|
|
|
|
ঘোষণা হয়নি, তবু আশায় কংগ্রেস |
মমতার অনাস্থায় ভোট
দেবে না সিপিএম
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
|
তৃণমূল কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভায় যদি গৃহীত হয় এবং ভোটাভুটির মতো পরিস্থিতি সত্যই তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে সিপিএম সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে না।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ব্যাপারে কোনও কথা না জানালেও কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের
কাছ থেকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পেয়েছেন। সিপিএম নেতারা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, বিজেপি-র সমর্থন ছাড়া মমতার পক্ষে অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ জন সাংসদকে পাশে পাওয়া কার্যত অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে বিজেপি-র মদতপুষ্ট কোনও অনাস্থা প্রস্তাবে বামেরা ভোট দেবে কী করে? সিপিএম নেতা বিমান বসু অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনাস্থা প্রস্তাব প্রসঙ্গে তাঁর দল কী করবে, তার জবাব এখনও সরাসরি দেননি। তাঁর বক্তব্য, ১৯ জন সাংসদ নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনাটাই অযৌক্তিক। একে রাজনৈতিক চমক ছাড়া অন্য কিছু বলতে তিনি রাজি নন। আদৌ লোকসভায় এটি গৃহীত হবে কি না, সেটা নিয়েই সিপিএমের প্রশ্ন রয়েছে। তাই এখনই আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে
রাজি নন সিপিএমের বিমান বসু, সীতারাম ইয়েচুরিরা।
শুধু সিপিএম নয়। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এখন মমতার অনাস্থা প্রস্তাবের হুঙ্কারের ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই অনেক বেশি নিশ্চিত যে, মুলায়ম সিংহ যাদব এবং মায়াবতীও এই অনাস্থা-র রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন। কারণ বিজেপি মমতার অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন করলেই তাদের সঙ্গে একই পংক্তিতে দাঁড়াতে অস্বস্তিতে পড়বেন মায়া-মুলায়ম।
সে ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্নে তারা সমস্যায় পড়তে পারে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, সিপিএম, মুলায়ম এবং মায়াবতীর কাছে থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর সরকারের আর আস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা করা উচিত নয়। মমতার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। রাহুল গাঁধী, আহমেদ পটেল, জয়রাম রমেশ, দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতাদের মত, কংগ্রেসের উচিত আপাতত চুপ করে থাকা। আস্থা প্রস্তাব আনার কোনও চেষ্টাই করা উচিত নয়।
বরং মমতা অনাস্থা এনে কংগ্রেসের উপকার করে দিয়েছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। এর ফলে বিরোধী শিবিরই দ্বিধাবিভিক্ত হয়ে যাবে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে। আর সেই কারণে কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন আস্থা প্রস্তাবের পথে না হেঁটে সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথকে দায়িত্ব দিয়েছেন মুলায়ম, মায়াবতী, জয়ললিতা, সিপিএম এমনকী ছোট দলগুলির নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা চালাতে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “মমতার অনাস্থা প্রস্তাব আনার মধ্যে তাঁর অভিপ্রায় স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ। তিনি কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেই সরকারের পতন চাইছেন। কিন্তু কৌশলগত ভাবে মমতা ভুল করলেন।” কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির ওই নেতার কথায়, “সিপিএম-সহ বাম দলগুলি খুচরো ব্র্যান্ডে বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সংসদে একটি প্রস্তাব এনেছে। যদি সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এবং সরকারকে ভোটাভুটি করতে বাধ্য করা হত, তা হলে কিন্তু কংগ্রেস অনেক বেশি সমস্যায় পড়ত। কারণ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গে গোটা সংসদের যেটা মতামত, মমতা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসায় তা লঘু হয়ে গেল। এফডিআই-এর প্রশ্নটাই পিছিয়ে গেল।” এফডিআই নিয়ে সংসদের ১৮৪ ধারায় বিতর্ক হলে সিপিএম শুধু না, জেডিইউ-এরও সামিল হওয়ার কথা। কিন্তু এখন মমতা-বিজেপি-র অনাস্থা প্রস্তাবে নীতীশও বাগড়া দিতে পারেন, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিক একই ভাবে ডিএমকে, যারা এফডিআই-এর বিরোধিতা করছে,
মমতার অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে তারাও ভোটদান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে।
ভারতের রাজনীতিতে কখনও কংগ্রেস বিরোধিতা কখনও বিজেপি বিরোধিতার রাজনীতি ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো এ দিক-ও দিক করেছে। জরুরি অবস্থা বা বোফর্স কাণ্ডের পরে কংগ্রেস বিরোধিতার ঝড় দেখা গিয়েছে। তখন অকংগ্রেসী দলগুলি একত্রিত হয়ে জোট বেঁধেছে। আবার বাবরি মসজিদ কাণ্ডের পর বিজেপি বিরোধিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। বিজেপি এখনও এক ধরনের রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতার শিকার। এই পরিস্থিতিতে মমতার অনাস্থা প্রস্তাব বিজেপি বিরোধিতার তাসকে ফের ব্যবহারের সুযোগ এনে দেবে বলে আশায় কংগ্রেস। কেন না এ দেশে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, আঞ্চলিক দলগুলি মিলে সরকার গড়লেও বিজেপি বা কংগ্রেসের ছাতার তলায় তাদের থাকতেই হয়।
মমতা চুপ করে বসে নেই। সৌগত রায়কে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন, অনাস্থার যে নোটিসটি দেওয়া হবে, তার ভাষা চূড়ান্ত করার। মমতার কথায়, “আমি একটা নীতিগত অবস্থান নিয়েছি। গোটা দেশের মানুষ কংগ্রেসের দুর্নীতি দেখে ক্লান্ত, বিরক্ত। গোটা দেশের মনোভাব হচ্ছে কেন্দ্রে পরিবর্তন আনার।” মমতা বলেন, “সিপিএম যদি অনাস্থা নিয়ে আসে, আমি তাকে সমর্থন করতে রাজি আছি। কিন্তু সিপিএম কংগ্রেসকে সব সময় বাঁচাতে চায়। তাই তারা অনাস্থা আনবে কি না, তাতে সংশয় আছে বলেই আমাকে আনতে হয়েছে।” তৃণমূল নেত্রীর আরও যুক্তি, “এখানে সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে বিষয়টার কোনও সম্পকর্র্ নেই। কেন না বিদেশি বিনিয়োগ কোনও ধর্মীয় বিষয় নয়। যেমন লোকপাল বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় আমরা অনেকেই এক সঙ্গে ভোট দিয়েছিলাম। তৃণমূল যে কখনই সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে আপস করবে না, এটা সবাই জানেন। কিন্তু এই সরকারকে যদি এখন কেউ বাঁচাতে চায়, তা হলে মানুষের কাছে তাদের স্বরূপই প্রকাশ পাবে। তবে আমি এখনও আশাবাদী, দুর্নীতির প্রশ্নে অন্তত কেউ আপস করবেন না। এ দেশে খুচরো ব্যবসায় লগ্নির ব্যাপারে ওয়ালমার্ট যে ঘুষ দিয়েছিল, সে কথা তো তারাই স্বীকার করছে।”
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে সিপিএম নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। কমলনাথ কথা বলবেন ইয়েচুরির সঙ্গে। কিন্তু সিপিএম একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে, তাদের কাছে এখন জাতীয় স্তরে কংগ্রেস বিরোধিতার চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বিরোধিতা আরও অনেক বেশি জরুরি। বরং অনাস্থা প্রস্তাবের রাজনীতিতে মমতাকে নিঃসঙ্গ করতে পারলে সিপিএমের লাভ অনেক বেশি। সীতারামের মতো নেতারা মনে করেন, গোটা দেশে সিপিএমের এখনই ব্যাপক উত্থানের সুযোগ কম। বরং সিপিএম যাতে পশ্চিমবঙ্গে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এগোনো প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|