চাপের মুখে পার্থর অতি-বাম তত্ত্ব
মন্ত্রীর নির্দেশেই যায় পুলিশ, ইঙ্গিত তদন্তে
দুবরাজপুরের ঘটনায় চাপে পড়ে গিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
লোবাগ্রাম থেকে ডাম্পার সরানোর নির্দেশ শিল্পমন্ত্রীর দফতর থেকেই দেওয়া হয়েছিল বলে একাধিক মহল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে। বৃহস্পতিবার এ কথা ছড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর দাবি, “আমি কোনও নির্দেশ দিইনি, আমার দফতর দেয়নি। সরকারের কোনও দফতর থেকেই নির্দেশ যায়নি।”
বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, লোবাগ্রামে ডাম্পার উদ্ধার অভিযানের কথা মহাকরণের জানা ছিল না। কিন্তু পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্ত সে কথা বলছে না। প্রশাসন সূত্রের খবর, পুজোর আগে থেকেই লোবাগ্রাম থেকে কয়লা তোলার যন্ত্রটি সরিয়ে আনার জন্য সক্রিয় হয়েছিল পার্থবাবুর দফতর। প্রয়োজনে পুলিশি অভিযানের পক্ষেও মত দেওয়া হয়েছিল।
অভিযান চালানোর ব্যাপারে ‘চাপ’ ছিল বলে স্বীকার করেছেন বীরভূমের অপসারিত এসপি-ও।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে বুধবারই পার্থবাবুকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পার্থবাবু শেষ পর্যন্ত লোবাগ্রামে যাননি। বুধবার সিউড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি ঘটনার দায় সিপিএম-কংগ্রেসের উপরে চাপিয়েছিলেন। এ দিন কলকাতায় তিনি তার সঙ্গে একটি অতি-বাম তত্ত্বও জুড়ে দেন। পার্থবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, “ওই ঘটনায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের একটি অংশের সঙ্গে অতি-বামপন্থীরাও যুক্ত। না হলে অত সকালে তির-ধনুক এল কোথা থেকে?” অতি-বাম মানে কি মাওবাদী? শিল্পমন্ত্রীর জবাব, “মাওবাদী বলব না। আমি বলছি অতি-বামপন্থী (লেফ্ট এক্সট্রিমিস্ট)। আর আছে সিপিএম এবং কংগ্রেসের একটি অংশ।” তার পিছনে যুক্তিও দিয়েছেন পার্থবাবু। “যখন হলদিয়া মেটার পথে, তখন বীরভূম নিয়ে আসা হল। এখন শিল্প নিয়ে এত বৈঠক হচ্ছে। তা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতেই এই সব।”

এই সেই আর্থ-মুভার।
শিল্পমন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন, বুধবার লোবাগ্রামে না গিয়ে এমনিতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন তিনি। বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে কলকাতার তৃণমূল ভবন এবং মহাকরণেও। তারই মধ্যে শিল্পমন্ত্রীর দফতরের দিকে অভিযোগের আঙুল। সব মিলিয়ে চাপের মুখেই তিনি অতি-বাম তত্ত্ব আউড়েছেন বলে একাংশের মত। অন্য দিকে এই দু ’রকম বয়ান নতুন বিতর্কও উস্কে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, লোবাগ্রামের তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পার্থবাবুর মতো হেভিওয়েট মন্ত্রী কেন এমন বিভ্রান্তিকর বয়ান দেবেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
প্রশাসনের একটি অংশের মতে, তাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠায় নজর ঘোরাতেই অতি-বামেদের কথা বলেছেন শিল্পমন্ত্রী। শিল্প দফতরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে এ দিন তিনি বলেন, “আমি কি নির্দেশ দেওয়ার লোক? আমি কোনও নির্দেশ দিইনি, আমার দফতর দেয়নি। এটা সম্পূর্ণ ভুল।” কেন তাঁর অতি বামেদের কথা মনে হচ্ছে, তারও একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শিল্পমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য আগে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছিল। বিধানসভায় সমীর পুততুন্ড ওঁদের সঙ্গে ছিলেন। গ্রামবাসীরা মণীশ গুপ্তের সঙ্গেও কথা বলে যান। ওঁরা বলেছিলেন, মেশিন সরাতে সাহায্য করবেন। পার্থর প্রশ্ন, “কিন্তু হঠাৎ কী হল? অত সকালে তির-ধনুক কোথা থেকে এল?”
পুলিশ কি গুলি চালিয়েছে? পার্থবাবুর জবাব, “আমি আগের কথায় বহাল থাকছি। গুলি চলেনি। তবে তদন্ত হোক।” এসপি-কে কেন ছুটিতে যেতে বলা হল? শিল্পমন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে এসপি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

