বাঁধ ভেঙে গত শুক্রবার রাতে প্লাবিত হয়েছিল হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের সর্দারপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার বিকালে শুরু হয়েছে বাঁধ মেরামতির কাজ।
কালীপুজোর সময় অমাবস্যার ভরা কোটালের জন্য রায়মঙ্গল নদীর জল বাড়ে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সর্দারপাড়া এলাকায় বাঁধের অবস্থা কয়েক বছর ধরেই খারাপ। কিন্তু বাঁধের ধারের বেআইনি মেছোভেড়ি থাকার কারণে বাঁধ মেরামতি করা যায়নি দীর্ঘদিন। এই অভিযোগ মেনে নিয়ে যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রতন মণ্ডল বলেন, “এই এলাকা একফসলি। ফলে কিছুটা উপার্জনের আশায় বাঁধ লাগোয়া জমির মালিকেরা তাদের জমি মাছচাষের জন্য লিজ দেন। মেছোভেড়ি থাকার কারণেই ওই বাঁধ সংস্কার করা যায়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি ওই এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে। ফলে মেছোভেড়িগুলি আর থাকবে না।”
সর্দারপাড়ার পঞ্চায়েত সদস্য আরতি সিংহ বলেন, “এখানে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির জন্য জমি দরকরা। এ জন্য প্রতি বাড়িতে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর এ ব্যাপারে শুনানি হবে।” |
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিৎ বসু বলেন, “সর্দারপাড়া-সব সুন্দরবন এলাকায় নদীবাঁধের ধারে বেআইনি মেছোভেড়িগুলির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দুর্গতদের জন্য পলিথিন, খাবার পাঠানো হয়েছে।
এ দিন বিকেল থেকেই জল ঢোকা আটকাতে ‘রিং বাঁধ’ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সেচ দফতরের কর্মী হরিপদ মণ্ডল বলেন, “আপাতত এলাকায় যাতে আর জল ঢুকতে না পারে তার জন্য ১০০০ ফুট লম্বা রিং বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা যোগেশ সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের কোন বিকল্প রোজগারের উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে ভেড়ি মালিকদের কাছে জমি লিজ দিয়েছি।”
তবে সর্দারপাড়ায় বাঁধ সারাইয়ের কাজ শুরু হলেও কালিন্দী নদীর বাঁধ ফেটে জল ঢুকছে সাহেবখালি হাসপাতালের পাশে এবং চাঁড়ালখালি এলাকায়। ফলে ওই এলাকায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
এ দিন সর্দারপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্গতদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিলি করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন সিংহ, মোহন সিংহ, লিচু সিংহরা বলেন, “নির্দিষ্ট একটি জায়গায় খাওয়ার ব্যবস্থা করায় বয়স্কদের নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এর চেয়ে শুকনো খাবার দিলে ভাল হত।’’
সর্দারপাড়া ফেরিঘাটের বাঁদিকের বাঁধ ভাঙার পাশাপাশি ডানদিকের বাঁধের অবস্থাও শোচনীয়। যে কোনও সময় তা ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় পঞ্চায়েতের তরফে ১০০০ ফুট এলাকা জুড়ে বাঁশ, মাটির বস্তা ফেলে ভাঁদের একটু দূরে ফের আলাদা করে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। |