রাত ৯টা। চাঁদনি চক থেকে পার্ক সার্কাসগামী অটো ছাড়ল চার জন যাত্রী নিয়েই। মির্জা গালিব স্ট্রিটে ঢুকেই যাত্রী সংখ্যা পাঁচ। এলিয়ট রোডের মুখে ট্রামের জন্য বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। পাঁচ জন যাত্রী-সহ অটো দাঁড়িয়ে সেখানেই। উপায় না দেখে দুই ব্যক্তি উঠে পড়লেন সেই অটোতেই। যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াল সাতে।
ভিতরে তারস্বরে গান বাজছে। পুলিশ ধরার আশঙ্কায় সামনে বসা এক যাত্রী কিছুটা প্রতিবাদ করলেন। কিন্তু বড় রাস্তায় অটো ঢুকলে তবে তো পুলিশ। এ গলি, সে গলি দিয়ে অটো ছুটল দুরন্ত গতিতে। রাস্তায় এখন দাঁড়িয়ে অনেক যাত্রী একটা ট্রিপ তাড়াতাড়ি শেষ করলে আরও ট্রিপ!
রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র মাস চারেক আগেই ঘোষণা করেছেন, অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া চলবে না। চালকেরা যখন-তখন ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। অটোয় তারস্বরে গান বাজানো চলবে না। নির্দিষ্ট রুটেই চলতে হবে অটোকে। অথচ চাঁদনি-পার্ক সার্কাস রুটে চালকেরা যে রাত ন’টার পর থেকে প্রথম তিনটি হুঁশিয়ারির তোয়াক্কাই করছেন না, উপরের ছবিতেই তা স্পষ্ট। ভাড়া নিয়ে টানাপোড়েনে এক দিকে যখন বাসের সংখ্যা কমছে, শহরজুড়ে অটোর দৌরাত্ম্যও বেড়ে চলেছে পাল্লা দিয়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আসা বার্তার জেরে কলকাতার বিভিন্ন মোড়ে এখন গভীর রাত পর্যন্ত যানবাহন তল্লাশি করে পুলিশ। সংবেদনশীল এলাকায় মোড়ে মোড়ে পুলিশ, ট্রাফিক সার্জেন্ট। কিন্তু নিয়মভাঙা অটো চোখে পড়ে না তাঁদের। কারণ, পুলিশ এড়িয়ে গলিঘুঁজি দিয়ে যাত্রী নিয়ে দৌড়য় অটো।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিয়ম ভাঙার যখন এই হাল, অন্যত্র কী অবস্থা? পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “টালিগঞ্জ, রাজাবাজার, উল্টোডাঙা, সল্টলেক থেকে অনেকেই বেশি যাত্রী নেওয়ার অভিযোগ করছেন। কিন্তু অটোকে নিয়ন্ত্রণ কে করবে?” পরিবহণমন্ত্রী গত এক বছরে এ নিয়ে অন্তত ১০ বার বৈঠক করেছেন। তৈরি হয়েছে টাস্ক ফোর্স। বিধি তৈরি করে দিয়েছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু সেই বিধি কে মানাবে, ঠিক হয়নি।
চাঁদনি চক-পার্ক সার্কাস রুটের চালকেরা অবশ্য ভাড়া বাড়াননি। কিন্তু পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন রুটে অটো চার্ট প্রকাশ করে ভাড়া বাড়িয়েছে। নির্দেশ অমান্য হলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়েছে, সেই অভিযোগ কোনও অটোচালক বা ইউনিয়নই করছে না।
অটোর দৌরাত্ম্য যে বেড়েছে, তা ঠারেঠোরে মানছেন পরিবহণমন্ত্রীও। মদনবাবু বলেন, “কিছু দিন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উৎসবের মরসুমে প্রশাসন কিছুটা শিথিল হয়েছিল। সেই সুযোগে অটো আবার যা-ইচ্ছে-তাই শুরু করেছে। বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসান শেষ হলে আমরা ফের অটো নিয়ন্ত্রণে নামব। নিয়মিত নজরদারি শুরু হবে। সরকার কোনও ভাবেই এ সব বরদাস্ত করবে না।”
মন্ত্রীর দাবি, “অটোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমি কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলির ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলাম। পুজো এসে যাওয়ায় তা বন্ধ ছিল। খুব শীঘ্রই ফের হাওড়া-হুগলির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করব। তার পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অটো নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা কী? কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “প্রতিদিনই নজরদারি থাকে। কোনও অটো বেশি যাত্রী তুললে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হয়। তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়।” |