সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করার জন্য ‘নন প্র্যাকটিসিং’ ভাতাও নেন। অথচ তা সত্ত্বেও চুটিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতেও যোগ দেননি প্রাইভেট প্র্যাকটিসের চাপেই। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে হাওড়ার উলুবেড়িয়া-১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্গত চণ্ডীপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক ভক্তিভূষণ বেরাকে মহকুমার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ) গত ৩০ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। কেন তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এসিএমওএইচ ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তিন দিনের মধ্যে ওই চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দেওয়া হলেও এখনও উত্তর পাওয়া যায়নি। উত্তর পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই চিকিৎসক ভক্তিভূষণ বেরার বক্তব্য, “সরকারি হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসকই এ সব করেন। তা হলে সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” তাঁর পাল্টা যুক্তি, “রোগীদের প্রয়োজনেই আমি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করি। আসলে আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি অংশ আমাকে সরাতে সক্রিয়। শো-কজের উত্তরে আমি সে সব জানিয়েছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমাতে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে তৈরি করা হচ্ছে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)।
সে জন্য জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওই বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরাই এসএনসিইউ-এর দায়িত্ব সামলাবেন। ভক্তিভূষণবাবুর প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা ছিল গত ১ থেকে ১২ অক্টোবর। কিন্তু তিনি ওই প্রশিক্ষণ নিতে যাননি। ৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে চিঠি দিয়ে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চায়। উত্তরে ভক্তিভূষণবাবু জানান, অসুস্থতার কারণে ১ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন। তাই প্রশিক্ষণ নিতে যেতে পারেননি।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, যেখানে রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে প্রচুর টাকা খরচ করে এসএনসিইউ গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে এক চিকিৎসকের এ হেন আচরণ মানতে চায়নি স্বাস্থ্য দফতর। প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট দিনগুলিতেই শারীরিক অসুস্থতার ঘটনার তদন্তে নামে তারা। তদন্তে জানা যায়, যতদিন ভক্তিভূষণবাবু অসুস্থ ছিলেন বলে জানিয়েছেন, ততদিন তিনি হাসপাতালে তাঁর আবাসনে ও স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেছেন।
তদন্তে নেমে রোগী দেখার প্রমাণ হিসাবে প্রেসক্রিপশনও জোগাড় করেন তদন্তকারীরা। তদন্তে আরও জানা যায়, ওই চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেও ‘নন প্র্যাকটিসিং’ ভাতা নেন নিয়মিত।
তদন্তের রির্পোট পাওয়ার পরেই গত ১ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর ভক্তিভূষণবাবু যে ছুটি নিয়েছিলেন তা বাতিল করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। উলুবেড়িয়া-১ এর বিএমওএইচ সম্রাট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভক্তিভূষণবাবুর বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি গুরুতর। আমি সমস্ত বিষয় জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।” |