|
|
|
|
পিংলা |
একশো দিনের কাজে ত্রুটি, প্রমাণ প্রশাসনিক তদন্তে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোথাও মোরাম রাস্তা তৈরি হয়েছে। কোথাও জমির সমতলীকরণ বা পুকুর খনন। কিন্তু কাজ করেছে কারা? কোনও মাস্টার রোল নেই! এমনকী প্রশাসনিক অনুমোদন না নিয়েও কাজ করা হয়েছে! একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এমনই ভুরি ভুরি উদাহরণ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা ব্লকে তৃণমূলের অধীনে থাকা গোবর্ধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কী কাজ হয়েছে? নাকি ভূয়ো কাজ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের জন্য খাতায় কলমে কাজ দেখানো হয়েছে। যে কাজের জন্য খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা!
অথচ মাস্টার রোল ছাড়া মজুরি দেওয়া যায় না। কারণ, মাস্টার রোল-এ থাকা ব্যক্তিদের নামেই পাওনা টাকা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে তাঁদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়। সেই মাস্টার রোল-ই নেই পঞ্চায়েতের কাছে! কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল? পঞ্চায়েত প্রধান অনিতা জানা অবশ্য এসব স্বীকার করতে নারাজ। তাঁর কথায়, “এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।” বিডিও সুতপা নস্কর অবশ্য স্বীকার করেছেন, “তদন্তে বেশ কিছু গরমিল ধরা পড়েছে। জেলাকে সেই রিপোর্টও পাঠিয়ে দিয়েছি।” অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “গরমিল ধরা পড়লেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও তাই হবে।” পিংলার গোবর্ধন গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। প্রধানও তৃণমূলের। ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে একশো দিনের প্রকল্পে বেশ কিছু কার করেছে। কিন্তু কাজের মান খারাপ, অনেক ক্ষেত্রে কাজ না করেই ভূয়ো বিল দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় মানুষ বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানান। তারপরই তদন্ত শুরু করেন বিডিও। তদন্তে গিয়ে দেখা যায়, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ৩৪ টি প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও মাস্টার রোল নেই। অথচ, ওই কাজের জন্য ১১ হাজার ১৯৭টি শ্রম দিবস দেখানো হয়েছে। আর ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও এখানেও নেই মাস্টার রোল। আবার ৫টি প্রকল্পে প্রশাসনিক অনুমোদন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এই দু’টি ক্ষেত্রে মিলিয়ে ৬ হাজার ৩২৭টি শ্রম দিবস দেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ৫২৪টি শ্রম দিবস দেখানো হয়েছে। কিন্তু কাজ করল কারা? কাদের টাকা দেওয়া হবে? এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। আরও একটি বড় প্রশ্ন হল, গত বছরে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁরা টাকা না পেয়েও নীরব কেন? এই প্রকল্পে গরিব মানুষই কাজ করেন। সেই টাকার উপরেই তাঁদের সংসার চলে। কাজ করার পর ২-৪ মাস টাকা পেতে দেরি হলেই যেখানে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় সেখানে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ নীরব কেন? তাহলে কী কাজ না করেই কাজ হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে! পঞ্চায়েত প্রধানের অবশ্য দাবি, “কাজ হয়েছে। আমরা বেশিরভাগ টাকা মিটিয়েও দিয়েছি। কোনও সমস্যা হয়নি।” কিভাবে টাকা মেটানো হল? কত টাকায় বা মেটানো হয়েছে, কাদের সে টাকা দেওয়া হয়েছে? বিডিও বলেন, “টাকা দেওয়া বা কাজ করার দায়িত্ব পঞ্চায়েত প্রধানের। এ ব্যাপারে তিনি করেছেন তিনিই বলতে পারবেন।” প্রধান অবশ্য এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে উঠে আসা এই সমস্ত বিষয়ই বিস্তারিত ভাবে রিপোর্টে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবারই তা জেলার পদস্থ আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিডিও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনের সপ্তাহেই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হবে। অনুমোদন ছাড়া কাজ করার জন্য প্রধানকে ‘শো-কজ’ করা হবে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আর যদি মাস্টার রোল ছাড়াই মজুরীর টাকা মিটিয়ে দিয়ে থাকেন তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। যদি টাকা না মেটানো হয়, সেক্ষেত্রে পুণরায় তদন্ত করা হবে। জেলা থেকে পাঠানো হবে তদন্তকারী দল। কতটা কাজ হয়েছে, তার জন্য কত শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে, কারা কাজ করেছেন, এসব খতিয়ে দেখা হবে। তারপরই এ বিষয়ে কী করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |
|
|
|
|
|