|
|
|
|
চিতার পাশে দু’ভাই, তবু রইল প্রশ্ন |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • মুম্বই |
চিতার আগুনের আলোয় জ্বলজ্বল করছে পাশাপাশি দু’টি মুখ। দুই ভাইয়ের।
কোনও রকমে কান্না আটকে রেখেছেন উদ্ধব। আর ফুঁপিয়ে কাঁদছেন রাজ।
বেঁচে থাকতে দুই ভাইকে তো এক সঙ্গেই দেখতে চেয়েছিলেন বালাসাহেব। জীবনযুদ্ধের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়েও সে আশা ছাড়েননি তিনি। আজ মুম্বই তাঁদের দেখল। বাল ঠাকরের চিতার সামনে। আবেগে, চোখের জলে, হাতে হাত ধরে। অন্ত্যেষ্টির অনেক রীতিই করলেন এক সঙ্গে। হাত বাড়ালেন উদ্ধবই।
মুম্বইয়ে আজ মানুষের অবিস্মরণীয় ঢল। তার পিছনেও রয়েছেন উদ্ধব আর রাজ। দুই ভাইয়ের দলই আজ বালাসাহেবের জন্য ঝাঁপিয়েছে। কর্মীরা হাত ধরেছেন। এ বার কি নেতাদের পালা?
আজ সকাল সাতটায় মাতোশ্রীতে রাজের গাড়ি ঢোকার পর থেকেই প্রত্যাশার পারদটা চড়তে থাকে। এ বার কি দুই ভাই পাকাপাকি কাছাকাছি আসবেন? গত ক’দিন ধরেই মাতোশ্রীতে পড়ে রয়েছেন রাজ। ক’দিন আগে অসুস্থ উদ্ধবকে হাসপাতাল থেকে গাড়ি চালিয়ে বাড়িও নিয়ে এসেছেন। তিক্ততা তো অনেকটাই কেটেছে।
এ বারে? বালাসাহেবের স্বপ্ন পূরণের দায় তো দু’জনেরই!
কিন্তু না। বালাসাহেবের মরদেহ রাখা গাড়িতে উঠলেনই না রাজ! বাবার দেহ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জনসমুদ্র পেরিয়ে গোটা রাস্তা সফর করলেন সপরিবার উদ্ধব। |
|
বিদায়। বালাসাহেব ঠাকরের অন্ত্যেষ্টিতে বিহ্বল রাজ ঠাকরে। ছবি: পিটিআই |
আর রাজ? মাথা নিচু। কঠোর মুখে গাড়ির কিছুটা পিছনে হাঁটতে লাগলেন। বালাসাহেবের দেহ যখন দাদরের সেনা ভবনের দিকে এগোতে শুরু করল, তখন সোজা শিবাজি পার্কে চলে এলেন। অন্ত্যেষ্টি প্রক্রিয়ার তদারকি করতে।
ছবিটা বদলে গেল জনসমুদ্রের কুর্নিশ নিয়ে বালাসাহেব শিবাজি পার্কে পৌঁছলে। ভিআইপিদের থেকে শোকবার্তা নেওয়া থেকে অন্ত্যেষ্টির অধিকাংশ রীতি এক সঙ্গেই সারলেন দু’ভাই। সকাল থেকে কেঁদেই গিয়েছেন উদ্ধব। আর কঠোর মুখে দায়িত্ব সামলেছেন রাজ। কিন্তু বালাসাহেবের চিতার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাজ।
সকাল থেকে রাজ যে ভাবে একটি সুকৌশল দূরত্ব বজায় রেখে আসছিলেন, সন্ধ্যায় বালাসাহেবের চিতার সামনে তা স্রেফ ধুয়ে গেল। এ বার কি এক হবেন দু’জনে? শিবসেনার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কি সম্ভব একা উদ্ধবের পক্ষে? শেষ যাত্রার ভিড়েও প্রশ্নটা বারেবারেই ঘুরপাক খেল। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধবকেই তো দলের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন বাল ঠাকরে। মৃত্যুর আগে দশেরার সমাবেশেও উদ্ধব ও তাঁর ছেলে আদিত্যকে দেখার জন্য জনতাকে অনুরোধ করেছেন বালাসাহেব! তার পরেও সন্ধ্যায় আবেগে ভাসলেন রাজ! এ কি শুধুই বালাসাহেবের জন্য? না কি ভবিষ্যতে বালাসাহেবের স্বপ্ন পূরণের ভার নেওয়ার অঙ্গীকারও করে ফেললেন?
দু’দলের নেতারাই বলছেন, আজ বালাসাহেবের শেষ যাত্রাকে ঘিরে মানুষের ঢলকে উপেক্ষা করা বোকামি। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বালাসাহেব মরাঠীদের মধ্যে যে আশা জাগিয়েছিলেন, আজ তারই প্রতিফলন ঘটল। মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রে বালাসাহেবের প্রতি মানুষের আবেগ স্পষ্ট করে দিয়েছে শিবসেনার এখনও কতটা প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। কিন্তু সেই প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখবেন কে? উদ্ধব না রাজ? না কি দু’জনে একসঙ্গে? না কি অন্য কোনও দল কেড়ে নিয়ে যাবে এই প্রাসঙ্গিকতা? জবাব দেবে ভবিষ্যৎ। তবে মরাঠিরা বলছেন, এখানে আবেগ রয়েছে, জমি রয়েছে। দরকার তাকে লালন করা। আজকের ভিড়ে তো উদ্ধব ও রাজ দু’জনেরই মিলিত শক্তি ছিল। বালাসাহেবের প্রতি এই ভিড়ের সমান আবেগ রয়েছে। ফলে বিরোধীরা এই ভোটব্যাঙ্কে ছোবল মারার আগেই আবেগের ফসল সম্মিলিত ভাবে ঘরে তুলুক দুই ভাই।
প্রশ্ন হল, তা আদৌ হবে কি? বালাসাহেবে চিতার আগুনে কি দুই ভাইয়ের অহং পুড়ে ছাই হয়ে গেল? জবাব ভবিষ্যতের গর্ভে। |
|
|
|
|
|