কংগ্রেস বা তৃণমূলে যা সচরাচর দেখা যায়, তাই এখন ঘটছে বামফ্রন্টের শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লকে! গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ধাক্কা খাচ্ছে দলের সম্মেলন প্রক্রিয়া। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে আপাতত বন্ধ করে দিতে হল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্মেলন প্রক্রিয়া! বামপন্থী দলে যে ধরনের ঘটনা বিরল!
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ফ ব-য় অন্তর্দ্বন্দ্ব সুবিহিত। লোকাল কমিটি স্তরে সম্মেলন-পর্ব শুরু হতেই তা আরও প্রকট চেহারা নিয়েছে। বারাসত থেকে মধ্যমগ্রাম এলাকায় জেলা সম্পাদক হরিপদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে দলের ক্ষমতাসীন অংশ সম্মেলনের নির্ঘণ্ট ঠিক করতেই জেলা সভাপতি সরল দেবের অনুগামী বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন করে ফেলছে! একই জায়গায় ফ ব-র দুই গোষ্ঠীর সম্মেলন-পাল্টা সম্মেলনের পোস্টার পড়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে! ওই জেলায় সদস্যপদ নবীকরণ নিয়ে বিতর্কের জেরে সম্প্রতি ৪১ জন সদস্য জেলা কমিটি থেকে ইস্তফাও দিয়েছিলেন। তার জের সামলে ওঠার আগেই সম্মেলন নিয়ে এমন কাজিয়ায় উদ্বিগ্ন ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্ব। সেই জন্যই বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে: আজ, শুক্রবার থেকে ওই জেলার নির্ধারিত সব সম্মেলন স্থগিত থাকবে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সাংগঠনিক কাজকর্ম নিয়ে এর ফলে বিড়ম্বনা বাড়ল ফ ব-র।
সম্মেলনের সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ২০-২১ নভেম্বর ফ ব-র রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “রাজ্য কমিটিতে গোটা রাজ্যের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ওই জেলার সম্মেলন শেষ করার ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। তার সময়সীমা এখনও ঠিক হয়নি।” ফ ব সূত্রের ইঙ্গিত, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় কাজিয়া মিটিয়ে সম্মেলন সম্পন্ন করার ব্যাপারে কোনও সূত্র না পাওয়া গেলে জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাড হক কমিটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথাও ভেবে দেখা হতে পারে।
এরই পাশাপাশি, গোবিন্দ রায়ের আর্জি মেনে নিয়ে তাঁকে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সমবায় ব্যাঙ্কের ঋণদান ও তহবিল তছরুপের অভিযোগের নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন গোবিন্দবাবু। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তাঁর আবেদন মেনে সারদাপ্রসাদ দাসকে আপাতত জেলা সম্পাদকের কাজ চালানোর ভার দিয়েছে। একই সঙ্গে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ফ ব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির সদস্য অলোক রায়কে। তিনিই গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন।
জলপাইগুড়ির কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের রাজ্য মনোনীত প্রতিনিধি সৌরভ চক্রবর্তী এ দিন জানিয়েছেন, পরিচালকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করে গোবিন্দবাবুকে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছে। পরিচালকমণ্ডলীর ১১ জন সদস্যের মধ্যে ৫ জন সই করেছেন, বাম সদস্যেরা অবশ্য আসেননি। সৌরভবাবুর দাবি, গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে শস্যবিমার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও আছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্তের রিপোর্টও আসন্ন। সামগ্রিক ভাবে তাঁরা ওই সমবায় ব্যাঙ্ককে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান বলেই সৌরভবাবুর বক্তব্য। |