আদিলুর হত্যাকাণ্ড
রঞ্জনকে উপেক্ষা, আবার ভাঙনের মুখে এনডিএফবি
ড়ো জঙ্গিদের বিবৃতিতে উদ্ধৃত ‘তৃতীয় শক্তি’ কি সংগঠনের ভিতরেই সক্রিয় নাকি তা বাইরের কোনও শক্তি, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
শিল্পপতি ও চা-বাগান মালিক, আদিলুর রহমানের হত্যা ফের সেই প্রশ্নই উস্কে দিয়েছে। পুলিশের একাংশের ধারণা, কার্যত দলের সংগ্রামপন্থী শাখার উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন খোদ রঞ্জন দইমারি। সেই সুযোগে, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের আদেশ ছাড়াই অর্থ ও অস্ত্রের লোভে, ইচ্ছেমতো হানাদারি চালাচ্ছে এনডিএফবির একাংশ। গত বছর, ছ’জন বাঘ শুমারিকর্মীকে মানস থেকে অপহরণ করেছিল এনডিএফবি। সে বারেও রঞ্জন-সহ দলীয় নেতাদের অন্ধকারে রেখে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল বলে জানা যায়। একই ঘটনা ঘটেছে আদিলুর রহমানের ক্ষেত্রেও। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এনডিএফবি তৃতীয়বার ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে।
গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি, মানস জাতীয় উদ্যানে বাঘসুমারি চলাকালীনই উল্টাপানির জঙ্গল থেকে জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হয়েছিলেন ডব্লিউডব্লিউএফ-এর ছয় স্বেচ্ছাসেবী-সুমারিকর্মী। এঁদের মধ্যে তিনজন মহিলা। ঘটনার পরেই বড়োল্যান্ড স্বশাসিত পরিষদের উপ-প্রধান খাম্পা বড়গোহারি ঘটনাস্থলে যান। পশুপ্রেমী সংগঠনের কর্তা ও বনকর্তারাও আসেন। তবে অপহৃতদের ক্ষতি হওয়ায় আশঙ্কায় সেনা বা পুুলিশ অভিযানের পথে না হেঁটে জঙ্গিদলের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা বেছে নেওয়া হয়েছিল। বনবিভাগ ও বড়োল্যান্ড কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, সংগ্রামপন্থী এনডিএফবি সদস্যরাই ছ’জনকে আটক করে রেখেছিল। কিন্তু, এনডিএফবি (রঞ্জনপন্থী) নেতারা বলেন, ঘটনার পিছনে তাঁদের হাত নেই। পরে মোটা টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছয় সুমারিকর্মীর মুক্তি মেলে। যদিও টাকার ব্যাপারটি ডব্লিউডব্লিউএফ বা পুলিশ সরকারিভাবে স্বীকার করেনি। এরপর, আরও তিনটি ক্ষেত্রে এনডিএফবি প্রধান রঞ্জনের অনুমতি ছাড়াই হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে ক্যাডাররা। এই বছর কোকরাঝাড়, বঙ্গাইগাঁও, চিরাং-এর জনজাতি সংঘর্ষে, বহু বার স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে বড়ো জঙ্গিদের গুলি চালাবার ঘটনা ঘটেছে। চলেছে লুঠতরাজ।
তারপরেও তাদের সহকারী প্রচার সচিব দাবি করেন, এই সব ঘটনায় তাঁদের কোনও সদস্য জড়িত নয়। শেষতম সংযোজন আদিলুর রহমানের হত্যাকাণ্ড। এ ক্ষেত্রে তোলা চেয়ে না পেয়ে রঞ্জন তথা সংগ্রামপন্থী নেতৃত্বের সরাসরি নির্দেশ ছাড়াই এনডিএফবি জঙ্গিদের একাংশ আদিলুরের উপর হামলা চালায়। তাঁরা আদিলুরকে চিনতও না। এক হঠকারী আক্রমণের বলি হন তিনি। এনডিএফবি (রঞ্জন) এক বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করে, রঞ্জনের নেতৃত্বে তারা আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের জঙ্গিরা হত্যা, রক্তপাত থেকে বিরত আছে। আদিলুরের হত্যাকাণ্ড বা কোকরাঝাড় সন্ত্রাস ‘তৃতীয় শক্তি’র কাজ।
গোয়েন্দারা বলছেন, সেই তৃতীয় শক্তি দলের ভিতরেই সক্রিয়। ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবরের পরে ফের ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে এনডিএফবি। ২০০৮ সালে ধীরেন বড়োকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছিল এনডিএফবির আলোচনাপন্থী গোষ্ঠী। শান্তি আলোচনা ও সভাপতি নির্বাচন না মেনে দল ছাড়েন রঞ্জন। চালিয়ে যান সশস্ত্র সংগ্রাম। ফলশ্রুতিতে গুয়াহাটি, কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁওতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ৯১ জনের মৃত্যু। ঘটে ভীমাজুলির হত্যাকাণ্ড, শোণিতপুর, কোকরাঝাড়ের গণহত্যা। ২০১০ সালের মে মাসে রঞ্জন গ্রেফতার হন। সেই থেকে কারাবন্দী তিনি। ইতিমধ্যেই রঞ্জন শান্তি আলোচনার পক্ষে মতও দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, রঞ্জনপন্থী এনডিএফবির সেনাধ্যক্ষ সিরসিং ইংতি ওরফে সংবিজিৎ আলোচনা চান না। তিনি ও উপ-প্রধান জি রিফিখাং অরুণাচলের গোপন ঘাঁটি থেকে রক্তপাত ও তোলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। ডব্লিউডব্লিউএফ স্বেচ্ছাসেবীদের অপহরণের পরে এনডিএফবির হুমকিতে, পাক্কে অভয়ারণ্য থেকে ভালুক পুনর্বাসন কেন্দ্রের পাততাড়ি গুটিয়ে রাতারাতি পালাতে হয় ডব্লিউটিআই কর্মীদের। উজানি অসম থেকে বড়োভূমি অবধি, ভাগে ভাগে সশস্ত্র ক্যাডার পাঠিয়ে তোলা তুলছেন সংবিজিৎ। কার্যত কারাবন্দী রঞ্জনের নেতৃত্বকে অস্বীকার করে, সংবিজিৎরা ইচ্ছে মতো এনডিএফবির একটি অংশকে চালাচ্ছেন। আইজি (আইন শৃঙ্খলা) এস এন সিংহ বলেন, “আদিলুর রহমানের উপর আক্রমণের ক্ষেত্রে সিরসিং ইংতি, বি বকোর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। ঘটনার পরে অরুণাচলে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে হত্যাকারীরা।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.