|
|
|
|
লোবা-কাণ্ড |
পড়শি গ্রামের সমর্থন পাচ্ছে লোবা |
দয়াল সেনগুপ্ত • দুবরাজপুর |
কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্য সংখ্যা খুব বেশি হলে শ’চারেক। মঙ্গলবার পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধে হয়তো তাঁদের সকলে যোগও দেননি। কিন্তু, আশপাশের গ্রামের মানুষের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে কমিটির সঙ্গে। যাঁরা কখনও ধর্নামঞ্চের কাছেও যাননি, তাঁরাও দলমত নির্বিশেষে বৃহস্পতিবার এই আন্দোলনকে সমর্থনের কথা খোলাখুলি জানিয়েছেন।
লোবা-সহ যে ১০টি মৌজায় ডিভিসি-এমটার খোলামুখ খনি প্রকল্পের জন্য জমি কেনা শুরু হয়েছিল, সেখানকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই তৃণমূলের সমর্থক। তৃণমূল সমর্থক, আমুড়ি গ্রামের কৃষিজীবী আবু তাহের বলেন, “কৃষি বা অন্য পেশার উপরে নির্ভরশীল এই অঞ্চলের সবার স্বার্থেই আন্দোলন হচ্ছে। তাই কমিটিকে সমর্থন করছি।”
প্রতিরোধে না থাকলেও পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দাও করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। পলাশডাঙার দিনমজুর অজিত আকুড়ে, বাবুপুর গ্রামের আদিবাসী মহিলা মঙ্গলি মুর্মু, ভাসানি হেমব্রমরা বলছেন, “এখানে কয়লাখনি হলে আমরা কী খাব, কোথায় যাব, আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, জানি না। কৃষিজমি রক্ষা কমিটি তো আমাদের হয়েই লড়ছে! ফলে ওদের আন্দোলনকে সমর্থন করব না কেন?” একই ভাবে লোবা আদিবাসীপাড়ার সক্রিয় তৃণমূল সমর্থক বাবু মাড্ডির মন্তব্য, “আমার পাঁচ বিঘে জমি আছে। পড়শিরাও কেউ খেতমজুর, কেউ বর্গাদার, কেউ সামান্য জমি পাট্টা পেয়েছেন। তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কৃষিজমি রক্ষা কমিটিকে সমর্থন করতেই হবে।”
একই সুরে জোপলাই গ্রামের খেতমজুর মঙ্গল আকুড়ের মন্তব্য, “যে কোম্পানি কয়লা খনি করবে, তাদের কোনও প্রতিনিধি একবারের জন্যও এলাকায় এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। আমাদের কী চাই, কোথায় গিয়ে থাকব, ছেলেমেয়েকে কী খাওয়াব, কিছুই জানি না। কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাও আমাদের কাছে এসে জানতে চাননি। এক মাত্র কৃষিজমি রক্ষা কমিটি আমাদের হয়ে কথা বলছে। প্রতিরোধে না গেলেও ওদের পাশে আমরা আছি।”
এই পাশে পাওয়ার জোরেই ডিভিসি-এমটার মাটি কাটার যন্ত্র ছাড়তে নারাজ কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, জমির ন্যায্য দাম নির্ধারণ বা গ্রামবাসীদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যন্ত্র ছাড়ার প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছে কমিটি।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীর একাংশের আচরণ ও ভূমিকাও অনেককে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলেছে। বাবু মাড্ডি, আবু তাহেররা বলেন, “আমরা তৃণমূলের সমর্থক। ওদের ভোট দিয়ে আমরাই ক্ষমতায় এনেছি। অথচ জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু নেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁরা ওই শিল্প সংস্থার ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে জমি বিক্রি করার জন্য। যা এখানকার লোকেরা মেনে নেননি।”
তৃণমূলের পাশাপাশি গ্রামবাসীর ক্ষোভ রয়েছে বামেদের প্রতিও। যার কিছুটা আঁচ এ দিন লোবায় গিয়ে পেলেন সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান। তাঁকে ঘিরে এলাকাবাসী ও কৃষিজমি রক্ষা কমিটির লোকজন বলেন, “জনপ্রতিনিধি হয়েও ফব বিধায়ক বিজয় বাগদি বা সিপিএমের অন্য নেতা সে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়াননি। দেখছি, দেখব বলে পাশ কাটিয়েছেন।” অস্বস্তিতে পড়ে তখন আনিসুর গ্রামবাসীদের আন্দোলনের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
|
মেডিক্যাল বোর্ড গঠন
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
লোবার ঘটনায় আহতদের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন হল সিউড়ি সদর হাসপাতালে। হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষকে চেয়ারম্যান করে গঠিত সাত সদস্যের মেডিক্যাল টিম আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি দেখবে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান। সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “আহতদের চিকিৎসা চলছে। এখনও কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। তার আগে কিসের ক্ষত তা পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। |
|
সিউড়িতে সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
আমরা নিশ্চিত হয়েই জেলা পুলিশকে রিপোর্ট পাঠাব।” তিনি আরও বলেন, “এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছি।” সিএমওএইচ অরুণলাল মণ্ডল বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগেই এই বোর্ড তৈরি করেছেন।” মঙ্গলবার লোবায় পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষ হয়। বৃহস্পতিবার লোবায় গিয়ে কৃষি জমিরক্ষা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুর রহমান। |
|
|
|
|
|