তেহট্ট-কাণ্ড
অনেক রং দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী
তেহট্টে পুলিশের গুলি চালনার দু’দিন পরে তা নিয়ে মুখ খুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ওই ঘটনায় রং চড়ানো হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, ওখানে ‘ইচ্ছে করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে’। তবে তেহট্টে পুলিশ কেন গুলি চালালো, তা নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এর মধ্যেই ধীরে হলেও ছন্দে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে তেহট্ট। পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে সিপিএমের ডাকা এ দিনের তেহট্ট বন্ধ মোটামুটি নির্বিঘ্নেই কেটে যায়। বেলার দিকে কয়েক জন কংগ্রেস নেতা-সহ কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ঘটনাস্থলে যেতে গেলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।
এ দিন কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা পুলিশের এক অনুষ্ঠানে তেহট্টের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় রং চড়ানো হয়েছে। আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না।” ওই দিনের ঘটনার পিছনে ‘অনেক রং’ আছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ইচ্ছে করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনে রাখবেন, বিরোধী থাকাকালীন আমাদের কিন্তু এমন প্রবৃত্তি ছিল না।” মুখ্যমন্ত্রীর এ দিন যে ভাবে তেহট্টের ঘটনায় ‘চক্রান্তে’র ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ। বিরোধীদের অভিযোগ, “উনি যা বলেছেন, তাতে শান্তি-সহাবস্থানের পরিবর্তে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হবে।”

