|
|
|
|
বাসে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিভ্রান্তি |
তমলুকে প্রহৃত বাসকর্মী, অবরোধ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
বাসভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তি চলছেই। কলকাতায় ন্যূনতম ভাড়া ৪ টাকা থেকে বেড়ে ৫ টাকা হলেও জেলায় তা ৬ টাকা। এ ছাড়া দূরত্বের সঙ্গে ভাড়াবৃদ্ধির হারও দু’ জায়গায় আলাদা। সরকার থেকে সুস্পষ্ট ভাবে এই নিয়ে ঘোষণা না করায় বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ। বাসে উঠলেই কন্ডাক্টরদের সঙ্গে গোলমাল বাধছে যাত্রীদের। শুক্রবার সকালে তমলুকের সোনাপেতায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে এই নিয়ে গোলমাল বাধলে হলদিয়া-মেচেদা রুটের একটি বাসের চালক ও কন্ডাক্টরকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বাসকর্মীরা প্রথমে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে অবরোধ করেন। সকাল ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ চলে। তমলুক থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দিলেও বাসকর্মীরা ফের নন্দকুমারে হাইরোডের কাছে অবরোধ করেন। দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও দিঘা-কলকাতা সড়কে সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাসমালিক সংগঠনের নেতাদের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলেও হলদিয়া-মেচেদা রুটে এ দিন আর বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করলে আগামিদিনে বাস চলাচল বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছেন বাসমালিকেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন হলদিয়া থেকে মেচেদার দিকে আসছিল বাসটি। সোনাপেতায় বাস থেকে কিছু যাত্রী নামেন। প্রথমে তাঁদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বচসা বাধে বাসের কন্ডাক্টরের। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই বচসায় যোগ দেন এলাকাবাসী। অভিযোগ, বচসা চলাকালীন বাসকর্মীদের মারধর করে রাস্তার ওপরেই ছোটানো হয়। |
|
৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র। |
পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকুমার বেরার অভিযোগ, “সোনাপেতায় নতুন হারে বাসভাড়া নেওয়া নিয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন বাসকর্মীদের আক্রমণ করেন। হলদিয়া-মেচেদা রুটের একটি বাসের চালক সনাতন দাস, কন্ডাক্টর স্বপন দাসকে মারধর করে আটকে রেখে দিয়েছিলেন তাঁরা। অন্য বাসের কর্মীরা জোট বেঁধে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে আনেন। এই নিয়ে পুলিশকে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেয়নি।”
পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তমলুক থানার পুলিশ জানিয়েছে, বাস ভাড়া নিয়ে সোনাপেতায় স্থানীয় কিছু বাসিন্দার সঙ্গে বাসকর্মীদের বিরোধ বেধেছিল। সেই সময় দু’দিক থেকে আসা বাসকর্মীরা বাস দাঁড় করিয়ে দেন। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায় এবং বাসিন্দাদের হঠিয়ে দেয়। বাসকর্মীদের মারধরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি কেউ।
এ দিকে, বাসভাড়া নিয়ে এই বিভ্রান্তিতে বিরক্ত সাধারণ মানুষ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিবহণ যাত্রী কমিটির মুখপাত্র নারায়ণ নায়েক বলেন, “২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে যে বাস ভাড়া বেড়েছিল, তাতে জেলায় সাধারণ বাসের ন্যূনতম ভাড়া ছিল প্রথম চার কিলোমিটারে ৪ টাকা, এরপর প্রতি কিলোমিটারে ৪০ পয়সা। এখন সাধারণ বাসের ন্যূনতম ভাড়া হয়েছে প্রথম ৬ কিলোমিটারে ৬ টাকা, এরপর প্রতি কিলোমিটারে ৫৫ পয়সা। অর্থাৎ ন্যূনতম ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে ৫০ শতাংশ হারে। আর তারপর প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৪০ শতাংশ হারে। কলকাতায় যেখানে ন্যূনতম ভাড়া হয়েছে ৫ টাকা, সেখানে জেলায় ৬ টাকা। যা মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ফলে গণ্ডগোল হচ্ছে।” বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে এসইউসি। দলের জেলা কমিটির সদস্য নন্দ পাত্রের অভিযোগ, ‘‘জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে রাজ্য সরকার যে হারে বাসভাড়া বাড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ জনবিরোধী। এর ফলে বাসযাত্রীদের অত্যধিক হারে ভাড়া দিতে হচ্ছে। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে যাত্রী প্রতিনিধিদের না ডেকে রাজ্য সরকার শুধু বাসমালিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে যে ভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা-ও জনস্বার্থ বিরোধী।” |
|
|
|
|
|