ঢালাও আর্থিক লেনদেনের কারণেই শহরে একের পর এক অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে বলে এবার অভিযোগ তুলল বিজেপি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআইয়ের মতো দলগুলি। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের প্রবীণ নেতৃত্বের একাংশও ইতিমধ্যে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করার ক্ষেত্রে পুরসভার গড়িমসি মনোভাব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। এর পর আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিব্রত শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা আর্থিক নেলদেনের অভিযোগ মানতে নারাজ। বিজেপি’র জেলা সাধারণ সম্পাদকদের অন্যতম নন্দন দাস বলেন, “শহরে অবৈধ বিল্ডিং রোখার ক্ষেত্রে পুরসভার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। পরিস্থিতি যা তাতে অবৈধ নির্মাণে মদত দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শহরের মানুষ সব দেখছেন। আগামী নির্বাচনে অর্থলোভীদের মানুষ পরাস্ত করবেন।” নন্দনবাবুর মতো কয়েকজন বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মেয়র বিশেষ অনুমতি দিয়েছেন কেন সেটাই বুঝতে পারছেন না। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা ওই নির্মাতাদের আবেদনের উপর ‘নোট’ দিয়ে নির্মাণ কাজ করতে সুপারিশ করেছেন বলে শুনেছি। দুই দলের আরও কয়েকজন নেতার নাম উঠে আসছে। এর পিছনে কী উদ্দেশ্য আছে তা স্পষ্ট করা দরকার।
সিপিআই(এমএল)লিবারেশনের জেলা নেতৃত্বের অন্যতম অভিজিৎ মজুমদারের সাফ কথা, “অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের সন্দেহ তো রয়েইছে। তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। পুর কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-তৃণমূলের অভ্যন্তরে কোন্দল চলছে। বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়া থেকে অবৈধ নির্মাণ সব ক্ষেত্রেই তার প্রভাব পড়ছে।” নিয়ম না মেনে বহুতল তৈরির জন্য শহরের পার্কিং ব্যবস্থার অভাব, ভূগর্ভস্থ জল সমস্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। পুর কর্তৃপক্ষ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মা বলেন, ‘‘আর্থিক লেনদেন নিয়ে কোনও রকম অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তেমন কিছু হচ্ছে বলে মনে করি না। তবে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। সে কারণে অভিযান শুরু করেও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করা যায়নি।” পাশাপাশি, তিনি শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে বিনা নকশায় বাণিজ্যিক ভবন তৈরির আবেদনে ‘নোট’ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও আইন মেনে করার পক্ষপাতি বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা কংগ্রেস নেত্রী সীমা সাহা অবশ্য জানিয়েছেন, পদ্ধতিগত সমস্যার কথা। তিনি বলেন, “ভাঙার নোটিশ পাঠানোর পরে অনেকে চিঠি পাঠিয়ে বাড়িতে রোগী রয়েছে বলছেন। নানা ভাবে অনুরোধ করছেন। পদ্ধতিগত ভাবে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সে সব অনেক ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে। তবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
এসইউসি জেলা সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্য জানান, এই শহর পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে উঠেছে। তাঁর অভিযোগ, “শহরে একশ্রেণির প্রোমোটর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তাঁরা। শহরবাসী এক দিন সমবেতভাবে প্রতিবাদে সরব হবেন। কারণ, পুর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিলেন শহরের অবৈধ নির্মাণগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। সেগুলি ভেঙে দেওয়া হবে। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই প্রোমোটারদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠলে তা ভিত্তিহীন বলে দিলে চলবে না। অভিযোগ ঠিক নয়, সেটা প্রমাণ করতে হল বেআইনি ভবন ভাঙতে হবে।” |