যোগমায়াদেবী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ওই কলেজেরই প্রাক্তনী। তবে এর জন্য কলেজকেও লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও যোগমায়াদেবী কলেজের অধ্যক্ষা গার্গী নাথ জানিয়েছেন, ওই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার কোনও ভাবনা-চিন্তা এখনও তাঁদের নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু প্রসঙ্গটি তুলেছেন, তাই বিষয়টি পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচিত হবে। ব্যক্তিগত ভাবে গার্গীদেবী মনে করেন, যোগমায়াদেবী, আশুতোষ এবং শ্যামাপ্রসাদ (একই ভবনে চলা তিন কলেজ) নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। ওই তিনটি কলেজের মিলিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি।
শুক্রবার যোগমায়া দেবী কলেজের ৮০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে এই কলেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কলেজের সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান করার উপরেও জোর দেন তিনি। তবে কাউকে মেরে, গুলি করে জমি কেড়ে নেওয়া তাঁর সরকারের নীতি নয়। এ ব্যাপারে কলেজকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে তিনি জানান। ওই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই মমতা বলেন, “কে জানে যোগামায়াদেবী কলেজ কোনও দিন বিশ্ববিদ্যালয় হবে কি না?’’
মমতা অবশ্য একটা কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কেবল নিজে পড়েছেন বলেই তিনি যোগমায়াদেবী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাইছেন না। কলকাতা বা যাদবপুরের উপরে চাপ কমানোটাও তাঁর লক্ষ্য। “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর কত চাপ নেবে? যাদবপুরের উপরেই বা আর কত চাপ বাড়বে,” বলেছেন মমতা। |
সম্প্রতি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে প্রেসিডেন্সি। শিবপুর বিই কলেজ উন্নীত হয়ে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু) হয়েছে আরও আগে। সেন্ট জেভিয়ার্সও বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু সবগুলিই এ রাজ্যের প্রথম সারির কলেজ। যোগমায়াদেবী কলেজকে উৎকষের্র বিচারে এদের সঙ্গে একাসনে বসানো যায় কি না, তা নিয়ে কিন্তু শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে।
প্রশ্নের শেষ এখানেই নয়। যোগমায়াদেবী কলেজের সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার জোগান দেওয়া যে রাজ্য সরকারের পক্ষে সহজ নয়, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ দিন তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এই ব্যাপারে প্রাক্তনীদের এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন তিনি। শেষমেশ নিজের কলেজের উন্নয়নে এ দিন ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দিলেও তিনি জানাতে ভোলেননি যে, বেতন দিতেই এখন রাজ্য সরকারের কষ্ট হচ্ছে। তার অর্থ হল, যোগমায়াদেবী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই হবে। তখন তার খরচ জোগাবে কে? মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে তা স্পষ্ট হয়নি।
সাম্প্রতিক কালে রাজ্য সরকার যে ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই পরিকাঠামোর হাল খুব ভাল নয়। উদাহরণ, বারাসতের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়ার সিধো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলি বাম আমলের শেষ দিকে তৈরি হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মতে, কাজে গতি না আসার অন্যতম কারণ টাকার অভাব।
বর্তমান সরকারও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ঘোষণা করেছে। যেমন, বর্ধমানের চুরুলিয়ায় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোচবিহারে মনীষী পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়। কোনও ক্ষেত্রেই পরিকাঠামো গড়ার কাজ খুব একটা এগোয়নি। যদিও এ দিনই শেষোক্ত এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপিকা অনুরাধা মুখোপাধ্যায় এবং মনীষী পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হচ্ছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ রায়। |