রাজ্য সম্মেলনের সম্পাদকীয়তে স্বীকার
আইটি-তে ইউনিয়নের ব্যর্থতা মেনে নিল সিটু
বাম জমানায় ঘটা করে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ক্ষেত্রে প্রভাব বাড়াতে গিয়েছিল সিটু। সরাসরি ইউনিয়ন করার অসুবিধা থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির কর্মীদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন (ইটসা)। তাদের ওই চেষ্টা যে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী মহলে দাগ কাটতে পারেনি, অবশেষে সেই ব্যর্থতা কবুল করে নিল সিটু।
সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনে আলাদা আলাদা কিছু শিল্প বা ক্ষেত্র ধরে পৃথক টিম গড়ে কাজ করার রেওয়াজ আছে। তথ্যপ্রযুক্তির জন্য গঠিত টিম যে ওই ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারেনি, তাই স্বীকার করা হয়েছে সিটুর এ বারের রাজ্য সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘আমরা আইটি সেক্টরে সংগঠন প্রসারিত করার জন্য একটি টিম গঠন করলেও বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি অংশের কর্মীদের মধ্যে কোনও প্রভাব গড়ে তুলতে পারেনি’। অ্যাসোসিয়েশন গড়ার সময় সিটু নেতৃত্ব বলেছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও কর্মীদের শোষণ করা ঘটে। চাকরির নিরাপত্তা সকলের জন্য সুরক্ষিত নয়। কিন্তু সে সব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তির কর্মীরা যে সিটুর দ্বারস্থ হননি, সম্মেলনের প্রতিবেদনেই তা স্পষ্ট। এই ঘটনা থেকে সিটু নেতৃত্ব শিক্ষা নেবেন কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রতিবেদনে একই সঙ্গে মেনে নেওয়া হয়েছে: ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদিকা শক্তির গুণগত বিকাশ ঘটে, এটা অনিবার্য। সমাজ বিকাশের প্রতিটি স্তরেই নতুন প্রযুক্তির প্রভাব পড়ছে’। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির মতো আধুনিক ক্ষেত্রে সিটু সংগঠন গড়তে যাওয়ায় তারা প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তির পথেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, এমন সংশয় তৈরি হয়। নিজেদের কাজ থেকে এমন ভুল বার্তা আখেরে শ্রমিক সংগঠনেরই ক্ষতি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির কর্মীদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে না-পারলেও বাম জমানায় সিপিএমের ডাকা বন্ধে সেক্টর ফাইভে ঝান্ডা নিয়ে পথ এবং যানবাহন আটকাতে দেখা গিয়েছে সিটুকে। ওইধরনের নেতিবাচক কর্মসূচির ভুলও শেষ পর্যন্ত সিটু নেতৃত্ব স্বীকার করবেন কি না, প্রশ্ন রয়েছে শিল্প মহলে।
বস্তুত, ‘আমাদের দুর্বলতাগুলি’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আরও কিছু ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছে সিটুর প্রতিবেদন। পরিবহণ শিল্পে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধে ইদানীং সরব প্রধান বিরোধী দল সিপিএম এবং তাদের শ্রমিক সংগঠন। কিন্তু পরিবহণ শিল্পেও যে সিটুকে এখন ধাক্কা খেতে হচ্ছে, তার উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে: ‘রাজনৈতিক পথ পরিবর্তনের সঙ্গে এক দিকে যেমন সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে এই ইউনিয়নগুলি (বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি এবং আংশিক ভাবে অটো) দখল করার চেষ্টা হয়, আবার এটাও সত্য যে, কর্মচারীদের একাংশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সিটুর ইউনিয়ন ছেড়ে দিতে উদ্যোগী হয়’। উদাহরণ হিসাবে সিএসটিসি-র কর্মচারী ইউনিয়নে সিটুর শক্তিশালী সংগঠনে ভাঙনের কথা বলা হয়েছে।
সংগঠন পরিচালনায় সর্বত্র গণতন্ত্র নেই, স্বৈরতন্ত্র বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিচালনায় দুর্নীতি, অনৈতিকতা ও ক্ষমতার দম্ভ জন্ম নিয়েছে, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে এই সব গুরুতর ত্রুটিও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে সম্মেলনের প্রতিবেদনে। সিপিএম সূত্রের খবর, এ বারের সম্মেলন থেকে কালী ঘোষের জায়গায় সিটুর নতুন রাজ্য সম্পাদক হতে পারেন দীপক দাশগুপ্ত। কোষাধ্যক্ষ পদে দেখা যেতে পারে প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহুকে। হাওড়ার শরৎ সদনে বৃহস্পতিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সিটুর সর্বভারতীয় সভাপতি এ কে পদ্মনাভন অবশ্য ২০-২১ ফেব্রুয়ারির আসন্ন সাধারণ ধর্মঘটের পক্ষে জোর সওয়াল করেছেন। যাতে ইঙ্গিত ব্যর্থতা স্বীকার, নেতৃত্বে সামান্য রদবদল সত্ত্বেও সিটুর ভাবনাচিন্তায় বিশেষ পরিবর্তন নেই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.