সাইকেলের ব্রেক গলায় ঢুকে স্বরযন্ত্র ও শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বছর বারোর মামনির। সে বছর ছয়েক আগের কথা। তার পর থেকে শ্বাস নিতে কষ্ট হত। কথা বলাও ছিল প্রায় বন্ধ। শেষ পর্যন্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের শল্য চিকিৎসক মনোজ মুখোপাধ্যায় নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কেনেন ‘ল্যারিংজেল কিল’ যন্ত্র। তিনিই মামনির অস্ত্রোপচার করেন। এখন মামনি নাক দিয়েই শ্বাস নিচ্ছেন। কথাও বলতে পারছেন। তবে ওই যন্ত্র আনানোর ব্যবস্থা কেন হাসপাতালের তরফে করা হল না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
সাইকেলের ব্রেকের রড ঢুকে গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের মল্লিকা রামগোপালপুরের স্কুল ছাত্রী মামনি ভুঁইয়ার গলায়। বাড়ির লোকজন তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর গলার নীচের দিকে, শ্বাস ও স্বরনালীর মাঝামাঝি একটি ফুটো করে দেওয়া হয়। সে ভাবে এত দিন ধরে শ্বাস নিচ্ছিলেন। |
হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মনোজ মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি যখন এসএসকেএম হাসপাতালে এমএস পাঠ্যক্রমের ছাত্র ছিলেন, তখনই স্কুলছাত্রী মামনিকে পরীক্ষার সুযোগ মিলেছিল। কিন্তু অর্থাভাবে রোগিণীর বাড়ির লোকজন ট্রেকিওস্টমি অস্ত্রোপচার করাতে পারছিলেন না। পরে নানা হাসপাতাল ঘুরে সেপ্টেম্বরে মামনি ভর্তি হন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে মজুত ছিল না ‘ল্যারিংজেল কিল’ যন্ত্র, যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর ছিন্ন শ্বাসনালি ও স্বরযন্ত্রে ঢুকিয়ে রাখার কথা। মনোজবাবুর দাবি, “যন্ত্রটির দাম নেহাতই কম। মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে হল্যান্ডে তৈরি ওই যন্ত্র আমি আনাই মুম্বই থেকে। গত ৬ সেপ্টেম্বর আর তিন চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে ওই যন্ত্রের সাহায্যে ল্যারিংজিয়েল স্টেনোসিস করি। ওই যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাসনালীতে বসিয়ে দেওয়া হয় একটি সিলিকার তৈরি নল। নলটি বৃহস্পতিবার খুলে নেওয়া হয়েছে। মামনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস নিতে ও কথা বলতে পারছেন।”
প্রশ্ন হল, চিকিৎসক নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে যে যন্ত্র আনালেন, তা আনানোর ব্যবস্থা হাসপাতাল করল না কেন? ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষের বক্তব্য, “ওই যন্ত্রটি যে ওঁদের লাগবে, তা মাত্র কয়েক দিন আগে ইএনটি বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে।” সুপার অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “আমাদের হাসপাতালে আগে থেকেই অনেক যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই বিক্ষিপ্ত ভাবে একটি-দু’টি অস্ত্রোপচারের জন্য যন্ত্র আনাতে আমরা এই মুহূর্তে রাজি নই।” ডেপুটি সুপার যোগ করেন, “ইএনটি বিভাগ যদি বলে, ভবিষ্যতে ধারাবাহিক ভাবে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করবে, তবে ওই যন্ত্র আমরা আনিয়ে নেব।”
মামনির বাড়ির লোকেদের অবশ্য সরকারি নিয়মে এই সব জটিলতা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। জেঠিমা মল্লিকাদেবীর কথায়, “আমাদের মেয়েকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে ওই হাসপাতাল। ডাক্তার নিজের টাকায় যন্ত্র না আনালে কি আর ও সুস্থ জীবনে ফিরতে পারত?” |