স্বাস্থ্য পরিষেবার চিত্র খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার জঙ্গলমহলে এলেন কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের প্রতিনিধিরা। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (এনআরএইচএম) প্রকল্পের বরাদ্দ টাকায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ঠিক কী কী কাজ হয়েছে তা খতিয়ে দেখতেই ৫ সদস্যের ওই কেন্দ্রীয় দলটির আসা। রবিবার থেকেই জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার সকালে অধ্যাপক টি বীরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় দলটির পাঁচ সদস্য প্রথমে লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র, ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপনকুমার ব্যাপারি প্রমুখ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটি বিভাগ খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। রোগী, তাঁদের আত্মীয় পরিজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের হাতের নাগালে পেয়ে অভাব অভিযোগ উগরে স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁরা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় নার্স নেই, উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবিলম্বে শিশু, স্ত্রী ও অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেওয়ার দাবিও জানান বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাঙ্গণে বাতিস্তম্ভ থাকলেও রাতে আলো জ্বলে না। সাপে কাটা বা কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক ইনজেকশনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সবসময় মেলে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, ২৪ ঘন্টার জন্য একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করতে হবে। তবে দুপুরে বিনপুরের কাঁকো উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিদর্শন করতে গিয়ে সেখানে মোবাইল মেডিক্যাল ভ্যান দেখে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা সন্তোষপ্রকাশ করেন।
বিকেলে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন ওই কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট ও ডাটা-এন্ট্রি বিভাগের নথিপত্রও খতিয়ে দেখেন তাঁরা। এরপর প্রসূতি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম, ব্লাড ব্যাঙ্ক, আইসিটিসি (ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার) কেন্দ্র ও শিশু বিভাগ পরিদর্শন করেন। হাসপাতালে নির্মীয়মাণ সদ্যোজাত অসুস্থ শিশুদের বিশেষ চিকিৎসা কেন্দ্রটিও (এসএনসিইউ) বাইরে থেকে দেখেন অধ্যাপক বীর ও অন্যান্য সদস্যেরা। চিকিৎসাধীন রোগিদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রসূতি বিভাগে দশজন রোগিকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করেন কেন্দ্রীয় দলটির অন্যতম সদস্য টি বীর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, রোগীর অসম্ভব চাপ থাকায় শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নিতে হয়। তাই এই অবস্থা। তবে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। শীঘ্রই সমস্যা কিছুটা মিটবে বলেই আশা। হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় দলটি। হাসপাতালের আইসিটিসি কেন্দ্রটি পরিদর্শনের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মীরাই কেন্দ্রীয় দলটির কাছে অভিযোগ করেন, যে কেন্দ্রের কম্পিউটারটি মাঝে মধ্যেই খারাপ হয়ে যায়। পরিদর্শন শেষে টি বীর বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনেক টাকা দেওয়া হচ্ছে। সেই টাকা সঠিক ভাবে খরচ হলে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়ন ঘটবে।” তাঁরা সন্তুষ্ট কি-না জানতে চাওয়া হলে বীরের জবাব, “পরিকাঠামো ও পরিষেবার আরও উন্নতি ঘটাতে হবে।” |