স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে নতুন উদ্যোগ
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ রায়দিঘি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
জেলার আর-পাঁচটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতোই স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। ফলে উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন রোগীরা। এর বিহিত করতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হয়েছে এমনই ব্যবস্থা।
বর্তমানে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যাসংখ্যা ৫০টি। স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ৫ জন, চিকিৎসক ১৫ জন, নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন ৭ জন এবং সুইপার ৫ জন। নেই নিরাপত্তারক্ষী। নেই ধোবিখানার ব্যবস্থা। ৫০ শয্যার হলেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভর করে থাকেন মথুরাপুর-১ ও ২ ব্লক, জয়নগর, কুলতলি ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের একাংশের মানুষ। ফলে রোগীর চাপ থাকে যথেষ্ট। প্রতিনিয়ত একশোর বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগেও প্রতিদিন রোগীর চাপ যথেষ্ট। এই অবস্থায় ভর্তি-থাকা রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ নিয়ে রোগীদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও বাদানুবাদ ছিল রোজকার দৃশ্য। নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় যখন-তখন রোগীর পাশে পরিবারের লোকজনদের ভিড়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তেন চিকিৎসকেরা। কোনও ধোবিখানা না থাকায় দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর বিছানাতেই পড়ে থাকতে হত রোগীদের। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় সুইপার না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়েও সমস্যা ছিল।
রোগীর সেবায় ব্যস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: দিলীপ নস্কর
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোর এ হেন সমস্যা মেটাতে মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এবং ব্লক স্বাস্থ্য রোগীকল্যাণ বিভাগের পরিচালনায় মাস দুয়েক আগে এক পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঠিক হয়, স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্ব-রোজগার যোজনার মাধ্যমে বারো জন মহিলাকে নিয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাঁদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় রায়দিঘি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার। গত এপ্রিল থেকে ওই মহিলারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করছেন। তিনটি দলে ভাগ হয়ে, প্রতি দলে চার জন করে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেন তাঁরা। রোগীদের বিছানা পরিষ্কার করা থেকে জানালা-দরজা পরিষ্কার ও নিরাপত্তার কাজও করেন তাঁরা। পাশাপাশি প্রয়োজনে রোগীর সেবা-শুশ্রূষার কাজেও লাগানো হয় তাঁদের। ওই মহিলা কর্মীদের মধ্যে দীপালি ভাণ্ডারী, সন্ধ্যা চৌধুরী, মনসা পাইক ও পটু বৈরাগীরা বলেন, “প্রতিদিন সকালে এসে প্রায় একশো থেকে দেড়শোটি বেডকভার ধুতে হয়। সেই সঙ্গে রোগীদের পরিচর্যাও করতে হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লোকজনের অবাধ প্রবেশ আটকাতে গেটে পাহারা দেন দু’জন।”
মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংসমোহন কয়াল বলেন, “কয়েক মাস আগে জেলাশাসক এবং জেলা ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সম্মতিও ছিল।” তিনি আরও জানান, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই সব সমস্যা মেটাতে বিডিওই এই পরিকল্পনা করেন। তদানীন্তন বিডিও দেবর্ষি রায়ের বক্তব্য, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল, কিছু করা দরকার। তাই নতুন ভাবনা থেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মহিলাদের সার্বিক ভাবে কাজে লাগিয়েছি।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁদের তহবিল থেকেই এই কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। পরে স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁদের বেতন দেওয়ার বিষয়টি কার্যকর করা হবে।
বিএমওএইচ শিবশঙ্কর সর্দার বলেন, “স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব থাকায় ব্লক স্বাস্থ্য রোগীকল্যাণ সমিতি এই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরে এসেছে। রোগীকেও আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে।”
ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “আগে যিনি বিডিও ছিলেন তিনি স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে কর্মীরা যাতে স্বাস্থ্য দফতর থেকে বেতন পান সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী বলেন, “উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই কর্মীদের বেতন দেওয়ার বিষয়ে খোঁজ নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.