|
|
|
|
ভাড়া-বিভ্রান্তিতে কর্মীদের হেনস্থা, বাস বন্ধ হুগলিতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
বর্ধিত বাসভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তির আঁচ পড়তে শুরু করেছে জেলাতেও।
ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে গোলমাল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রবিবার সন্ধ্যা থেকে হুগলি জেলার সব ক’টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা করল বাস-মালিকদের সংগঠন। ফলে, হুগলি ছাড়াও হাওড়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরের গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা সঙ্কটে পড়তে চলেছে। কেননা, হুগলি থেকে ওই সব জেলায় বাস সংযোগ রয়েছে। আরামবাগ বা শ্রীরামপুর থেকে যাঁরা নিয়মিত বাসে কলকাতা যাতায়াত করেন, সমস্যায় পড়তে চলেছেন সেই সব যাত্রীও।
কয়েক দিন ধরেই হুগলিতে বাসকর্মীদের হেনস্থার অভিযোগ উঠছে এক শ্রেণির যাত্রীর বিরুদ্ধে। রবিবার আরামবাগের হরিণখোলায় এক কন্ডাক্টর মার খান। বাসুদেব ঘোষ নামে ওই কন্ডাক্টর হাসপাতালে ভর্তি। প্রতিবাদে বাসকর্মীরা অবরোধ করলে এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা তাঁদের মেরে তুলে দেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়া, কন্ডাক্টরের ব্যাগ কেড়ে নেওয়া, তাঁদের কান ধরে ওঠবোস করানো, কোথাও জামা ছিঁড়ে দেওয়া বা চড় মারার অভিযোগও উঠেছে।
শনিবার সকালে হাওড়ার বীরশিবপুর থেকে ৪০ নম্বর রুটের একটি বাস শ্রীরামপুরে আসছিল। রামপাড়ার কাছে কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বচসা হয় কন্ডাক্টর বিনোদ সাউয়ের। অভিযোগ, তাঁকে ও হেল্পারকে শম্ভু দাসকে হেনস্থা করেন ওই যাত্রীরা। এর জেরে শনিবারই শ্রীরামপুর থেকে ছাড়া চারটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রবিবার চুঁচুড়ায় জেলা বাস-মালিক সংগঠনের সভায় স্থির হয়, সরকার ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে স্পষ্ট ভাবে বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত জেলার ৪৭টি রুটের বাস বন্ধ রাখা হবে। বাস-মালিকেরা অন্য দূরপাল্লার বাসকেও জেলা ছুঁয়ে যেতে না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার তমলুকেও ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে হলদিয়া-মেচেদা রুটের একটি বাসের চালক ও কন্ডাক্টরকে মারধর করা হয়।
হুগলি জেলা বাস মালিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিক বলেন, “বর্ধিত ভাড়ায় সিলমোহর দিয়েছে সরকার। আমরা সেই ভাড়াই নিচ্ছি। কিন্তু কিছু যাত্রী তা না মেনে বাসকর্মীদের কটূক্তি থেকে মারধর কিছুই বাকি রাখছেন না। তাই বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। সব ঘটনাই পুলিশকে জানানো হয়েছে।” জেলার ৪৭টি রুটের প্রায় ২৩০০ বাস বন্ধ হয়ে গেলে আজ, সোমবার থেকে নিত্যযাত্রীদের চূড়ান্ত হয়রানির আশঙ্কা থাকছে। হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দ বলেন, “ওই সিদ্ধান্তের কথা জানি না। কেউ কিছু জানাননি। যদি এমন হয়, তা হলে সোমবার আরটিও-সহ সব অফিসারদের সঙ্গে বসব।”
বাস-মালিকেরা মনে করছেন, কলকাতার ক্ষেত্রে যে ভাবে বাসভাড়া নিয়ে রাজ্য গত শুক্রবার তালিকা প্রকাশ করেছে, জেলার ক্ষেত্রেও তেমন হলে সমস্যা হত না। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত ১১ নভেম্বর থেকে এই জেলায় বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হয়। কলকাতায় যে হারে ভাড়া বেড়েছে, জেলার হিসেব আলাদা। ২০০৭ সালে জেলায় শেষ বাসের ভাড়া বেড়েছিল। প্রথম চার কিলোমিটার পর্যন্ত ন্যূনতম ভাড়া ছিল ৪ টাকা। নতুন তালিকা অনুযায়ী প্রথম ৬ কিলোমিটারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ভাড়া হয়েছে ৬ টাকা। এর পর থেকে কিলোমিটার প্রতি ৫৫ পয়সা হারে ভাড়া বাড়ার কথা।
পরিস্থিতির জন্য বাস-মালিকেরা মূলত দুষছেন রাজ্যের বিবৃতিকে। শুক্রবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ভাড়া বাড়বে ১ টাকা করে। তিনি কলকাতার ক্ষেত্রেই ওই কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “পরিবহণ দফতর থেকে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, তাতে কিছু অসঙ্গতি আছে। প্রথম পর্যায়ে শুধু কলকাতার অসঙ্গতি দূর করলাম। জেলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অসঙ্গতি থাকলে তারও পরিবর্তন করে দেব।” জেলার বাস-মালিকদের একাংশের বক্তব্য, পার্থবাবুর ওই বক্তব্যেই বিভ্রান্তি ছড়ায়। জেলার বাস ভাড়ার ক্ষেত্রেও স্পষ্ট ভাবে সরকারের বলা উচিত ছিল বলে তাঁদের দাবি।
রবিবার সন্ধ্যায় পার্থবাবুর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। |
|
|
|
|
|