সম্পাদকীয় ১...
সি এ জি: কী ও কেন
ণতান্ত্রিক দেশে জমাখরচের পাইপয়সার জন্য সরকার জনসাধারণের নিকট দায়বদ্ধ। সেই দায় যথাযথ ভাবে পালিত হইতেছে কি না, তাহার প্রাথমিক তদারকি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারাল-এর কাজ। সুতরাং গণতন্ত্রের অন্যতম নজরদার হিসাবে সি এ জি’র পদ তথা প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ কাজ যাঁহারা করেন, একটি বিষয়ে তাঁহাদের সতর্ক থাকিতে হয়। অনেক সময় তাঁহারা নিজেকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়া ফেলেন। বর্তমান সি এ জি সম্ভবত নিজের ভূমিকার সীমারেখাটি ভুলিয়া গিয়াছেন। তিনি হিসাবপরীক্ষক, বিচারক নহেন, রাজনীতিক নহেন, জনপরিসরে সরকারের সমালোচনার ভারপ্রাপ্ত বিদ্বজ্জনও নহেন। বস্তুত, তাঁহার পদটির নৈতিক দাবিই এই যে, আপন নির্দিষ্ট কর্তব্য সম্পাদনের বাহিরে তাঁহাকে শতকরা একশো ভাগ সংযম পালন করিতে হইবে। অথচ বিনোদ রাই মহাশয় সরকারের প্রতি তাঁহার উষ্মা জনসমক্ষে প্রকাশ করিতেছেন, বলিতেছেন, যে নির্লজ্জতার সহিত ইউ পি এ ’র প্রথম পর্বে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছিল, তাহা ভয়াবহ। ‘আমাদের সকলকেই’ জবাবদিহি করিতে হইবে এমন বিবেকী চেতাবনিও তাঁহার কণ্ঠে ধ্বনিত হইতেছে। তাঁহার কথা ভুল কি ঠিক, তাহা প্রশ্ন নহে। তাঁহার এই ধরনের মন্তব্য উচ্চারণ করাই উচিত নয়। এ দেশে এমন অসংযমী উচ্চারণ অহরহ শোনা যায়, রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিক হইতে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি অবধি এমন কথা বলেন যাহা অনুক্ত থাকিলেই শোভন হইত। নিয়মতান্ত্রিক সমাজ দাঁড়াইয়া থাকে তাহার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যথাযথ আচরণের উপর। অসংযম নিয়মতান্ত্রিকতার বড় শত্রু।
সি এ জি সম্পর্কে অন্য প্রশ্নও আছে। যে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন সম্পর্কে সি এ জি’র তীব্র সমালোচনা ইতিমধ্যে ঐতিহাসিক ভূমিকা লইয়াছে, সে ক্ষেত্রেও তাহার হিসাব-পদ্ধতি লইয়া গভীর সংশয়ের কারণ আছে। স্পেকট্রাম লাইসেন্সের প্রাপক নির্ধারণে দুর্নীতি ঘটিয়া থাকিলে তাহা চিহ্নিত করা নিশ্চয়ই হিসাবপরীক্ষকের কর্তব্য। কিন্তু নিলাম না ডাকিবার ফলে সরকারের এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার কোটি টাকা লোকসান হইয়াছে এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বাস্তবে এই পরিমাণ লাইসেন্স-ফি আদায়ের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। টুজি স্পেকট্রাম লাইসেন্সের পুনর্বণ্টনে যে অতি অল্প টাকা উঠিয়াছে, তাহা সেই অযৌক্তিকতাকেই চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দেয়। শুধু তাহাই নহে। নিলামই যে স্পেকট্রাম বা অনুরূপ কোনও সীমিত সম্পদের লাইসেন্স বণ্টনের একমাত্র পথ, এবং নিলাম ডাকিলেই সরকারের বিপুল আয় হইবে এই ধারণা বা অনুমানের পক্ষে কোনও যুক্তি নাই। এমন অনুমান বা নীতিনির্ধারণের চেষ্টা না করিয়া সি এ জি হিসাব পরীক্ষার কর্তব্যে মনঃসংযোগ করিলেই মঙ্গল।
পাশাপাশি, সরকার এবং বিরোধী, দুই তরফের রাজনীতিকরাই সি এ জি নামক প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না করিলেই গণতন্ত্রের উপকার হইবে। বিরোধীদের বোঝা দরকার, অডিট রিপোর্ট বেদবাক্য নহে। সংসদীয় কমিটিতে তাহার পর্যালোচনার নিয়মটি এই প্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়মটিকে মান্য করা দরকার, সরকারি দফতর বা সংস্থার কোনও বক্তব্য বা প্রতিযুক্তি থাকিলে তাহাও শোনা দরকার। তাহার পরিবর্তে সি এ জি’কে সরকার-বিরোধিতার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হইতেছে। ইহা দুর্ভাগ্যজনক। সমান দুর্ভাগ্যজনক সরকারি আচরণ। সি এ জি কোনও বিষয়ে প্রশ্ন তুলিলে তাহার তথ্যনিষ্ঠ জবাব দেওয়াই যথেষ্ট, সি এ জিকে প্রতিপক্ষ হিসাবে খাড়া করিয়া বিরোধীদের মহড়া লইবার চেষ্টা বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়, গণতান্ত্রিকতার লক্ষণও নয়। তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে সরকারি অকর্মণ্যতা, বিশেষত দুর্নীতির প্রতিকারে তৎপরতার অভাব। এই কারণেই সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হইতেছে। সরকার সি এ জি’র বক্তব্য খণ্ডনে সুযুক্তি পেশ করিলেও তাহা অজুহাতের মতো শুনাইতেছে। সি এ জি’র পদে এক জনের বদলে তিন জনকে আনিবার প্রস্তাবও সি এ জিকে ‘দমন’ করিবার অপচেষ্টা হিসাবে নিন্দিত হইতেছে। একটি হিসাবপরীক্ষকের পদ যখন কলহপরায়ণ রাজনীতির উপকরণ হইয়া ওঠে, তখন গণতন্ত্রের সুসময় নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.