মেঘলা আকাশ। সকাল সাতটাতেই ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। সেই সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে। গত দু’দিনে আমেরিকার পূর্ব উপকূলের এটাই চিত্র। এখনও স্যান্ডির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি অধিকাংশ বাসিন্দা। আমেরিকার পূর্ব উপকূলের বেশির ভাগ এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন। এ দিকে সেই পূর্ব উপকূলেই ফের ঘনাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। নাম ‘অ্যাথেনা’।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। সঙ্গে বৃষ্টি ও প্রবল তুষারপাত হওয়ারও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফে। আর তাতেই ফের আতঙ্কে কাঁপছেন আমেরিকাবাসী। নিউ ইয়র্ক, ব্রুকলিন, কানেকটিকাট আর নিউ জার্সির বিভিন্ন এলাকায় এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি আর তুষারপাত। সেখানকার বাড়ি, গাড়ি, রাস্তা ঢেকে গিয়েছে ৬-৮ ইঞ্চি পুরু বরফের চাদরের তলায়। কানেকটিকাটের ফায়ারফিল্ডে এর মধ্যেই ১৩.৫ ইঞ্চি বরফের স্তর তৈরি হয়েছে। জন এফ কেনেডি-সহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে দু’দিনে বাতিল হয়ে গিয়েছে ১৭০০-র বেশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উড়ান। |
বরফে ঢাকা পড়েছে রেললাইন। চলছে পরিষ্কারের কাজ। নিউ ইয়র্কে। ছবি: রয়টার্স |
প্রবল ঠান্ডায় কাঁপছেন পূর্ব উপকূলের মানুষরা। বিদ্যুৎ নেই। স্কুল, কলেজ অফিস-কাছারিতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি সাধারণ মানুষকে অ্যাথেনার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। সব থেকে দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শিশু আর বৃদ্ধেরা। নিউ জার্সির পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় না বেরোতে অনুরোধ করেছেন।
ব্রুকলিনের কলেজ পড়ুয়া নিকোল ডিগর্টার জানান, স্যান্ডিতে তাঁর বাড়ির ভিতরে আট ফুট জল জমে যায়। কোনও রকমে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করার শুরু করতেই ফের অ্যাথেনার সতর্কবার্তায় দিশেহারা নিকোলের পরিবারের সদস্যেরা।
অন্য দিকে নিউ ইয়র্কের অবস্থা সব থেকে খারাপ। শুধু এই শহরেই বিদ্যুৎহীন ৬ লক্ষ ৪০ হাজার। মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ নীচু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তুষারপাত আর বৃষ্টির জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের বাস সার্ভিস। সাময়িক ভাবে বন্ধ হয় নিউ ইয়র্কের পেন স্টেশনও। বরফের তলায় লং আইল্যান্ড রেলরোড। শহরের উপকূলে বন্যার সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে।
স্যান্ডির ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধিরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল আমেরিকা। কিন্তু অ্যাথেনার প্রভাবে শুধু উদ্ধারকাজ ব্যাহত হল তা-ই নয়, এই ধাক্কা কবে কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। |