তেহট্ট নিয়ে আক্রমণাত্মক মমতা। নেতাজি ইন্ডোরের সভায়। ছবি: রাজীব বসু
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, দুবরাজপুরের লোবায় পুলিশের গুলি চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিনই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জেলা পুলিশ সুপারকে। তেহট্টের ক্ষেত্রেও কি তেমনই ‘শাস্তি’ অপেক্ষা করছে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তেহট্টের ওসিকে বদলে দিয়েছি। সেই সঙ্গে গুলিতে মারা গিয়েছেন যিনি তাঁর পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছি।” ওই দিনের ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্তেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ তথ্য অবশ্য এ দিন দুপুরেই মহাকরণে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “তেহট্টের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্ত হবে। তদন্তকারীর নাম জানিয়ে দু’এক দিনের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।” নিহতের পরিবারের এক জনকে চাকরির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসুদেব।
তেহট্টের হাউলিয়া মোড়ের ঘটনার পিছনে ‘চক্রান্ত’-এর ইঙ্গিত মিলেছে স্বরাষ্ট্রসচিবের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, “কেন এক পদস্থ পুলিশ কর্তাকে ফেলে অন্যেরা চলে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। দেখা হবে, ভিডিও ক্লিপিং। কোন দিক থেকে ওই ছবি তোলা হয়েছে, তা-ও খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, হাউলিয়ায় একটি জমি নিয়ে দু-দলের মধ্যে বিবাদ চলছিল। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় বিতর্কিত ওই জমিতে শিশুউদ্যান গড়া হবে। কিন্তু একাংশ তা মানছিলেন না বলেই তাঁর মন্তব্য।
পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে এ দিন তেহট্ট মহকুমা বন্ধের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তার মধ্যেই বেলায় কৃষ্ণনগর থেকে তেহট্ট যাত্রা করেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। কিন্তু জাভার কাছে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্রের সঙ্গে ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাৎ ছুটে আসেন জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা। ক্ষুব্ধ দীপাদেবীকে তাঁরা বোঝাতে থাকেন, তেহট্টে গেলে ‘উত্তেজনা ছড়াবে।’
দীপাদেবীদের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘‘তেহট্টে ১৪৪ জারি করা হয়েছে, প্রশাসনের এটা জানানো উচিত ছিল। শাসক দলের সুবিধার জন্যই এই ধারা জারি করা হয়েছিল।” তাঁর অভিযোগ, নির্দেশ ছিল ১০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ জারি করার। কিন্তু পরে ১৪৪ ধারার পরিধি ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১০০০ মিটার করে দেওয়া হয়। কংগ্রেসকে আটকাতেই এটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দীপার প্রশ্ন, “সকালে হাউলিয়া মোড়ে শাসক তৃণমূলকে মিছিল করতে দেওয়া হল কেন?” প্রশাসনের যুক্তি, তৃণমূলের মিছিলের কথা জানতে পেরেই এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর ‘অনুরোধে’ দ্রুত ওই মিছিল ভেঙেও দেওয়া হয়।
কলকাতা ফিরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে গিয়ে তেহট্টের ঘটনায় আহত সুধাময় ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। দীপা বলেন, “ছাদ থেকে গুলি চলেছিল বলে আমাকে জানিয়েছেন উনি (সুধাময়)।” আজ, শনিবার তেহট্টে যাওয়ার কথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর।
রাজনৈতিক এই দড়ি টানাটানির মধ্যেও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে নদিয়ার এই সীমান্ত-শহর। সিপিএমের ডাকা শুক্রবারের বন্ধে শুনশান রাস্তায় কদাচিৎ চোখে পড়েছে গাড়ি বা ভ্যান রিকশা। দোকানপাট, বাজার, ব্যাঙ্ক সবই ছিল বন্ধ। দিনভর শহরময় টহল দিয়েছে পুলিশ। তবে তার মধ্যেই আতঙ্কে ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে তেহট্টের দু’টি পরিবার। হাউলিয়ার তুফান ঘোষ ও সেন্টু নাথ।
হাউলিয়া মোড়ের ওই ঘটনায় নিজের ‘প্রাণ বাঁচাতে’ নিরাপদ জায়গা হিসাবে তুফান ঘোষের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন এসডিপিও শৈলেশ। গুলি ছোড়া হয়েছিল তাঁর বাড়ির ছাদ থেকেই। কিন্তু তার পর থেকেই তুফানবাবু আতঙ্কে ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাড়িতেই ছিলাম। গন্ডগোল হচ্ছিল বাড়ির সামনে। জনতার তাড়া খেয়ে ছুটতে ছুটতে আমার বাড়িতে বেশ কয়েক জন পুলিশ ঢুকে পড়েন। ছাদে উঠে তাঁরা গুলি চালাতে থাকেন। আমি ওই পুলিশকর্তাকে হাতজোড় করে বলি, স্যার, আপনি নেমে আসুন। দয়া করে আমার বাড়ি থেকে চলে যান।” এর পরেই এসডিপিও পিছনের দরজা দিয়ে চলে গিয়েছিলেন পাশেই সেন্টু নাথের বাড়িতে।
তুফান বলেন, ‘‘এর পর থেকে আমি সমস্যায় পড়েছি। লোকজন আমাকে দেখে নেবে বলে শাসাচ্ছে। পরিবার নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’ পূর্ত দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সেন্টু নাথ বলেন, ‘‘পুলিশের উচিৎ ছিল আমাদের বাড়ির সামনেও প্রহরা বসানো।’’ দিনান্তে নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র আশ্বাস দেন, ‘‘ওঁদের বাড়ির সামনে আমি এখনই পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিচ্ছি।’’
সন্ধ্যাতেও হাউলিয়ার সেই নির্জন গলিতে অবশ্য পুলিশের দেখা মেলেনি।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রশাসনিক তদন্ত ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত
হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের
কোনও প্রাক্তন বা বর্তমান
বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত।

আনন্দমার্গী হত্যায় এই
তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রশাসনের কারও
বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন
অফিসারকে দিয়ে তদন্ত।
দুবরাজপুরের লোবা গ্রামের
ঘটনায় এই তদন্ত হচ্ছে।
গুলিচালনা, হাজতে মৃত্যু,
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায়
ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে তদন্ত।

এই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে তেহট্টের ঘটনায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.