বন্ধ চা বাগানে তীব্র সঙ্কট
মরতে অনুমতি দিন, মমতাকে চিঠি দুখনিদের
খাদ্য কুখাদ্য খেয়ে, রোগে ভুগে তিলে তিলে মরার চাইতে স্বেচ্ছামৃত্যু ভাল। তাই ‘ইচ্ছামৃত্যু’-র আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন দশ বছর বন্ধ-থাকা ঢেকলাপাড়া চা বাগানের ১৫ জন শ্রমিক। দুখনি লোহার, ফুলমতি রাউতিয়া, সুখদেও ওঁরাও, বন্ধনী কুম্ভারদের অধিকাংশেরই বয়স ষাটের কোঠায়। বয়স ৫৮ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁদের ভাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার ক্যুরিয়ারে পাঠানো এই চিঠি মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন কি না এখনও জানা যায়নি। তবে বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিডিও পেম্বা শেরপা চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যেই ডুয়ার্সের ওই চা বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলিতে শতাধিক সদস্যের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ মৃত্যুটি ঘটে গত সোমবার। চিকিৎসার অভাব, অপুষ্টিতে মারা যান ঢেকলাপাড়া বাগানের বিচ লাইনের বাসিন্দা শ্রমিক জগাইন নাইক (২২)।
পত্রলেখকদের অভিযোগ, বাগান বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের যে সরকারি ভাতা দেওয়া হয়, বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় ১২ জন এখন তা পাচ্ছেন না। বাকি তিন জনের নামই ওঠেনি ভাতা প্রাপকদের তালিকায়। বুনো কচু, শাক পাতা জোগাড় করে, চেয়েচিন্তে আনা চাল ফুটিয়ে কোনও মতে দিন গুজরান করছেন তাঁরা। ফুলমতি, দুখনিরা বলেন, “দিনের পর দিন এভাবে বাঁচতে চাই না। এর চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।”
দুখনি লোহার। ঢেকলাপাড়া চা বাগানের শ্রমিক।—নিজস্ব চিত্র
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক, এসডিও-র তরফে অবশ্য ওই ধরনের কোনও চিঠি মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। তবে বিডিও পেম্বা শেরপা বলেছেন, “১৫ জন বয়স্ক শ্রমিক স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন আমাকেও। আমি বিশদে খোঁজ নিয়ে যা করণীয় করব।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই চিঠির প্রেরকদের কী ভাবে সাহায্য করা যায়, সেই ব্যাপারে বিডিও অফিসে ইতিমধ্যেই বৈঠক হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য সন্দেহ করছেন, “কারও উস্কানিতে শ্রমিকরা ওই চিঠি লিখতে পারেন। বাম-আমলে ওই বাগানের শতাধিক বাসিন্দা অর্ধাহার-অনাহারে অসুস্থ হয়েছেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। আমরা যখন বাগান খোলানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছি, সেই সময়ে কেউ গরিব মানুষদের চিঠি দিতে উস্কানি দিয়ে থাকলে তা অন্যায়।” তিনি জানান, দুখনি, ফুলমতিদের চিঠি তিনি পাননি।
২০০২ সালের ২১ আগস্ট ঢেকলাপাড়া চা বাগান বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিরোধের কারণ দেখিয়ে মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যান। ওই বাগানের শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৬০৪ জন। বছর পাঁচেক আগে একজন নয়া মালিক বাগানটি কয়েক মাস চালিয়ে ফের বন্ধ করে দেন। ইতিমধ্যেই ওই বাগানের শ্রমিক পরিবারের শতাধিক সদস্যের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাম আমলে ওই বাগান খোলানোর জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও যে কাজের কাজ হয়নি সে কথা কবুল করেছেন প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী।
ঘটনাচক্রে, ক্ষিতিবাবু ও প্রাক্তন কারা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী এদিনই ঢেকলাপাড়ায় যান। সেখানে তাঁরা বলেন, “আমাদের অনেক ভুল ছিল। বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের জন্য কিছু করতে পারিনি। সেই ভুল স্বীকার করছি।” তবে ক্ষিতিবাবু জানান, স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। তাঁর দাবি, ঢেকলাপাড়া বাগান রাজ্য সরকারকে অধিগ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দিয়েছেন।
চিঠিতে সই করেছেন ৬১ বছর বয়সী দুখনি লোহার। স্বামী কষ্টু লোহার অসুস্থ। আগে দেড় হাজার টাকা সরকারি অনুদান প্রতি মাসে মিলত। তিন বছর ধরে কোনও টাকা পান না। কারণ, ৫৮ বছর হলে বন্ধ কারখানার ভাতা মেলে না। দুখনির সংসারে স্বামী ছাড়া ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। দুখনি বলেন, “রোজ জংলি কচু, চেয়েচিন্তে জোটানো চাল ফুটিয়ে খাই। সরকারি সুবিধা পাই না। তাই মরার জন্য অনুমতি চাওয়ার চিঠিতে সই করেছি।” একই কথা বলেন ৬০ বছরের ফুলমতি রাউতিয়া, ৬৮ বছর বয়সী সুখদেও ওঁরাও, বন্ধনী কুম্ভারের মত বয়স্করা।
কেন মরতে চাইছেন? ওঁরা বললেন, “অনেক অনুরোধ করেছি। ধরাধরি করেছি অনেককে। কাজ হয়নি। তাই মরার কথা লিখতে বাধ্য হলাম। সাধ করে কেউ মরতে চায় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.