৎসবকে উৎসব বলেই চেনেন। ৫২ বছর আগে এই জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল। সেই উদ্যোক্তাদের অন্যতম ৮৭ বছরের বৃদ্ধ হরিনারায়ণ মণ্ডল বলেন, “সেই দিনগুলির কথা আমার স্পষ্ট মনে রয়েছে, তখন এই গোপালপুর ঘাটেই কৃষ্ণনগর গোপালপুরঘাট রুটের অনেক বাস রাতে থাকত। সেই বাসকর্মী ও গ্রামের কিছু মানুষ এখানে প্রথমে বিশ্বকর্মা পুজো শুরু করেন। তার কয়েক বছর পর থেকে জগদ্ধাত্রী পুজোও শুরু হয়। সেই পুজোর সময় থেকে নিয়াজউদ্দিন, মহসিন, এলাহি, খগেন্দ্রনাথ, মঙ্গল, দৌলতের মতো গ্রামের আরও অনেকে ছিলাম। তাঁদের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। তবে এখনও পুজো কমিটিতে থাকেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। এক সঙ্গে পুজো বা যে কোনও উৎসবে মেতে ওঠা এই গ্রামেরই বহু পুরনো ঐতিহ্য। এবং আজও সেটা অব্যহত আছে, আগামিতেও থাকবে।”
পুজো ঘিরে উৎসবের আয়োজন। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
কৃষ্ণনগরের আদলে এখানেও পুজো শুরু হয় নবমীর দিন থেকে। বসে মেলা, যাত্রার আসর। মহিলাদের জন্য নানা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বিচিত্রানুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন গ্রামের মানুষ। সীমান্তছোঁয়া এই গ্রামে গত কয়েক বছরে জগদ্ধাত্রী পুজোই সব থেকে জাঁকজমক করে হয়। ফলে বছরের অন্য সময় ঘরে ফেরা হোক বা না হোক, এই সময়ে ঘরে ফেরেন কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকা ভূমিপুত্রেরা। কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছেন হাকিম মোল্লা। জুল্লু শাহ বলেন, “এই সময় গ্রামে না থাকলে হয় নাকি? পুজো, মহরম শেষ করে তারপর আবার কেরল ফিরব তারপর তো সেই পাক্কা এক বছরের অপেক্ষা।” প্রয়াত নিয়াজউদ্দিনের স্ত্রী রেখা মোল্লা বলেন, “আরে পুজোটা তো আমরাই সামলাই। আমি, সুফিয়া, মঞ্জুলা, মিঠুরা প্রতিবছর স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব নিই। আমার বড় ছেলে সব থেকে বেশি চাঁদা তুলে একবার পুরস্কারও পেয়েছিল। ছেলেরা পুজোর দায়িত্বে থাকাকালীন বাড়িতে আমিষ পর্যন্ত উঠতে দিত না। এখন দুই ছেলেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকে। তবে পুজো ও মহরমের জন্যই আজ কালের মধ্যেই ওরা বাড়ি ফিরবে।”
স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিদেশ মণ্ডল কিংবা গোপালপুর ঘাট বিশ্বাসপাড়া জামেয়া মসজিদ কমিটির সম্পাদক বাবর আলি মণ্ডলের কথায়, “এখানে ঈদ, দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো বা মহরম যাই বলুন না কেন, এগুলো সবই আমাদের সবার উৎসব। আর এটাই আমাদের অহঙ্কার।” গ্রামের হানিফউদ্দিন মণ্ডল বলেন, “পুজো পরব তো বটেই, গ্রামে নামসংকীর্তনের শেষ দিনে সারা গ্রামে কারও বাড়িতে রান্না হয় না। গ্রামের মানুষ সেদিন এক সঙ্গেই রান্না করেই খান। গ্রামের এই ট্র্যাডিশন আমাদের বাপ ঠাকুর্দার আমল থেকে চলে আসছে। আর এটাই আমাদের গ্রামের পরিচয়। এটাই আমাদের শক্তি। কোনও অশুভ শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না।”
এক দিকে পুজো অন্য দিকে রবিবার মহরম। সব মিলিয়ে গোপালপুর ঘাট এখন উৎসবের মেজাজে। সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়তেই মণ্ডপে বাড়তে থাকে ভিড়। দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা যায় মাগরিবের আজান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.