কেউ তুবড়ির খোলে কাঠের গুঁড়ো ভরছেন। কেউ কাঠের ফ্রেম থেকে সদ্য তৈরি ফুলঝুরি বের করছেন। কেউ আবার রংমশালে লাগাচ্ছেন রঙিন কাগজ।
কালীপুজোর আতসবাজি তৈরির ব্যস্ততা এখন বাগনানের ভুঞেড়া গ্রামের ঘরে ঘরে। বাজির মরসুম এলে গরিবগুর্বো পরিবারগুলির মুখে হাসি ফোটে। দিনমজুরি করে অন্য সময়ে সংসার চালানো মানুষজন বাজির মরসুমে বাড়তি উপার্জন করতে পারেন। তবু, আনন্দের মধ্যেও থেকে যায় চাপা আশঙ্কা। কারখানা টিকে থাকবে তো! কেননা, ব্যবসায়ীদের যে পুঁজি নেই। বাজারে চলে আসে শিবকাশীর আতসবাজি। রয়েছে অবৈধ শব্দবাজির দাপট। তার উপরে এ বার আবার চিনা বাজিতে ছেয়েছে বাজার।
১৯৭৮ সালে ওই গ্রামে প্রথম বাজি কারখানা গড়ে ওঠে। কয়েক বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ন’য়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই সংখ্যা কমতে কমতে তিনে এসে ঠেকেছে। প্রতিটিরই সরকারি অনুমোদন থাকলেও বাজারে টিকে থাকতে না পারা এবং ব্যাঙ্কঋণ না মেলাকেই এ জন্য দায়ী করছেন গ্রামবাসীরা।
|
বাজি তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারা। ছবি: সুব্রত জানা। |
তিনটি কারখানার উপরে শতাধিক পরিবার নির্ভরশীল। বাজি তৈরির মরসুম শুরু হয় জুলাই-অগস্টে। ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। কারখানায় হয় বাজি তৈরি। সেগুলি প্যাকেটবন্দি করা, রঙিন কাগজ মারা এ সবই করা হয় গ্রামবাসীদের ঘরে। কারিগরেরা কাজ পান চুক্তির ভিত্তিতে। দিনপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা রোজগার করেন এক-এক জন। অবশ্য অনেকে কারখানাতেও বছরভর কাজ করেন। মাসে হাজার দুয়েক টাকা বেতন পান তাঁরা।
ফিরোজা বেগম নামে গ্রামের এক মহিলা বলেন, “বছরভর জরির কাজ করলেও দু’মাস বাজি তৈরি করি। বেশি রোজগার হয় এই কাজে। সংসারের অনেক প্রয়োজন মেটে।” ধার করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন আরতি মান্না। তাঁর কথায়, “দু’মাস ধরে বাজির কারখানায় কাজ করছি। বাড়তি টাকা পেলে মেয়ের বিয়ের ধার শোধ করব।”
একটি কারখানার অন্যতম কর্ণধার সলিল সাউ ব্যস্ততার মধ্যেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাঁর কথায়, “এই ব্যবসায় ব্যাঙ্কঋণ মেলে না। তা পেলে বাজারে টিকে থাকা সহজ হত। অনেক বেশি পরিমাণে বাজি তৈরি করা যেত। উলুবেড়িয়ায় তৈরি অবৈধ শব্দবাজিও আমাদের সমস্যার অন্যতম কারণ।”
হাওড়া জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অশোক সিংহরায় বলেন, “বাগনানে এই শিল্পের সমস্যার কথা আমাকে কেউ জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। বাজি কারখানাগুলি নিয়ে একটি ক্লাস্টার করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।” |