চিদম্বরম বনাম সুব্বারাও
সুদের পর সম্পর্ক তেতো ব্যাঙ্ক লাইসেন্স নিয়ে
ম্মুখ সমর। এক দিকে দুঁদে আইনজীবী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অন্য দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। সুদের হার কমানো নিয়ে গোলমাল চলছিলই। এ বার তাতে ঘৃতাহুতি। নতুন ব্যাঙ্ক খোলার জন্য বেসরকারি সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে সুব্বারাওকে চিঠি লিখেছিলেন অর্থমন্ত্রী। আজ প্রকাশ্যেই সেই দাবি খারিজ করে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। তাঁর দাবি, তার জন্য সবার আগে ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করুক সরকার।
শিল্পমহলের কাছে আর্থিক সংস্কারের বার্তা দিতে পি চিদম্বরম বেসরকারি সংস্থাকে নতুন ব্যাঙ্ক খোলার লাইসেন্স দিতে চাইছেন। এ জন্য অবিলম্বে নির্দেশিকা জারি করে ইচ্ছুক সংস্থাগুলির আবেদন গ্রহণের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন তিনি। কিন্তু আজ সেই দাবি কার্যত খারিজ করে দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। তাঁর বক্তব্য, এ জন্য আগে ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। সেই কাজ শেষ করুক অর্থ মন্ত্রক। চিদম্বরম সংসদে এই বিল পাশ করানোর বিষয়ে আত্মবিশ্বাস দেখালেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি মেনে কতটা তা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিগ্ধ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বিগত কয়েক মাস ধরে ঠিক এই ভাবেই অর্থ মন্ত্রকের সুদ কমানোর দাবি খারিজ করে আসছেন সুব্বারাও। তিনি বলছেন, আগে মূল্যবৃদ্ধির হারে লাগাম পরাক কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরে সুদের হার কমানো হবে। কিন্তু চিদম্বরম চাইছেন, সুদের হার কমিয়ে শিল্পের জন্য ঋণ সহজলভ্য করা হোক। তা হলেই আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে। কিন্তু সুব্বারাও এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। তাঁর সাফ কথা, মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৪৫ শতাংশে নেমে এলেও এখনও তা যথেষ্ট বেশি।
এই বিবাদ থামতে না থামতেই এবার নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে চিদম্বরম ও সুব্বারাওয়ের দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী যতই উদার আর্থিক নীতির ধ্বজা ওড়াতে চান না কেন, এ বিষয়ে বরাবরই রক্ষণশীল পথে হাঁটার পক্ষপাতী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর্থিক উদারিকরণের প্রথম দফায় নয়ের দশকে মাত্র ন’টি বেসরকারি সংস্থাকে ব্যাঙ্ক খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। গত এক দশকে এই লাইসেন্স পেয়েছে মাত্র দু’টি সংস্থাইয়েস ব্যাঙ্ক ও কোটাক মহীন্দ্রা। কিন্তু তার পর থেকেই এ বিষয়ে বাধা দিয়ে আসছেন সুব্বারাও ও তাঁর পূর্বসূরীরা। ২০১০ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় ফের নতুন সংস্থাকে ব্যাঙ্ক খোলার লাইসেন্স দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত দু’বছর ধরেই বলে আসছে, আগে আইনের সংশোধন করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নতুন ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হোক। তারপরে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হবে।
কেন এত রক্ষণশীল মনোভাব নিচ্ছেন সুব্বারাও? কেনই বা অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োজন? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের বক্তব্য, বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলি ব্যাঙ্ক খুলে নিজেরাই তাদের অন্য ব্যবসার জন্য সেখান থেকে যত ইচ্ছে ঋণ নিতে পারে। টাটা, আদিত্য বিড়লা, অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স গোষ্ঠী, শ্রীরাম গোষ্ঠীর মতো কর্পোরেট সংস্থা ব্যাঙ্ক খোলার লাইসেন্স পেতে আগ্রহী। সাধারণ মানুষের স্বার্থে যাতে ঘা না-পড়ে, তাই প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদ ভেঙে দেওয়া এবং ওই সব ব্যাঙ্কের মূল সংস্থাগুলির তহবিল খতিয়ে দেখার ক্ষমতা চাইছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর জন্যই আইনের সংশোধন প্রয়োজন।
কী বলছেন চিদম্বরম? তাঁর যুক্তি, আগে নির্দেশিকা জারি করে লাইসেন্সের জন্য আবেদন তো নেওয়া হোক। নতুন লাইসেন্স জারি হতে আরও ছয় থেকে আট মাস লাগবে। ব্যাঙ্ক চালু হলেও পরের দিনই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই সব ক্ষমতার প্রয়োজন পড়বে না। এমনিতেই অন্যান্য আইনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সব ক্ষমতা রয়েছে। আর এই শীতকালীন অধিবেশনে, খুব বেশি হলে বাজেট অধিবেশনেই সরকার আইন পাশ করিয়ে নেবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো এ বিষয়ে শিল্পমহলেরও সন্দেহ রয়েছে। কারণ বামেরা ব্যাঙ্কের বেসকারিকরণের বিরুদ্ধে। বিজেপি নীতিগত ভাবে সংস্কারের পক্ষে থাকলেও সরকারকে কৃতিত্ব দেবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আইন পাশ করে লাইসেন্স দেওয়া হলেও, গোটা বিশ্বেই যখন মন্দা চলছে, তখন ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করতেই বা বেসরকারি সংস্থাগুলি কতটা ইচ্ছুক হবে, সেই প্রশ্নও থাকছে। কারণ আর্থিক মন্দার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির খাতাতেও ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়ছে।
আগামী জানুয়ারি মাসে মেক্সিকোতে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন। চিদম্বরমের সঙ্গে অংশ নেবেন সুব্বারাও-ও। প্রশ্ন এখন একটাই। সেখানে গিয়েও কি দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকবে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.