নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ডিপো থেকে পেট্রোল পাম্পে যাওয়ার পথে ট্যাঙ্কার থেকে তেল চুরি বন্ধে নতুন প্রযুক্তি এনেছিলেন ইন্ডিয়ান অয়েল-কর্তৃপক্ষ। মৌড়িগ্রাম ডিপোতে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল সম্প্রতি।
তার বিরুদ্ধে আচমকা জঙ্গি আন্দোলনে নামল তৃণমূল আইএনটিইউসি প্রভাবিত চালক, খালাসিদের সংগঠন। আন্দোলনের জেরে বৃহস্পতিবার মৌড়িগ্রাম ডিপো থেকে কোনও ট্যাঙ্কারই বেরোতে পারেনি। ফলে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার পেট্রোল পাম্পগুলিতে এ দিন পেট্রোল, ডিজেল এবং কেরোসিন সরবরাহে টান পড়েছে বলে জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কেন এই আন্দোলন?
নিজেকে মৌড়িগ্রাম টার্মিনালে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দাবি করে মানস ঘোষ বলেন, “ট্যাঙ্কারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নামে ড্রাইভার ও খালাসিদের উপরে জুলুম চালাচ্ছেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ। তবে আমাদের মূল দাবি, ড্রাইভার এবং খালাসিদের বেতন বাড়ানো।”
তবে ডিপো থেকে পেট্রোল পাম্প যাওয়ার পথে এক শ্রেণির ড্রাইভার এবং খালাসি যে তেল চুরি করে, তা অবশ্য কবুল করেছেন মানসবাবু। যদিও তাঁর যুক্তি, “বেতন অত্যন্ত কম হওয়ার জন্যই তারা এ ভাবে তেল চুরি করতে বাধ্য হচ্ছে।”
এই নিয়ে তেল সংস্থা, পাম্প মালিক এবং ট্যাঙ্কার মালিকদের মধ্যে বিরোধ লেগেই আছে বলে মন্তব্য করে মানসবাবু বলেন, “আমি চাই তেল চুরি বন্ধ হোক। এবং একটা ভদ্রস্থ বেতন কাঠামো চালু হোক ড্রাইভার-খালাসিদের জন্য।”
আন্দোলনকারী এক চালক বললেন, “ইন্ডিয়ান অয়েল খুব কম টাকা দেয়। তাই চালক, খালাসিদের বেতন বাড়াতে পারছেন না ট্যাঙ্কার মালিকেরা।”
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা ট্যাঙ্কার মালিকদের ডেকেছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
আলোচনার পরিস্থিতি যখন রয়েছে তখন আন্দোলন করে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বহু বার প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি এই ধরনের আন্দোলনের বিরোধী। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ যে দলের নীচুতলার কর্মীরা সব সময় মানেন না, সেই অভিজ্ঞতাও রাজ্যবাসীর রয়েছে।
যদিও মৌড়িগ্রামের এই আন্দোলনে তাঁদের সমর্থন নেই বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল আইএনটিইউসি-র হাওড়া জেলা সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য। জেলা সভাপতি বলেছেন, “আমাদের দল অবরোধ, ধর্মঘটে বিশ্বাস করে না। কিছু অসাধু ট্রাক মালিক, ট্রাক চালক এবং খালাসি মিলে ওখানে গোলমাল করছে। সিপিএম পিছন থেকে তাদের মদত দিয়েছে।”
কিন্তু ওখানে তো তৃণমূল আইএনটিটিইউসি-র পতাকা নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের নেতা মানসবাবুও নিজেকে ইন্ডিয়ান অয়েলের ডিপো শাখার সভাপতি বলে দাবি করেছেন। অরূপেশবাবু অবশ্য বলেছেন, “ওখানে আমাদের দলের কোনও সংগঠনই নেই। আমাদের পতাকা নিয়ে কেউ যদি ওখানে আন্দোলন করে, তা হলে তারা ঠিক কাজ করছে না। পুলিশকে বলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।”
পুলিশ অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে যে তেলের সঙ্কট দেখা দেবে তা স্পষ্টই জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেন এবং সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ কোলে বলেন, “এই হঠাৎ আন্দোলনের জেরে কলকাতা ও সংলগ্ন পাঁচ জেলার হাজারখানেক পেট্রোল পাম্প সমস্যায় পড়েছে। বেশির ভাগ পাম্পেই মাত্র দিন দুয়েকের স্টক আছে। আন্দোলন প্রত্যাহার করা না হলে ওই সব পাম্পে আর তেল থাকবে না।” |