প্রথম সারির অনলাইন সংস্থা থেকে কেনা ই-টিকিট হাতে মজুত। কিন্তু বোর্ডিং পাস নিতে গিয়ে বিপত্তি। বিমানসংস্থার কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, টিকিটের দাম মেটানো হয়নি। অতএব বোর্ডিং পাস দেওয়ার প্রশ্ন নেই। শুনে দিল্লির বিমানবন্দরে লাইনে দাঁড়ানো পাঁচ প্রবীণ নাগরিক-সহ আট জনের দলটি হতবাক। বিস্তর ছোটাছুটির পরে শেষমেশ বেশি দামে টিকিট কেটে কোনও মতে বিমানে উঠলেন তাঁরা।
শহরের কিছু মানুষকে কাশ্মীর ঘোরাতে নিয়ে গিয়ে সম্প্রতি এমনই ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা হয়েছে এক পর্যটন সংস্থার। মধ্য কলকাতার ওই ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্তা অয়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, নামী সংস্থার কাছ থেকে রীতিমতো নগদে বিমানের টিকিট কিনেছিলেন তাঁরা। “তবু চূড়ান্ত হয়রানি হল! বয়স্ক মানুষদের নিয়ে খুব বিপদে পড়েছিলাম। সঙ্গে অর্থদণ্ড তো আছেই।” আক্ষেপ অয়নবাবুর।
যাদের থেকে টিকিট নিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্য কী?
অভিযোগ পেয়ে সেই সংস্থার কর্তারাও বিস্মিত, দুর্ভোগের জন্য ক্ষমাপ্রার্থীও। তাঁদের মতে, অনলাইন লেনদেনে প্রযুক্তিগত কোনও গলদের কারণেই এই বিপত্তি। ‘মেক মাই ট্রিপ’ নামে ওই সংস্থার তরফে এ ধরনের ঘটনাকে ‘বিরলতম’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। তাদের কলকাতা শাখার অন্যতম কর্তা শান্তনু চৌধুরীর কথায়, “সম্ভবত প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সমস্যা হয়েছে। তবে যে কারণেই হোক, আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।” ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন?
অয়নবাবু বলেন, পুজোর পরে সাত জনের একটি দলকে তিনি কাশ্মীর নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩০ অক্টোবর দিল্লি থেকে বিমানে শ্রীনগর যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো অনলাইন সংস্থাটির সল্টলেক অফিস থেকে টিকিট কেটেছিলেন, নগদ সাড়ে সাঁইত্রিশ হাজার টাকায়। অয়নবাবুর দাবি, টিকিট কাটার পরে সাধারণত মোবাইলে যে এসএমএস আসে, তা আসেনি। তাঁর মন্তব্য, “ওঁরা বললেন, এসএমএস না-এলেও সমস্যা হবে না, কারণ ই-টিকিটের প্রিন্ট আউট রয়েছে। আমরাও নিশ্চিন্ত ছিলাম।”
কিন্তু বাস্তবে হয়রানি এড়ানো যায়নি। অয়নবাবুর দাবি: সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থা স্পাইসজেটের কাউন্টারে ই-টিকিটের উপরেই ছাপ মেরে জানিয়ে দেওয়া হয়, দাম না-পাওয়ায় বিমানে আসন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর আরও অভিযোগ, “দিল্লি বিমানবন্দর থেকে টিকিট বিক্রেতা সংস্থাটিকে ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়েছিলাম। লাভ হয়নি। নতুন করে টিকিট কেটে কোনও মতে নিজের সংস্থার সুনাম বাঁচিয়েছি।” যদিও শান্তনুবাবুর দাবি: সে দিন দিল্লি থেকে বিভ্রাটের খবর পাওয়ার পরে তাঁরা যাত্রীদের আসন জোগাড় করে দিতে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়েছিলেন। টিকিটের টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে। এমনকী, নতুন টিকিট কিনতে যে বাড়তি খরচ হয়েছে, তা-ও তাঁরা মিটিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন শান্তনুবাবু। অন্য দিকে অয়নবাবু বলেন, বিভ্রাটের দরুণ তাঁদের যে হয়রানি ও ব্যবসার সুনাম নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ চেয়ে অনলাইন সংস্থাটিকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।
বারো বছরের পুরনো শান্তনুবাবুদের সংস্থা অনলাইন টিকিটের বাজারে পরিচিত নাম। মার্কিন শেয়ার বাজার ন্যাসডাকে নথিভুক্তও বটে। তবু এমন বিভ্রাট?
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীমহলের একাংশের ব্যাখ্যা: অনলাইন টিকিটের বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত গোলমাল পুরোপুরি এড়াতে যে ধরনের প্রাযুক্তিক নৈপুণ্য জরুরি, তা এখনও অমিল। বছর দুয়েক আগে রেলের অনলাইন টিকিটেও এমন কিছু গণ্ডগোল ঘটেছিল। যেমন, রুট পাল্টানোর দরুণ যে স্টেশনে ট্রেন আর আসে না, অনলাইনে তার টিকিটও বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। পকেটে সেই ‘কনফার্মড’ টিকিট নিয়ে স্টেশনে এসে যাত্রী জানতে পারেন, ট্রেনের রুট বদলে গিয়েছে! “তেমন বিপত্তি উড়ানেও হওয়া আশ্চর্য কী?” মন্তব্য এক পর্যটন-ব্যবসায়ীর। |