ঘটনার দিন কেটে দেওয়া লোবা-র রাস্তা।

পরে গ্রামবাসীরাই সেটি মেরামত করে দেন।
পার্থবাবুর দাবি, লোবার ঘটনা জমিরক্ষার আন্দোলন নয়, জমির দর-বৃদ্ধির আন্দোলন। অথচ গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে সেখানকার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি অভিযোগ করেছিল, লোবাগ্রামে জমি অধিগ্রহণ শেষ না করেই খনন কাজ শুরু হয়েছে। জমির পুনর্বাসন নিয়ে প্যাকেজে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আজ, শুক্রবার পার্থবাবু আলোচনার জন্য কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছেন কৃষিজমি রক্ষা কমিটিকে। তাদের ১১ জন সদস্য কলকাতায় যাবেন বলে ঠিক হয়েছে।
ওই প্রতিনিধিদলে থাকার কথা জয়দীপ মজুমদার, ফেলারাম মণ্ডল এবং আশিস মিশ্রেরও। মঙ্গলবারের ঘটনায় পুলিশ ওই তিন জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান, মারধর প্রভৃতি জামিনঅযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ওই তিন জন এই অবস্থায় কী ভাবে বৈঠকে যোগ দেবেন, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ মহল। অন্য দিকে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি আশা করেছিল, বুধবার শিল্পমন্ত্রী লোবাগ্রামে আসবেন। সেটা না হওয়ায় তারা হতাশ। গ্রামের তৃণমূল নেতৃত্বও বেজায় ক্ষুব্ধ। পার্থবাবুর লালবাতি লাগানো গাড়ি যাতে গ্রামে ঢুকতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য রাস্তা মেরামত করেছিলেন গ্রামের মানুষ। শিল্পমন্ত্রী ৬ কিলোমিটার দূর থেকে কলকাতার রাস্তা ধরায় তাঁদের ক্ষোভ চাপা থাকেনি। হতাশ হয়েছিলেন কমিটি নেতা ফেলারাম-আশিসরাও। এখন ওঁরা বৈঠকের দিকে তাকিয়ে। ফেলারাম বলেন, “শিল্পমন্ত্রী পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আশা করি, বৈঠকে সমাধানসূত্র বেরোবে।”
এ দিন লোবায় গিয়েছিলেন সিপিএম নেতারা। প্রতিনিধিদলের নেতা আনিসুর রহমান পরে বলেন, “ঘটনার সঙ্গে সিপিএম কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। চক্রান্ত যদি কেউ করে থাকেন, তা হলে পার্থবাবুই করেছেন।”

অভিযান কী ভাবে
• মাসখানেক আগে পার্থর দফতর থেকে বীরভূমের এসপি-কে ফোন
• ডিভিসি-এমটার আর্থ-মুভারটি তুলে আনতে বলা হয়
• কিছু দিন আগে ফের ফোন। প্রশ্ন, যন্ত্রটি আনা হয়নি কেন
• এসপি জানান, যন্ত্র সরাতে গেলেই সমস্যা। অনুমতি পেলে শক্তি প্রয়োগ
• পুজো মিটলে অভিযান হতে পারে, জানান এসপি
• পুজোর পর শিল্প দফতর থেকে ফের তাগাদা
• ঠিক হয়, ৬ নভেম্বর অভিযান চালাবে পুলিশ
• জেলার মন্ত্রীকে না পেয়ে আপ্তসহায়ককে জানান এসপি
• ফোন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রতকেও। তিনি জানান, থাকছেন না
• অভিযানে যাতে সমস্যা না হয় দেখা হবে, আশ্বাস স্থানীয় নেতৃত্বের

ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.