প্রয়াগ ইউনাইটেড-১ (বেলো)
সালগাওকর-১ (অগাস্টিন) |
খেলায় তিনি মনে করাচ্ছিলেন মজিদ বাসকারকে। আর শুক্রবার মেজাজে মনে করিয়ে দিলেন মারিও বালোতেলিকে।
বেয়াল্লিশ দিন আগে ওডাফা-টোলগেদের পাসিং ফুটবলে মাত করার পর মজিদ বাসকারের সঙ্গে তুলনা শুরু হয়েছিল তাঁর। কিন্তু এ দিন যুবভারতীতে সালগাওকরের সঙ্গে ১-১ অমীমাংসিত ম্যাচের পর তাঁকে নিয়ে নতুন জিজ্ঞাসা, মেজাজে তিনি কি ময়দানের বালোতেলি?
তিনি- কার্লোস হার্নান্ডেজ। প্রয়াগের কোস্তারিকান বিশ্বকাপার।
কেন এই তুলনা? এ দিন প্রথমার্ধের পর কোচ তাঁকে তুলে নেওয়ায় বিরক্ত কার্লোস রিজার্ভ বেঞ্চে না বসে ব্যাগ গুছিয়ে সোজা চলে যান ভিআইপি বক্সে। সেখানেই কোচের ওপর বিষোদগারের ফাঁকে কর্মকর্তাদের হুমকি, “টিকিট করে দাও। রবিবারই দেশে ফিরে যাব।” খেলা শেষ হতেই ড্রেসিংরুমে না গিয়ে সোজা বাড়ি। অনেকটা বালোতেলির মতো। তফাত হল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি কোচ মানচিনি ইতালিয়ান তারকাকে তুলে নেওয়ার পর বালোতেলি ড্রেসিংরুমের বদলে বিমান ধরে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। কার্লোস শেষমেশ দেশে ফিরে যাবেন কি না, তা সময়ই বলবে। |
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিনের সালগাওকর ম্যাচে? গোয়ার দলটির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে কার্লোসরা। ৪০ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে তোলা রণদীপের কর্নারে গৌরমাঙ্গীদের রক্ষণকে বোকা বানিয়ে চকিত হেডে গোল করে গিয়েছেন অগাস্টিন ফার্নান্ডেজ। উলটো দিকে, সেই অগাস্টিন, ফুলগানকো, লুসিয়ানোদের ‘বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল’-এ তখন বারবার একা পড়ে গিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা প্রয়াগের গোলমেশিন র্যান্টি ম্যার্টিন্সের। দু’ প্রান্ত থেকে উঠে গিয়ে বিনীথ, লেস্টাররাও তাঁকে সাপোর্ট দিতে পারছেন না। কার্লোস দু’তিনটে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ালেও চেনা ছন্দে নেই। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুতেই তাই প্রয়াগের ডাচ কোচ সাটোরি কার্লোসকে তুলে নামান মহম্মদ রফিককে। আর সেখান থেকেই শুরু এই বিতর্ক।
মাঠ থেকে বেরিয়ে এসে ভিআইপি বক্সে মর্গ্যান, ভিনসেন্টদের সামনেই ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দেন কার্লোস। সাটোরিকে উদ্দেশ্য করে প্রয়াগ কর্তাদের বলতে থাকেন, “ওই লোকটা আমাকে সম্মান করে না। আমিও ওঁকে সম্মান দেব না।” তাঁকে শান্ত করার ফাঁকেই ৫৮ মিনিটে গোলশোধ প্রয়াগের। বক্সের বাইরে ডাইরেক্ট ফ্রি-কিক থেকে রামধনুর মতো বাঁকানো শটে বেলো সমতা ফেরাতে সাময়িক সংযত কার্লোস। অবশ্য গোলের ক্ষেত্রেও ছোট একটা বিতর্ক থাকছে। সালগাওকর শিবিরের দাবি, রেফারি সন্তোষকুমার বাঁশি বাজানোর আগেই বল মেরে দিয়েছিলেন প্রয়াগ স্টপার।
ম্যাচের শেষে কার্লোস যখন সোজা গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, “ড্রেসিংরুমে যাবেন না?” কার্লোস বলেন, “কেন যাব?
তাঁর কোচ সাটোরি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ড্যামেজ কন্ট্রোলের একটা চেষ্টা করেছিলেন “লাতিন আমেরিকান ফুটবলাররা একটু আবেগপ্রবণ হয়েই থাকে” বলে। কিন্তু পাশাপাশি পরে এটাও বললেন, “কেউ দলের ওপরে নয়। আমিও নই। শনিবার ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে। কার্লোসের ফিটনেস সমস্যা রয়েছে।”
কার্লোসের মেজাজ হারানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। সিকিম ইউনাইটেড ম্যাচেও তাঁকে তুলে নেওয়ায় সিন গার্ড ছুড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তার আগে ওএনজিসি ম্যাচেও আগের কোচ সঞ্জয় সেন তাঁকে তুলে নেওয়ায় একই আচরণ করেছিলেন এই কোস্তারিকান। কার্লোসের এই আচরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দলেও। সতীর্থ র্যান্টি বলছেন, “শৃঙ্খলা মেনে চলা দরকার সকলের।”
প্রয়াগ কর্তারা কার্লোসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছেন বলে খবর। দলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বললেন, “ওর কড়া শাস্তি হতে পারে। এ ব্যাপারে স্পনসররাও সহমত।” আই লিগে সাত ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পেন-ওপারাদের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে আপাতত গোল পার্থক্যে শীর্ষে খেতাবের অন্যতম দাবিদার র্যান্টিরা।
ময়দানে পা রাখার পর প্রথম মরশুমে মজিদ বাসকর কোনও শৃঙ্খলাজনিত বিতর্কে জড়াননি। কিন্তু নতুন ‘মজিদ’ মাত্র বেয়াল্লিশ দিনেই বিতর্কে জড়িয়ে সাড়া ফেলেছেন ময়দানে।
প্রয়াগ ইউনাইটেড: সুব্রত, দীপক, বেলো, গৌরমাঙ্গী, সুখেন (ধনচন্দ্র), লেস্টার (গৌরাঙ্গ), আসিফ, লালকমল, বিনীথ, কার্লোস (রফিক), র্যান্টি। |