|
|
|
|
আক্রমণাত্মক সনিয়া |
টুজি হাতিয়ারও গেল, দিশাহারা বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
একে ঘরের কোন্দলে অতিষ্ঠ বিজেপি। তার উপরে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সবেধন নীলমণি দুর্নীতির অভিযোগের অস্ত্রটিও এ বার যেতে বসেছে।
যে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে এত দিন দেশ জুড়ে প্রচার করেছে নিতিন গডকড়ীর দল, দফায় দফায় অচল করে রেখেছে সংসদের অধিবেশন, সিএজি-র এক প্রাক্তন নিরীক্ষকের আচমকা বিবৃতিতে তা হারাতে বসেছে তারা। উল্টে কংগ্রেস এখন তৈরি হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে, এই মর্মে পাল্টা আক্রমণ শানাতে।
সিএজি-র অবসরপ্রাপ্ত নিরীক্ষক আর পি সিংহ কী তথ্য ফাঁস করেছেন? তাঁর বক্তব্য, টুজি বণ্টন নিয়ে তিনি যে রিপোর্ট প্রস্তুত করেছিলেন তাতে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ক্ষতির কথা বলা ছিল না। কিন্তু কোনও নিয়মনীতি না দেখিয়ে রাতারাতি রিপোর্ট বদলে দেওয়া হয়। আর সেটা হয়েছে বিজেপি প্রভাব খাটানোর ফলেই। তিনি এ কথা বলার পরে আজ আক্রমণাত্মক হয়েছেন সনিয়া গাঁধী স্বয়ং। টুজি নিয়ে সিএজি-র রিপোর্ট প্রসঙ্গে এই প্রথম এতটা আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সনিয়া আজ বলেন, “বিজেপি-র চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেল।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, টুজি কাণ্ড কি এ বার তা হলে ব্যুমেরাং হয়ে উঠবে বিজেপি-র বিরুদ্ধে? সনিয়ার জবাব, “তাই তো মনে হচ্ছে।” |
তবুও ফুচকায় মজে মুরলীমনোহর জোশী। শুক্রবার। ছবি: প্রেম সিংহ |
সরকারের তরফেও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাল্টা আক্রমণের পথেই যাবে তারা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি এ দিন বলেন, ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার লোকসান নিয়ে বিজেপি যে ফানুস তৈরি করেছিল, তা এ বার ফেটে গেল। তাঁর বক্তব্য, “সিএজি এবং বিজেপি-র এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত।” যদিও মুরলীমনোহর জোশী আজ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, ওই অবসরপ্রাপ্ত নিরীক্ষককে দিয়ে কংগ্রেস ষড়যন্ত্রের গল্প রটাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত সিএজি রিপোর্টে কী বলা হয়েছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কোনও আষাঢ়ে গল্পের মূল্য নেই।
দিল্লির অনেকেই অবশ্য বলছেন, এই মুহূর্তে সব দিক থেকে কোণঠাসা বিজেপির পক্ষে নিরীক্ষকের বক্তব্যকে আষাঢ়ে গল্প বলা ছাড়া উপায় নেই। এমনিতেই নেতৃত্ব বিতর্কে দল জেরবার। দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাকে সামনে রেখে দল ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে যাবে, তা নিয়ে কোন্দলের অন্ত নেই। এই পরিস্থিতিতে যদি ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার অভিযোগটাও মাঠে মারা যায়, তা হলে কী হবে দলের? বামেরাও কি তখন আর বিজেপির সঙ্গে একযোগে সরকার বিরোধী মঞ্চে থাকবে?
আজ যা পরিস্থিতি, তাতে বিজেপি অনেকটাই রক্ষণাত্মক। কারণ, সিএজি-র অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জেনারেল আর পি সিংহ সরাসরি বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, ক্ষতির অঙ্ক গোনার কাজে সিএজি-র ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা তথা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান মুরলীমনোহর জোশী। প্রাক্তন নিরীক্ষকের বক্তব্য, স্পেকট্রাম বণ্টনে কোনও আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। কিন্তু তাঁর রিপোর্টে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার কথা বলা ছিল না। ক্ষতির সেই অঙ্ক পরে যোগ করেছিলেন সিএজি কর্তৃপক্ষ। বড় কথা হল, চূড়ান্ত রিপোর্ট সংসদে পেশ করার আগের দিন জোশীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বিনোদ রাই। তা ছাড়া টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে পিএসি যখন তদন্ত শুরু করে, তখন সিএজি-র কিছু অফিসারকে জোশীর বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন রাই।
প্রাক্তন নিরীক্ষকের এই তথ্য ফাঁসের পরেই আজ বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে কংগ্রেস। সকালে সংসদ অধিবেশন বসার আগে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক হয়। তার পর বিজেপি-র সমালোচনায় মুখ খোলেন সনিয়া। খবর, সিএজি ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সমাজবাদী পার্টিকেও পাশে পেতে সক্রিয় কংগ্রেস।
২০০৮ সালে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন করেছিল ইউপিএ-১ সরকার। সেই বণ্টন প্রক্রিয়া নিয়ে নিরীক্ষার পর, দু’বছর বাদে সিএজি সংসদে রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছিল, ওই প্রক্রিয়ায় সরকারের ভ্রান্ত নীতির জন্য সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতি ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দেশ জুড়ে প্রচার করে বিরোধীরা। এই নিয়ে সরব হয়ে প্রচারের আলোয় এসেছেন অণ্ণা হজারে-অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা।
অণ্ণার সঙ্গে বিজেপির যোগের অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার আর পি সিংহ যে তথ্য ফাঁস করলেন, তাতে কংগ্রেস তথা সরকার স্বাভাবিক ভাবেই আক্রমণাত্মক হবে। এবং আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই। এ দিন সনিয়ার আক্রমণাত্মক সুর সে দিকেই ইঙ্গিত করে। কিন্তু যে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এত দিন ধরে তুলে আসছিল বিজেপি, তা হাত থেকে চলে যাওয়ার মুখে তারা পরিস্থিতি সামলাবে কী ভাবে? সেটাই এখন দেখতে চাইছে দিল্লি। |
|
|
|
|
|