জয়ধ্বনি স্তিমিত, কাঁদছে লক্ষ লোকের ভিড়
নিয়ম মেনে মুখের রং বদল হচ্ছে বারো বছরের কিশোরটির।
সবুজ। হলুদ। লাল।
মুখের রং বদলাচ্ছে। বালাসাহেবের মুখ দেখবে বলে।
লাল তিলক আর সানগ্লাসে ঢাকা চেনা মুখটা দেখার প্রথম দাবিদার হতে চায় সে। রাত তিনটে থেকে মাতোশ্রীর সামনে ট্র্যাফিক আলোর পোস্টে চড়ে বসেছে। আলোর রং বদলাচ্ছে, কিন্তু রাস্তায় গাড়ি নেই। কাল রাত থেকে স্তব্ধ মুম্বই। মাতোশ্রীর দিকে ঠায় তাকিয়ে কিশোরটি।
আজ সকালে দর্শন দিলেন তিনি। ঘুমিয়ে ছিলেন। তাই হাত নাড়েননি।
ভিড়ে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। বালাসাহেব এগোচ্ছেন। দু’ধারে উড়ালপুলে, দোকানের চালে, গাছের ডালে, গলির কোণে, বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে, বারান্দায়, ছাতে-কার্নিসে লক্ষ লক্ষ লোক। জনসমুদ্রে সুনামি এসেছে।
সেনা-পতির শেষযাত্রায় ছেলে উদ্ধব। জনতা।
দোকানপাট বন্ধ। কালও হয়তো অনেক জায়গায় বন্ধই থাকবে। সরকার পরীক্ষাও বাতিল করে দিয়েছে। ভিড়ের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু আন্দাজ ছিল না, সে ভিড় এমন রেকর্ডভাঙা হবে। পুলিশের অনুমান, কম করে কুড়ি লাখ লোক। বালাসাহেবের গাড়ি এগোচ্ছে ইঞ্চির হিসেবে।
ঠিক ছিল, সকাল দশটা থেকে শিবাজি পার্কে মরদেহ রাখা হবে। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেই কাবার হয়ে গেল গোটা দিন। সাত কিলোমিটার পথ যেতে লেগে গেল সাত ঘণ্টা। চার দশক আগে যে শিবাজি পার্ক থেকে তাঁর দলের যাত্রা শুরু, আজ সেখানেই জীবনের যাত্রা শেষ করলেন বালাসাহেব। এই শিবাজি পার্কে দশমীর জনসভা ছাড়া খুব একটা বেশি মাতোশ্রী থেকে বেরোতেন না। জয়ললিতা, করুণানিধি, নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আঞ্চলিক দলের নেতারা নানা কারণেই দিল্লি যান। কিন্তু বালাসাহেবকে দিল্লিতে গিয়ে তদ্বির করতে খুব একটা দেখা যায়নি। মহারাষ্ট্রে থেকে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি করেই পেয়েছেন জাতীয় স্তরের নেতার মর্যাদা। আজ তাঁর অন্ত্যেষ্টিও হয়েছে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।
নিজে তেমন দিল্লি যাননি, কিন্তু দিল্লি থেকে নেতারা তাঁর অন্ত্যেষ্টিতে ছুটে এসেছেন। বিজেপির লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলি, সকন্যা সুষমা স্বরাজ, মেনকা গাঁধী, শাহনওয়াজ হুসেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রবীণ তোগাড়িয়া, এনসিপির শরদ পওয়ার, সুপ্রিয়া সুলে, কংগ্রেসের রাজীব শুক্ল। ছিলেন অমিতাভ-বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত, প্রিয়া দত্ত, নানা পটেকর, শিল্পপতি অনিল অম্বানীরাও।
আর ভিড়? পুলিশের আশঙ্কা ছিল, বালাসাহেবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হিংস্র হয়ে পড়বেন শিবসৈনিকরা। আশঙ্কা মিথ্যে হয়েছে। আম মুম্বইকররা বলছেন, এমন সুশৃঙ্খল ভিড় আগে দেখেনি এ শহর। মরদেহ নিয়ে গাড়ি যত এগিয়েছে, মানুষ ব্যাকুল হয়েছে এক বার শেষ দেখার জন্য। বাড়ির ছাতে-বারান্দায় বা উড়ালপুলে দাঁড়িয়ে ঝরঝরিয়ে কেঁদেছে। এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা বলছিলেন, স্বাধীনতার পরে মুম্বইয়ে সম্ভবত এই প্রথম কারও প্রকাশ্যে শেষকৃত্য হল। এর আগের নজির ১৯২০-র ১ অগস্ট বালগঙ্গাধর টিলকের শেষকৃত্য হয়েছিল গিরগাঁও চৌপট্টিতে।
অমিতাভ বচ্চন, অনিল অম্বানী । রবিবার মুম্বইয়ে।
শিবাজী পার্কে যে জায়গাটায় শিবসেনার দশমীর সভা হত, আজ সেখানেই রাতারাতি তৈরি করা বেদীতে সাজানো হয়েছিল বালাসাহেবের চিতা। চিতায় যখন আগুন জ্বলল, ‘বালাসাহেব অমর রহে’ স্লোগান উঠল বটে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ লোকের সম্মিলিত আওয়াজ যা হওয়ার কথা, তা নেই। কেন? কারণ ভিড়টা কাঁদছে। হাউ হাউ করে। ভয় নয়, ফতোয়া নয়। এই ভিড় স্রেফ আবেগের। ভালবাসার। আত্মীয়তার।
শিবাজি পার্কে বালাসাহেবের মূর্তি বসাতে চায় শিবসেনা। এ রাজ্যের রাজনীতির কারবারিরা বলেন, মহারাষ্ট্রে মরাঠিদের বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এই মানুষটি। যখন থেকে মহারাষ্ট্রে অ-মরাঠির ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল, যখন ক্রমশ জীবিকা হারিয়ে নিরাপত্তার অভাবে ভুগছিলেন ভূমিপুত্ররা, ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে মরাঠি ইস্যুটি স্পর্শ করেছিলেন বালাসাহেব। তাঁর দৌলতেই আজ সেই অস্মিতা নিয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। কিন্তু বালাসাহেবের পর কী হবে? এই আশঙ্কাই এখন যন্ত্রণা দিচ্ছে মরাঠিদের। হয়তো তাই শেষযাত্রাতেও তাঁরা আঁকড়ে রইলেন বালাসাহেবকেই।

ছবি: এপি, এএফপি


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.