সম্পাদকীয় ২...
(অ)সাম্যবাদ
চিনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে নূতন নেতা শি জিনপিং পাঁচ বছর আগেই বিদায়ী প্রধান হু জিনতাও-এর উত্তরসূরি রূপে শনাক্ত হইয়াছিলেন। সেই হিসাবে তাঁহার অভিষেকের মধ্যে কোনও চমক নাই। সামাজিক স্তরবিন্যাসে কনফুসীয় আনুগত্যের অনুশীলনে অভ্যস্ত চিনা সমাজে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারও সর্বদাই মসৃণ ভাবে হাতবদল করে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ‘সদর-দফতরে কামান দাগা’র চেয়ারম্যান মাও ঘোষিত আহ্বান। কিন্তু মাও নিজেই সেই সদর-দফতরের শীর্ষ ব্যক্তি হওয়ায় তাঁহার অনুগামীদের বুঝিতে অসুবিধা হয় নাই, কাহার প্রতি চেয়ারম্যান ইঙ্গিত করিতেছেন। অষ্টাদশ পার্টি কংগ্রেসে অবশ্য সেই মাওয়ের নাম অনুচ্চারিত। চিনা কমিউনিস্ট পার্টিতে এখন কেবল দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার ডাক।
বিদায়ী দলপতি হু জিনতাও-এর মতোই নবনিযুক্ত দলপতি শি জিনপিং-এর কণ্ঠেও শুনা গিয়াছে এই আহ্বান, যে জিনপিং আগামী মার্চেই দেশের প্রেসিডেন্ট রূপেও শপথ লইবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চিন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। রাজনৈতিক প্রভাবেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পরেই তাহার স্থান। সম্ভবত সামরিক প্রস্তুতিতেও রাশিয়া হইতে খুব পিছনে নাই চিন। উপরন্তু কোটি-কোটি দরিদ্র চিনা পরিবারকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলিয়া আনা হইয়াছে। একই সঙ্গে চিনে কিন্তু বাড়িয়াছে অর্থনৈতিক অসাম্য। সম্পদের অসম বণ্টন এবং গরিব-বড়লোকের আয়ের ব্যবধান সাম্যবাদী চিনে যে-কোনও এশীয় দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এই ব্যবধান যে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করিতেছে, শ্রমজীবী চিনাদের সহিত পরজীবী পার্টি-কর্মকর্তা ও সরকারি আমলা-অফিসারদের জীবনযাপনে যে বৈষম্য ঘটাইয়া চলিয়াছে, বিভিন্ন অসন্তোষ, অস্থিরতা ও আন্দোলনের মধ্য দিয়া তাহা পরিস্ফুট। সেই সঙ্গে যুক্ত হইয়াছে তিব্বতি ও উইগুর সংখ্যালঘুদের তীব্র বেজিং-বিরোধী বিক্ষোভ। পার্টি কংগ্রেস শুরু হওয়ার দিন হইতে এ যাবৎ সাতজন তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু গায়ে আগুন লাগাইয়া আত্মঘাতী হইয়াছেন চিনা দমননীতির প্রতিবাদে।
পররাষ্ট্র নীতিতেও চিনের ‘সাফল্য’ তাহার প্রতিবেশীদের অশান্তির কারণ। দক্ষিণ চিন সাগর এবং পূর্ব চিন সাগরে জনমানবহীন কতকগুলি দ্বীপের দখল লইয়া জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন্স-এর সহিত সংঘর্ষ ঔপনিবেশিক যুগের যদৃচ্ছ প্রতাপবিস্তারকেই মনে পড়াইতেছে। স্বভাবতই প্রতিবেশী দেশগুলিতে উদ্বেগ অন্তহীন। কমিউনিস্ট পার্টির নূতন নেতৃত্ব সেই উদ্বেগ দূর করিতে উদ্যোগী হইবেন, এমন ইঙ্গিত নাই, যেমন নাই দেশের শাসনপ্রণালীর গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তনের কিংবা সংখ্যালঘু-সহ সকল নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি। একদলীয় কমিউনিস্ট স্বৈরাচারের বর্মে আপাদমস্তক আবৃত চিন এখনও একবিংশ শতকের উপযুক্ত রাজনৈতিক বহুত্ববাদে উন্নীত হইতে প্রস্তুত নয়। অন্তত নয়া চিনা নেতৃত্বের তেমন কোনও অভিপ্রায় নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.