এইচএফসিএল
আবাসনের হাল ফেরাতে উদ্যোগ, আশ্বাস চিঠিতে
রজা-জানালা ভাঙা। খসে পড়ছে পলেস্তারা। পানীয় জল মেলে না ঠিক মতো। ঝোপঝাড়ে ভরেছে আবাসন চত্বর। রাস্তার আলো জ্বলে না। রক্ষণাবেক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই। দুর্গাপুরের বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা দুর্গাপুরের হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচএফসিএল)-এর আবাসনের এমনই হাল। তবে কেন্দ্রীয় সার প্রতিমন্ত্রীর পাঠানো একটি চিঠিতে এই ছবি এ বার পাল্টানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এমনই দাবি করেছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক।
কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে অধিকাংশ শ্রমিক-কর্মীই আবাসন ছেড়েছেন। রয়ে গিয়েছে শ’দুয়েক পরিবার। অভিযোগ, ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা মেলে না আবাসনগুলিতে। এমএএমসি-র ধাঁচে টাউনশিপের একাংশ আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার (এডিডিএ) হাতে তুলে দিয়ে নাগরিক পরিষেবা সুনিশ্চিত করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন সাংসদ সাইদুল হক। শুক্রবার তিনি বলেন, “সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সার প্রতিমন্ত্রীর পাঠানো একটি চিঠিতে তেমন সম্ভাবনার কথাই জানানো হয়েছে।” তিনি জানান, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনা তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, টাউনশিপের আবাসন, রেলওয়ে সাইডিং, জল শোধনাগার ইত্যাদি অংশ এডিডিএ-র হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে এডিডিএ এবং সার মন্ত্রকের মধ্যে ইতিমধ্যে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। এমনকী এই সমস্ত সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের কাজও হয়ে গিয়েছে। এডিডিএ বা রাজ্য সরকারের সঙ্গে বসে দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংস্থাকে।
কারখানার আবাসন চত্বরে চরে বেড়ায় গবাদি পশুর দল।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর উদ্যোগে দুর্গাপুরে এইচএফসিএল গড়ে ওঠে ১৯৬৫ সালে। উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭২-এ। সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসাবে ন্যাপথা ব্যবহার করা হত। পরে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে দেখা যায়, ন্যাপথা ব্যবহারে ইউরিয়া উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে। তুলনায় বিদেশ থেকে কম দামে ইউরিয়া আমদানি করা যায়। ফলে ধীরে ধীরে কারখানাটি রুগণ্ হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা চলে যায় বিআইএফআর-এর অধীনে। কারখানার ১১২৫ জন শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেন।
স্বেচ্ছাবসর নেওয়া কর্মীদের অধিকাংশই আবাসন ছেড়ে চলে যান। কিন্তু রয়ে যায় ১৯৬টি পরিবার। ফাঁকা আবাসনগুলির দরজা, জানালা ভেঙে নিয়ে পালিয়েছে চোরেরা। রাতের দিকে অসামাজিক কাজকর্মও চলে বলে অভিযোগ। এত দিন কারখানার পক্ষ থেকে ১১ মাসের জন্য পরিবারগুলিকে আবাসনের লিজ দেওয়া হত। ইদানীং ৮ মাসের হিসেবে লিজ দেওয়া হয়েছে। আবাসনের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চিন্তা নেই ঠিকই, কিন্তু নাগরিক পরিষেবা বলতে মেলে না কিছুই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই বেশ কয়েক জন বলেন, “পুর এলাকায় থাকি। অথচ ন্যূনতম পরিষেবা পাই না।”
ঝোপঝাড়ে মুখ ঢেকেছে জীর্ণ আবাসন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এইচএফসিএল টাউনশিপে পরিষেবা দেওয়া কারখানা কর্তৃপক্ষের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ, সেটি একেবারেই কারখানার নিজস্ব টাউনশিপ। বন্ধ হয়ে যাওয়া আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি-র আবাসিকদের নিয়েও অতীতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট এমএএমসি-র কারখানা ও আবাসন আলাদা করে দেয়। আবাসনের দায়িত্ব পায় এডিডিএ। পরে সেখানে নাগরিক পরিষেবা দিতে এগিয়ে আসে পুরসভাও।
সাংসদ সাইদুল হক জানান, এমএএমসি আবাসনের মতো এইচএফসিএলের আবাসনে পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর আর্জিতে কেন্দ্রীয় সার প্রতিমন্ত্রীকে তিনি ২২ অগস্ট চিঠি পাঠান। তার জবাবেই প্রতিমন্ত্রী তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন। সাংসদ বলেন, “আশা করি এডিডিএ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবে। উপকৃত হবেন আবাসনের বাসিন্দারা।” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্র থেকে কোনও নির্দেশিকা এলে রাজ্য সরকারের পরামর্শ মতো পদক্ষেপ করা হবে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.