একে আয়তনে বড়, তায় মাওবাদী সমস্যাএরই মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে স্বাস্থ্য পরিষেবার যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে তা মোটের উপর সন্তোষজনক বলেই জানালেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। গত তিন দিনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (এনআরএইচএম) প্রকল্পের হালহকিকত স্বচক্ষে দেখেন ৫ সদস্যের এই দল। পরিদর্শন শেষে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন দলের সদস্যরা।
পরামর্শের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্প দ্রূত রূপায়ণ করা। যে এলাকায় জনসংখ্যা বেশি, সেখানে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজনের পরিবর্তে ২ বা ৩ জন নার্স দেওয়া। এ ক’দিনে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য শিবিরেও যান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। যেখানে ইসিজি, এক্সরে হচ্ছে দেখে সন্তুষ্ট হন। পোর্টেবল ইউএসজি যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেন। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “চিকিৎসা পরিষেবার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। তা মেনেই ভবিষ্যতে আরও কাজ করা হবে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রের কথায়, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সব কাজ শেষ হয়নি ঠিকই, তবে অনেক কাজই হয়েছে। আবার অনেক কাজ চলছে। আমরা যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তা বুঝতে পেরে প্রতিনিধি দল খুশিই হয়েছেন।”
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় যে সব পরামর্শ ওই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা দিয়েছেন, সেই সব কাজ করার সিদ্ধান্ত জেলার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই খোলামেলা আলোচনায় জেলা প্রশাসনের কর্তারা আর্জি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে যাতে রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেন। জেলার আয়তন ও মাওবাদী সমস্যার কথা মাথায় রেখে যাতে পশ্চিম মেদিনীপুরকে কেন্দ্র বেশি অর্থ মঞ্জুর করে, অন্য জেলার সঙ্গে এক পঙক্তিতে না বসায়, সেই আবেদনও জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, সময়ে টাকা খরচ করতে না পারলে সহজে টাকা মিলবে না।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, জেলার কয়েকটি হাসপাতালের মানোন্নয়ন, আশাকর্মী, নার্স, চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বছর দু’য়েক আগেই সাড়ে ২৯ কোটি টাকা পেয়েছিল এই জেলা। তার মধ্যে মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ করা গিয়েছে। ৪৫৭৫ জনের পরিবর্তে আশাকর্মী নিয়োগ করা গিয়েছে ৩৩৮৩ জন, ৮৫৮ জন অক্সিউলারি নার্সের পরিবর্তে নিয়োগ হয়েছে মাত্র ৭৪০ জন, জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করার কথা ছিল ৯৬ জন। হয়েছে মাত্র ৬৩ জন। ৫৪ জন আর সুপার স্পেশালিস্ট চিকিৎসক নিয়োগের কথা থাকলেও নিয়োগ করা গিয়েছে মাত্র ১ জনকে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, আশাকর্মী পেতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই প্রকল্পে চুক্তির ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের কথা। তাই সুপার স্পেশালিস্ট তো দূরের কথা, মেডিক্যাল অফিসারও মিলছে না। তাছাড়াও বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতেও ওই টাকা ব্যয় করার কথা। সেই কাজ চলছে। ওই কাজ তো পূর্ত দফতর করে। নানা কারণে সেই কাজে দেরি হওয়ায় পুরো টাকা খরচ করা যায়নি। তবে এ বার দ্রুত গতিতে সেই টাকা খরচ করার জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। |