মোটরবাইকে ছিনতাই, গুলি শহরতলিতেও
|
তাদের দমানো তো দূরে থাক, এখন আরও বেপরোয়া মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইবাজেরা। বৃহস্পতিবার সোনারপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ দিনের ঘটনায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে এ বার গুরুতর জখম হলেন এক মহিলা।
কলকাতা পুলিশের এলাকায় গত দেড় মাস ধরে মোটরবাইকে চেপে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কখনও গুলি ছুড়ে ভয় দেখিয়ে, কখনও গুলি চালিয়ে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো মহিলাদের সোনার হার, কানের দুল কাড়ছে ওই দুষ্কৃতীরা। এমনকী, হেঁটে আসা ছিনতাইকারীরাও সোনার গয়না ছিনিয়ে ফের হেঁটেই এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে। এত দিন পুলিশ মোটরবাইক-আরোহী ওই ছিনতাইবাজদের টিকিও ছুঁতে পারেনি। শহরে এমন বেশ কয়েকটি দুষ্কর্মের পরে কলকাতার পুলিশকর্তারা যখন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন, পুলিশি টহল সামান্য হলেও বেড়েছে, সেই সময়েই সুযোগ বুঝে শহরতলির মহিলাদের দিকে নজর পড়ল ছিনতাইবাজদের।
পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ সোনারপুর থানার প্রতাপনগর-কুস্তিয়া রোডে দুই মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারী রমা সর্দার নামে এক মহিলার উপরে হামলা চালায়। রমার সঙ্গে তখন ছিলেন তাঁর স্বামী শিবশঙ্কর সর্দার, দিদি ঝর্না নস্কর ও আরও কয়েক জন। ছিনতাইকারীকে ধরতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ঝর্নাদেবী। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ঘণ্টা দেড়েক পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিল কুমার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি ও জেলা পুলিশের কর্তারা। সাধারণত ওই সময়ে এলাকাটি সুনসান থাকে। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই মহিলার হারের উপরে নজর পড়তেই হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। ঝর্নাদেবীকে গুলি চালানোর পর আশপাশের লোকেরা ছুটে আসেন। কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, কলকাতা পুলিশ ও বর্ধিত কলকাতা পুলিশ এলাকায় সম্প্রতি নজরদারি শুরু হয়েছে। তাই শহরতলিতে ছিনতাই শুরু করেছে দুষ্কৃতীরা। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ শহরতলির রাজ্য পুলিশের থানাগুলির কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিল। তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি, এ দিনের ঘটনায় তা স্পষ্ট। পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতা লাগোয়া রাজ্য পুলিশের থানার পরিকাঠামো খুবই ঢিলেঢালা। নজরদারি চালানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবলও নেই। পুলিশকর্তারাও তাই মনে করছেন, সাধারণ মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। এ দিন ঘটনাস্থলে এসে ডিআইজি অনিল কুমারও বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। থানা এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে দিনের বেলা নজরদারিরও ব্যবস্থা হচ্ছে। রাতে স্থানীয়দের নিয়ে আরজি পার্টি করা হবে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, জখম মহিলার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা গিয়েছে।
|
অপরাধের চেনা ছক |
২৪ জানুয়ারি |
কসবায় হার ছিনতাই। গুলিবিদ্ধ মহিলা। |
১৯ ফেব্রুয়ারি |
মহিলার হার ছিনতাই চেতলায়। |
১৮ জানুয়ারি |
কসবায় হার ছিনতাই। |
২১ সেপ্টেম্বর |
যাদবপুরে হার ছিনতাই, গুলি। |
২২ সেপ্টেম্বর |
ঢাকুরিয়ায় হার ছিনতাই, গুলি। |
২৩ সেপ্টেম্বর |
সল্টলেকে হার ছিনতাই। |
২৯ অক্টোবর |
হার ছিনতাই এলগিন রোডে। |
২ নভেম্বর |
কসবায় এক মহিলার হার ছিনতাই। |
২ নভেম্বর |
গড়িয়াহাটে হার ছিনতাই। |
৫ নভেম্বর |
হার ছিনতাই ভবানীপুরে। |
ছিনিয়ে নেওয়ার কায়দা |
|
• মুখ ঢাকা হেলমেটে
• মহিলারাই ‘শিকার’
• বাধা পেলে গুলি
• সাতসকালে হানা
• বাহন মোটরবাইক
• একাধিক দুষ্কৃতী |
|