সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেলে আদালতে যাবেন রাজ্য বীজ নিগমের সরবরাহ করা বীজে আমন ধান চাষ করে সর্বস্বান্ত মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের চাষিরা! দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব প্রকল্পে আমন ধান চাষ করে পথে বসতে হয়েছে সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮২০ জন চাষিকে! নিগমের সরবরাহ করা বীজে ফলন না হওয়ার কারন জানতে সোমবার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে কৃষি বিশেষগ্গদের দেওয়া একটি রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে! ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ফব বিধায়ক তজমূল হোসেনও! নিগমের বীজে চাষ করা আমনের খেত দেখে কী বলছেন চুচূড়া ধান গবেষনা কেন্দ্র থেকে আসা দুই বিশেষগ্গ! ব্লক কৃষি আধিকারিককে লেখা রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, চাষের জন্য যে বীজ দেওয়া হয়েছিল তা একই জাতের বীজ নয়! তাতে নানা প্রজাতির বীজের মিশ্রন ছিল বলেই আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন চাষিরা! বিষয়টি দ্রুত উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানোর কথা বলার পাশাপাশি এও বলা হয়েছে যে, প্রকল্পের বাইরে লাগোয়া জমিতে ফলন বেশ ভালো হয়েছে! এর পরও অবশ্য সরকারি ক্ষতিপূরণ মিলবেই বলে নিশ্চিত নন চাষিরা! তাই ওই চিঠি নিয়েই আশায় বুক বাঁধছেন তারা! অন্তত আদালতে যাওয়ার পথ খোলা থাকছে এই আশায়! কেন না নিগমের বীজে আমন চাষ করেও পথে বসার ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না চাষিরা! হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেনও বলেন, “বিধানসভায় বিস্তারিত জানিয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তুলব! কেননা এক্ষেত্রে চাষিদের গাফিলতি ছিল না! ফলে সরকার তার দায় এড়াতে পারে না!” |
রায়গঞ্জে চাষিদের বিক্ষোভ। ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব প্রকল্পে কৃষি দফতরের পরামর্শে ও নিগমের সরবরাহ করা বীজে ১ হাজার ৮৭৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন ৮২০ জন চাষি! কিন্তু চাষ করা জমিতে ফলনের দেখা মেলেনি! সোমবার এলাকায় যান চুচূড়া ধান গবেষনা কেন্দ্রের কৃষি বিশেষগ্গ তথা গবেষক মাধব ধাড়া ও অপর গবেষক তথা ধান প্রজননবিদ কমল ভদ্র! সঙ্গে ছিলেন চাঁচলের মহকুমা কৃষি আধিকারিক অরূপ চট্টোপাধ্যায় ও ব্লকের এডিও সাগুন মুর্মু! সকাল ১০টা নাগাদ এলাকায় গিয়ে প্রথমে অবশ্য চাষিদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন তারা! এরপর ডহরা এলাকায় একটি ইটভাঁটার অফিসের বারান্দায় তাদের ৪ ঘন্টা ধরে আটকেও রাখা হয়! পরিদর্শক দলের দুই সদস্য মাধব ধাড়া ও কমল ভদ্র একযোগেই জানান, রাজ্য কৃষি দফতরের নির্দেশেই এসেছিলাম! বিস্তারিত রিপোর্ট রাজ্য কৃষি দফতরকে জানাব!
চাষিদের অভিযোগ, হাঁস, মুরগিীবেচে, ধারদেনা করে চাষ করেও ফলন হয়নি! এক চাষি সেতাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাইরে থেকে বীজ কিনে চাষ করলে বিঘা প্রতি গড়ে ৭ কুইন্ট্যাল মতো ধান পাওয়া যায়! আমাদের বলা হয়েছিল এই প্রকল্পে চাষ করলে ১০ কুইন্ট্যালও পাওয়া যাবে! ৩ বিঘা চাষ করে এখন পথে বসতে হয়েছে! এরফান আলির অভিযোগ, কেউ জমি থেকে ধান কাটতে চাইছে না! উল্টে টাকা খরচ করে শ্রমিক দিয়ে খেত পরিস্কার করতে হচ্ছে! উর্মিলা সিংহ নামে এক চাষি বলেন, আমি এক বিঘায় এক কুইন্ট্যাল ৩০ কেজি ধান পেয়েছি! বাকি দুই বিঘার ধান তাই গরুকে কেটে খাইয়ে দিয়েছি!
মালদহের ডেপুটি ডাইরেক্ট অব এগ্রিকালচার সজল ঘোষ বলেছেন, “তদন্ত করে আমি রিপোর্ট পাঠানোর পর রাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন! তারা করকাতা ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দেবেন! তারপর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তো ঠিক করবে সরকার।” |